সীমান্তে নিহতের ঘটনা ও মাদক চোরাচালান শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ঐকমত্য হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি’র সদর দফতরে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের ৪৮তম সীমান্ত সম্মেলনে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী প্রধান একমত হয়েছেন।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।
অন্যদিকে, বিএসএফ-এর মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্রর নেতৃত্বে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।
বিজিবি সদর দফতরে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড কিছুটা বেশি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, কেন সীমান্ত হত্যাকাণ্ড ঘটছে, তাও খুঁজে বের করতে হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য দু’দেশের সীমান্ত বাহিনীর যৌথ টহলের ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকায় বিজিবি ও বিএসএফ-এর মহাপরিচালক পর্যায়ে ৪৮তম সীমান্ত সম্মেলন ১২ জুন শুরু হয়। আজ যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়েছে।
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, মানুষের জীবন রক্ষা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। সীমান্ত এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড কারও কাম্য নয়। বিএসএফ প্রথমেই আগ্নেয়াস্ত্র যাতে ব্যবহার না করে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে। কিন্তু কখনও কখনও অবস্থা এমন হয়, চোরাকারবারীরা লাঠি, পাথর, ধারালো অস্ত্র নিয়ে সীমান্ত রক্ষাকারীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলা চালায়। তখনও সীমান্ত রক্ষাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না। আমরা সীমান্তে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করি। কিন্তু সীমান্ত রক্ষাকারীদের ওপর হামলা হলে অনাকাঙিক্ষত এই ঘটনা ঘটে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা হয়।
বিএসএফ প্রধান বলেন, গত বছর সীমান্তে মাত্র সাতটি হত্যার ঘটনা ঘটেছিল। এরমধ্যে একটি বাংলাদেশের বাকি ছয়টি ভারতের। তবে এ বছর প্রথম পাঁচ মাসে এর থেকে বেশি ঘটনা ঘটে।
ভারত থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশ করছে। এর উৎস কোথায় জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, ভারতে এর কোন উৎস নেই। বাংলাদেশ ও ভারত কোনও দেশ এর জন্য দায়ী নয়। ইয়াবার জন্য তৃতীয় একটি দেশ দায়ী। ভারতেও এর আসক্তি রয়েছে।
ফেলানী হত্যার জানতে চাইলে বিএসএফ প্রধান বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। আদালতে ট্রায়াল চলছে।
বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, দুই বাহিনীর মধ্যে যাতে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ববোধ থাকে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিএসএফ দিল্লি থেকে একটি মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা শুরু করবে সেটি আমাদের ঢাকায় বিজিবি সদর দফতরে এসে শেষ হবে। বিজিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এটা বিএসএফ করবে বলে জানান তিনি।
বিচ্ছিন্নতাবাদী ও উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম ও আস্তানা বন্ধে বিজিবি ও বিএসএফ একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ার বিষয়টিও সম্মেলনে আলোচনায় হয়েছে বলে জানান তিনি।