“বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ ছিল না”- মন্তব্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইইএম প্রতিবেদন ২০২৪

নজরুল ইসলাম বিপ্লব, সহ-সম্পাদক, জার্মানি

গত শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন এক্সপার্ট মিশন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ নিয়ে ২৩ পৃষ্ঠার একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন একদিকে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার যেমন ছিল না, অন্যদিকে বিরোধীদের আন্দোলন করার অবাধ সুযোগও সীমিত করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ৭ই জানুয়ারির এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক গনতান্ত্রিক নির্বাচনের মানদন্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ কারণ হিসেবে বলা হয়, গণ গ্রেফতারের কারণে বিরোধী দল ব্যস্ত ছিল আদালত পাড়ায়। রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভাগাভাগির চুক্তি এবং আওয়ামীলীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ভোটারদের পছন্দ মত প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ ছিল না।

 

নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে বলা হয়, যথেষ্ট সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ছিল না এবং কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই সহ কয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা ও সহিংসতার বিয়টিও রিপোর্টে উঠে আসে। নির্বাচনের দিন ব্যালট বাক্স ভর্তি ও জালিয়াতির প্রচেষ্টা সহ নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীরা ভোটে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবেলা করা হলেও পঁচিশটি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। তবে অন্যান্য ঘটনার যথাযথ তদন্ত করা হয়নি যা প্রতিবেদনে পরিস্কার করে উঠে এসেছে।

 

বিএনপি ও তার জোট শরিকদের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনের পুরোটা সময় জুড়ে বিরোধীদল গুলোর সমাবেশ, আন্দোলন ও বক্তৃতার অধিকার কঠোর ভাবে সীমিত করা হয়। গ্রেফতার এড়িয়ে যে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষমতা বিএনপিসহ বিরোধী দল গুলোর পক্ষে অসম্ভব ছিল।  প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি ছিল একটি অত্যন্ত মেরুকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে পরিচালিত নির্বাচন। বিএনপি ও তার জোট শরিকেরা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করায় এতে সত্যিকারের প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। গত বছর ২৮ই অক্টোবরের ঘটনায় দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

 

২৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ৭ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের মতামতের পাশাপাশি পরিস্থিতি পরিবর্তনে ২১টি সুপারিশ প্রদান করে। উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে গত বছরের জুলাই মাসে ইইউ প্রাক-নির্বাচনি মিশন টিম বাংলাদেশে এসে দফায় দফায় বৈঠক করলেও নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষণে না পাঠানোর  বিষয়টি জানায়। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ঠিক আগ মূহুর্তে ইইউ ঢাকায় ৪ সদস্যের একটি নির্বাচন এক্সপার্ট মিশন টিম পাঠায়। নির্বাচন আগ থেকে নির্বাচনের পর প্রায় দুই মাস বাংলাদেশে অবস্থান করে উক্ত প্রতিনিধি দলটি গত শুক্রবার তারা তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি ইওডিএস ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.