গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৭ ত্রাণকর্মী নিহত

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) অন্তত সাতজন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, পোল্যান্ড এবং একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক রয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ডব্লিউসিকের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেছে, তাদের দলের সাত সদস্য গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে। নিহত সাতজন ত্রাণকর্মী অস্ট্রেলিয়া, ফিলিস্তিন, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক।

বিবৃতিতে বলা হয়, নিহত ত্রাণ কর্মীরা ডব্লিউসিকে লোগো যুক্ত দুটি সাঁজোয়া গাড়িতে করে দেইর আল-বালাহ সুরক্ষিত অঞ্চলে অবস্থান করছিলেন, যেখানে সামুদ্রিক পথে গাজায় আনা ১০০ টনেরও বেশি খাদ্য সহায়তা মজুত রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ভালভাবেই অবগত ছিল। দেইর আল-বালাহ গুদাম ছেড়ে যাওয়ার সময় তাদের গাড়িতে আঘাত হানে ইসরায়েলি বোমা।

এর আগে সোমবার এক বিবৃতিতে ডব্লিউসিকে জানিয়েছিল, হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছে।

হামাস পরিচালিত গাজা সরকার জানিয়েছে, দেইর আল-বালাহ শহরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে পাঁচজন ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে অন্তত একজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করা এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

অন্যদিকে পাল্টা এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, ইসরায়েলি বাহিনী কখনোই গাজায় ত্রাণ সরবরাহের বিপক্ষে নয়। তবে ডব্লিউসিকে’র ৫ কর্মী নিহতের ঘটনাকে ‘মর্মান্তিক’ ।

বিবৃতিতে আইডিএফ আর বলছে, ‘গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণ নিরাপদ রাখতে আইডিএফ সর্বদা সচেষ্ট এবং সেখানকার লোকজনকে ত্রাণ প্রদানের কাজে ডব্লিউসিকের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে আইডিএফ।,’

মার্কিন শেফ জোসে অ্যান্দ্রেস ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বৈশ্বিক খাদ্য ত্রাণ বিতরণকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন। ওই বছর ভূমিকম্প বিধ্বস্ত হাইতিতে তৈরী খাবার এবং খাদ্যদ্রব্য ত্রাণ হিসেবে পাঠিয়েছিল সংস্থাটি। তার পর থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সংঘাত পরিস্থিতি ও করোনা পরিস্থিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে ডব্লিউসিকে। বর্তমানে ইউক্রেন-গাজায় সংস্থাটির ত্রাণ তৎপরতা রয়েছে।

গাজায় গত ১৭৫ দিন ধরে ৪ কোটি ২০ লাখেরও বেশি তৈরি খাবার ও খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করছে ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন।

সোমবারের হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক বার্তায় জোসে অ্যান্দ্রেস বলেন, ‘ইসরায়েলের সরকারকে অবশ্যই নির্বিচারে হত্যা বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা, বেসমারিক লোকজন ও ত্রাণকর্মীদের হত্যা, খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা— এসবও বন্ধ করতে হবে। আমরা আর কোনো নিরীহ-নিরপরাধ জীবন হারাতে চাই না। আমাদের মানবিক আচরণের মধ্যে দিয়েই শান্তি স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং তা এখন থেকেই শুরু করা উচিত।’

এদিকে লালজাওমি জোমি ফ্রাঙ্ককম নামে ৪৪ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয় নাগরিক ও ত্রাণকর্মীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি একটি মানবিক ট্র্যাজেডি যা কখনই হওয়া উচিত ছিল না, এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য এবং তার সরকার দায়ীদের জবাবদিহি করার দাবিতে ইসরায়েলের সাথে যোগাযোগ করেছে।
সূত্র: আলজাজিরা, রয়টার্স

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.