দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। আগামীকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) ঢাকায় আসার কথা রয়েছে তার। কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে ১১টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে, এর মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি এমওইউ রয়েছে।
আজ রোববার (২১ এপ্রিল) কাতারের আমিরের সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর করবে। প্রধানমন্ত্রী জানুয়ারিতে সরকার গঠনের পর মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ থেকে এটি প্রথম উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় সফর হবে।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের মার্চ ও মে মাসে দুইবার প্রধানমন্ত্রীর কাতার সফরের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় অবস্থানে উপনীত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কাতারের আমির বাংলাদেশে সফর করবেন।’
হাছান মাহমুদ জানান, কাতারের আমিরের সফরে ১১টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এর মধ্যে ছয়টি চুক্তি হবে। চুক্তিগুলো হলো, পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত চুক্তি, আইনগত বিষয়ে সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তি, সাগরপথে পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি, উভয় দেশের পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি, দুই দেশের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর সংক্রান্ত চুক্তি ও যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন সংক্রান্ত চুক্তি সই হবে।
এছাড়া, পাঁচটি এমওইউর মধ্যে রয়েছে, শ্রমশক্তির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক, বন্দর পরিচালনা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, উচ্চ শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক।
কাতারের আমিরের সফর বেশ তাৎপর্য বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ সর্বোচ্চ গড় মাথাপিছু আয়ের দেশ কাতার শক্তিশালী অর্থনীতি, ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও কূটনৈতিক তৎপরতা ও মধ্যস্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে একটি প্রভাবশালী দেশ হিসেবে বিবেচিত। কাতার মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার, যেখানে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশী কর্মরত আছেন। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সার্বভৌম তহবিলের অধিকারী কাতার বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস হিসেবে বিবেচিত। তদুপরি কাতার বাংলাদেশের জন্য জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই… কাতারের মহামহিম আমিরের এ সফর বাংলাদেশ এবং কাতারের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে পরিগণিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।
আমিরের সফরসূচি নিয়ে হাছান মাহমুদ জানান, সোমবার বিকেলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে কাতারের আমিরকে বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে স্বাগত জানানো হবে। গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। পরদিন মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। দুই শীর্ষ নেতার সাক্ষাতের পর ছয়টি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ওইদিন কাতারের আমির রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজনে অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় বিশেষ বিমানযোগে তিনি ঢাকা ত্যাগ করবেন।