ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু সংস্কার ব্যয় ও ঠিকাদার নিয়োগের। গত সোমবার ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উলিখিতসহ আরও কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মরক্কো থেকে ৪০ হাজার টন সার আমদানি এবং টিসিবির জন্য সয়াবিন ও মসুর ডাল ক্রয়। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পৃথক বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয় আরও দুটি প্রস্তাব। এর মধ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) আওতায় দুটি বস্ত্রকল চালু এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বাবিউবো) সব গ্রাহককে প্র্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দুটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।ই-পাসপোর্ট প্রকল্পটির মূল চুক্তি মূল্য ছিল তিন হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। প্রথম দফায় ব্যয় প্রায় ৪০ কোটি, দ্বিতীয় দফায় ৮৮ কোটি টাকা বৃদ্ধি পায়। এতে প্রকল্পের ব্যয় মোট বাড়ল ১৭৩ কোটি টাকা।
পিপিপির মাধ্যমে দুটি বস্ত্রকল চালু: বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সীতাকুণ্ডের আরআর টেক্সটাইল ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিলটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেসরকারি অংশীদার মিলটির ভ‚মি ব্যবহার বাবদ আপফ্রন্ট প্রিমিয়াম হিসাবে এককালীন ১০ কোটি টাকা এবং তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড শেষে পরবর্তী বছর থেকে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা বিটিএমসিকে প্রদান করবে। চুক্তির মেয়াদ হবে ৩০ বছর, যা সন্তোষজনক মেয়াদান্তে নবায়নযোগ্য।
চড়কা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড রাজশাহী টেক্সটাইল পরিচালনা করবে। এ জন্য ৩০ বছর মেয়াদে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এর ফলে ভূমি ব্যবহার বাবদ আপফ্রন্ট প্রিমিয়াম হিসাবে এককালীন ছয় কোটি টাকা এবং তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড শেষে পরবর্তী বছর থেকে পৌনে দুই কোটি টাকা বিটিএমসিকে প্রদান করবে।
বিদ্যুতের সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে বাবিউবোর সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতা আনা হবে। এ জন্য দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। এ পর্যন্ত বাবিউবোর ৫৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে।
এ ছাড়া হবিগঞ্জের বিবিয়ানা দক্ষিণ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ‘সাপ্লাই অব স্পেয়ার্স, কনজিউঅ্যাবলস অ্যান্ড শিডিউল মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কস ফর ৬ ইয়ার্স’ কার্যটি সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হতে পারে ৬৪৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু সংস্কার ব্যয় ও ঠিকাদার নিয়োগ অনুমোদন: বঙ্গবন্ধু সেতুর সার্ভিস লাইফ টাইম চলে যাওয়ায় পট বিয়ারিং এবং শক ট্রান্সমিশন ডিভাইস/সিসমিক ডিভাইস প্রতিস্থাপন করতে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১২৮ কোটি টাকা। যৌথভাবে কাজটি পেয়েছে সেকেন্ড হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন।
এ ছাড়া ভারতের অর্থায়নে কুমিল্লা (ময়নামতি)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ধরখার) জাতীয় মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নত করতে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শ নিয়োগ প্রস্তাব অনুমোন দেওয়া হয়েছে।
মরক্কো থেকে সার আমদানি: রাষ্ট্রীয়ভাবে মরক্কো থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ২১০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আওতায় এ সার আনা হবে। প্রতি টনের মূল্য পড়বে ৪৭৭ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার। এর আগের মূল্য ছিল ৫৪৭ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।
টিসিবির জন্য ভোজ্যতেল ও ডাল ক্রয়: ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য স্থানীয় পর্যায়ে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনা হবে। ব্যয় হবে ৭৫ কোটি টাকা। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৫১ টাকা ৪৫ পয়সা। সোনারগাঁও সিক্সক্রাসিং মিলস লিমিটেড থেকে তা কেনা হবে।
এ ছাড়া এক কোটি ৩০ লাখ লিটার পরিশোধিত পামওয়েল কেনার অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি লিটারের দাম পড়বে ১৪৩ টাকা। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৮৬ কোটি টাকা। ঢাকার সুংসিং এডিবেল ওয়েল লিমিটেড এ পণ্য সরবরাহ করবে। এছাড়া ১০ হাজার টন মসুর ডাল আমদানি করা হবে। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০১ টাকা ৩০ পয়সা। এ হিসাবে মোট দাম পড়বে ১০১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।