বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের উৎসব হিসাবে খ্যাত ভারতের ‘লোকসভা’ নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। ফলাফলের অপেক্ষায় দেশটির কোটি কোটি মানুষসহ গোটা বিশ্ব। সাত ধাপের ম্যারাথান নির্বাচন শেষে মঙ্গলবারই ঘোষণা করা হবে ভোটের ফল। জানা যাবে দিল্লির মসনদে বসতে যাচ্ছে কোন জোট।
সকাল আটটা থেকে শুরু হয় ভোট গণনা। প্রথমে গোনা শুরু হয় পোস্টাল ব্যালটের ভোট। পোস্টাল ভোট গোনা শেষ হলে তারপর শুরু হবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভোট।
পোস্টাল ব্যালট কোনো আসনের ফলাফলের নির্ধারক হতে পারে কিনা তা নিয়ে খুব সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকলেও মার্জিন কম-বেশির ক্ষেত্রে অনেক সময়েই ভূমিকা থাকে।
ভারতে বিগত বহু বছর ধরেই লোকসভা নির্বাচনে সব কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ করা হয়ে থাকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে, এবারেও তার কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে নিজের কেন্দ্রের বাইরে কাজে নিযুক্ত সরকারি কর্মী বা সেনা সদস্যরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেয়ার সুযোগ পান।
এছাড়া বছর কয়েক হলো নির্বাচন কমিশন অতি বয়স্ক নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের সেখানে বসেই ভোট দেয়ার ব্যবস্থা শুরু করেছে, যাতে তাদের পোলিং বুথে আসার কষ্ট না করতে হয়। আর এগুলো সবই হলো পেপার ব্যালট, অর্থাৎ কাগজের ব্যালট।
যেহেতু এই পোস্টাল ও পেপার ব্যালটগুলো গোনার মাধ্যমে গণনা শুরু হয়েছে তাতে কেন্দ্রভেদে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টাও সময় লেগে যেতে পারে।
ফলে সকাল আটটা থেকে ভোটগণনা শুরু হলেও ইভিএম গোনা শুরু হতে হতে প্রায় ন’টা বেজে যায় বেশিরভাগ কেন্দ্রেই।
প্রতি দফার ভোট শেষ হওয়ার পরই ইভিএমগুলো সিলগালা করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিভিন্ন সংসদীয় কেন্দ্রের স্ট্রংরুমে রাখা হয়। গণনার দিন অর্থ্যাৎ সকালে সেই ইভিএমগুলো স্ট্রংরুম থেকে বের করে গণনা কেন্দ্রে এনে সব অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর প্রতিনিধিদের সামনে তার সিল ভাঙা হচ্ছে।
প্রতিটি ইভিএমের ‘কন্ট্রোল ইউনিট’ ভালো মতো সিল করা ছিলো কি না, সঠিকভাবে কাজ করছে কি না- গণনা শুরু করার আগে তা বারবার ভালো করে পরীক্ষা করে সব দলের প্রতিনিধিদের সম্মতি নিয়েই গোনার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
প্রতিটি কেন্দ্রে গণনার প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেন ‘কাউন্টিং সুপারভাইজার’ ও ‘কাউন্টিং অ্যাসিস্ট্যান্ট’রা- যাদের নিয়োগ করেছেন ওই সংসদীয় আসনের রিটার্নিং অফিসার।
ভারতে ১৯ এপ্রিল শুরু হয় প্রথম দফার ভোট আর ১ জুন সপ্তম দফা দিয়ে শেষ হয়েছে বিশাল এ কর্মযজ্ঞ। ফলাফল ঘোষণার আগেই বিজেপির বিজয় উদযাপনের প্রস্তুতির খবর পাওয়া গেছে। কারণ, দেশটির প্রায় সব ক’টি বুথ ফেরত জরিপে নরেন্দ্র মোদীর জোটকে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পূর্বাভাস দিয়েছে।
শেষ দফার পরই বিভিন্ন গণমাধ্যম বুথ ফেরত জরিপ প্রকাশ করেছে। সেখানে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃত্ব এনডিএ জোটের এগিয়ে যাওয়ার আভাস দেয়া হয়েছে। আর দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব বুথফেরত জরিপ প্রকাশ করা হয়েছে, তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিরোধী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোট।
তারা এই জরিপকে ‘ভুয়া’ ও ‘প্রতারণামূলক’ বলে মন্তব্য করেছে। এসব জরিপের প্রায় প্রতিটিতেই বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবেন এবং ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট ৩৫০টির বেশি আসন পাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে ইন্ডিয়া জোট মনে করছে, এবার তারাই ক্ষমতায় যাচ্ছে।
লোকসভা নির্বাচনে ৬৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন। ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, ভোটদাতার সংখ্যার দিক থেকে এটা একটা বিশ্ব রেকর্ড। বিশ্বের কোনো দেশে কখনো এত বেশি মানুষ ভোট দেননি। আর মোট ভোটারের মধ্যে ৩১ কোটি ২০ লাখই নারী।
রাজীব কুমার বলেন, এবার পুনর্নির্বাচন বেশি হয়নি। মাত্র ৩৯টি জায়গায় পুননির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি হয়েছে অরুণাচল ও মণিপুরে। বাকি দেশে ১৫টি জায়গায় পুনর্নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে তিনি দাবি করে তিনি আরও বলেন, আশা করছি ভোটের ফল প্রকাশও নির্বিঘ্ন হবে।
ভারতে ভোট প্রধানত দুই ধরনের হয়। লোকসভা নির্বাচন ও বিধানসভা নির্বাচন। লোকসভা নির্বাচনে দেশ কে চালাবে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। পাঁচবছর পর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বিধানসভা নির্বাচন, রাজ্য কে চালাবে অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন। এটাও হয় প্রতি পাঁচবছর পর পর।