পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘ভারতীয় মিডিয়া যে ভূমিকা নিয়েছে, সেটা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে কোনো সহায়ক নয়। আমাদের সম্পর্কে ভারতীয় মিডিয়া মিথ্যাচার করেছে, অনেকগুলো বক্তব্য মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেছে। আমাদের মিডিয়াকে সেগুলো ভালোভাবে তুলে ধরতে হবে। আমরা কারো জন্য হুমকি নই, কেউ আমাদের জন্য হুমকি হোক, এটা আমরাও চাই না। সব দেশের সঙ্গেই আমরা ভালো সম্পর্ক রক্ষা করতে চাই।’
গতকাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা এবং ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স ও সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে ভারতের সঙ্গে এক রকম সম্পর্ক ছিল। ৫ আগস্টের পর সেটার পরিবর্তন হয়ে গেছে, এটা হলো বাস্তবতা। এ বাস্তবতার নিরিখেই ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিনির্মাণ করতে হবে এবং এটা অব্যাহত রাখতে হবে। যেকোনো পরিবর্তনেই সময় লাগে। আমার বিশ্বাস যে ভারত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নিতে হবে, সেটা উপলব্ধি করবে এবং করছেও সেটা। আমি প্রত্যাশা করব, তারা সে অনুযায়ী এগোবে।’
দুই প্রতিবেশীর সম্পর্কের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতা তো আছে কিছুই। পূর্ববর্তী সরকার ভারতের যে বিষয়গুলোয় উদ্বেগ ছিল, সেগুলো দূর করার যথাসাধ্য চেষ্টা তারা করেছে। আমাদেরও কিছু উদ্বেগ ছিল, আছে। যদি একই সঙ্গে আমাদের উদ্বেগগুলো যথাযথভাবে দূর করা হতো, তাহলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের একটা দোলাচল যে আছে, সেটা কিন্তু থাকত না। মোটা দাগে আমরা দেখতে পাই, আমাদের যেসব উদ্বেগ ছিল, ভারত সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়নি।’
বর্তমান টানাপড়েন সত্ত্বেও দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সম্পর্ক তো একদিনের, এক বছরের বা এক যুগের নয়, বেশি সময়ের ব্যাপার। সম্পর্ক সব সময় এক রকম যাবে, এমনও কথা নেই। আমরা আশাবাদী হতে চাইব যে আমরা একটা ভালো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারব, যাতে দুই পক্ষের স্বার্থ–সংরক্ষিত হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এমন হবে, যাতে উভয় দেশের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়, যাতে একদিকে না যায়।’
দুই দেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক তিক্ততার জন্য ভারতের গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারতের মিডিয়া হঠাৎ করে একেবারে যেন ভয়ংকরভাবে লেগে পড়ল আমাদের বিরুদ্ধে। আমি এটা স্পষ্টভাবে এবং খোলাখুলিভাবে বলেছি, বিভিন্ন বিবৃতিতে সেটা উল্লেখ করেছি। ভারতের মিডিয়া যে ভূমিকা নিয়েছে, সেটা কোনো অবস্থাতেই দুটি দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়ক নয়। তারা কেন এটা করছে, তারা ভালো বলতে পারবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যখন একটা বিবৃতি প্রচার করা হয়, সেটা কিন্তু প্রথম পৃষ্ঠায় আসা উচিত, ভেতরের পাতায় নয়। আমি বলছি, এটা আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। আমি বলতে পারি না যে এটা প্রথম পৃষ্ঠায় যেতে হবে। এটা অবধারিতভাবে আপনাদের সিদ্ধান্ত।’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, এসআইপিজির পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন ও এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। সঞ্চালনায় ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম জসিম উদ্দিন।