সরিয়ে দেওয়া হলো খালেদা জিয়ার ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে
বিএনপি পন্থি ক্রুদের অভ্যন্তরিন কোন্দলে এই সিদ্ধান্ত!
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরিয়ে দেওয়া হল দুই কেবিন ক্রুকে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ শুক্রবার রাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়। কাল সোমবার বিমানের ফ্লাইটে (বিজি ২০২) লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া।
বিমান সুত্রে জানাগেছে, ওই ফ্লাইটে দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও মধ্যরাতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই কেবিন ক্রুকে। তারা হলেন– আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলাম বিপোন। বিমান সূত্র জানায়, নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও বিমানের কেবিন ক্রু ইউনিয়ন সুত্রে জানাগেছে এদের মধ্যে কেবিন ক্রু কসমিক বিএনপির রাজনীতির সংগে যুক্ত রয়েছেন। তার বাড়ি বগুড়া জেলায়। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সংগে যুক্ত ছিলেন। বিমানের বিএনপি পন্থি কেবিন ক্রু ইউনিয়নের অভ্যন্তরিন কোন্দলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক কেবিন ক্রু অভিযোগ করেছেন।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম বলেন, দুই ক্রুকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। তবে বিমানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নানা কারণে যে কাউকে যে কোন ফ্লাইট থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। ডিউটি নাও দিতে পারে। রিশিডিউলিং হতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক।’
রোববার সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ২০২ ফ্লাইটটি। সকাল ১০টায় ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে পৌছানোর কথা রয়েছে। ফ্লাইটে খালেদা জিয়াসহ তার পরিবারের সদস্য ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা থাকবেন।
আগাম প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার দুপুরে ওই ফ্লাইটে চিফ পার্সার নিশি, ফ্লাইট পার্সার আল কুবরুন নাহার কসমিক, ফ্লাইট পার্সার মো. কামরুল ইসলাম বিপোন এবং জুনিয়র পার্সার রিফাজের নাম চূড়ান্ত করে বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগের সংশ্লিষ্ট ইউনিট। তবে গোয়েন্দা তথ্যে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা উঠে আসায় শুক্রবার মধ্যরাতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে দুজনের নাম বাতিল করা হয়।
ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ তাদের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ ও পরে ফ্লাইট থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, ফ্লাইটে কসমিক ও বিপোনের পরিবর্তে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট পার্সার ডিউক এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস আনহারা মারজানকে পাঠানো হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে আল কুবরুন নাহার কসমিক নিয়মিত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ফ্লাইট পরিচালনা করতেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে সরকারি সুবিধা ভোগের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চাকরি জীবনে তিনি ১৮ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন। শাস্তি হিসেবে একাধিকবার গ্রাউন্ডেড হয়েছেন। তবে বিমানের অপর একটি সুত্র জানায় কসমিন বিমানের বিএনপি পন্থি রাজনৈতিক প্যানেলের সঙ্গে সংশ্লিস্ট। তার বাড়ি বগুড়া জেলায়। ছাত্র জীবনেও কসমিক ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। বিএনপি পন্থি কেবিন ক্রুদের প্যানেলের অভ্যন্তরিন কোন্দলের কারণে তাকে ওই ফ্লাইট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন ওই সুত্র।
অপরদিকে জুনিয়র পার্সার কামরুল ইসলাম বিপোন দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দলের নানা কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট পালনের জন্য নিয়মিত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দেওয়া, শেখ কামালের জš§দিনে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা ও বিমানে শেখ রাসেল দিবস পালনেরও অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি।
এদিকে বিমানের ভিআইপি ফ্লাইটে ক্রু নিয়োগে আওয়ামী লীগের প্রভাব ও নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানাগেছে সিডিউলিং বিভাগ প্রায় ভিভিআইপি ফ্লাইটের ক্রু নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা-মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে যা সংশ্লিস্টদের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ আছে, ভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ক্রু নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন কোহিনুর বেগম আনিকা, যিনি আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী। আনিকার সহযোগি হিসাবে ছিলেন জুলাই আগস্ট গণ অভ্যুত্থানে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত দুটি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি কেবিন ক্রু মামুনুর রশিদ জুবিন। তবে জুবিনকে ইতোমধ্যে গ্রাউন্ডেট করা হলেও আনিকা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।