চার জন জ্যেষ্ঠ চিফ পার্সারকে ডিঙিয়ে বিমানের শিডিউলিং ম্যানেজার!

শেখ হাসিনার ভিভিআইপি ফ্লাইটের সুপার ক্লিয়ারেন্স পাওয়া ক্রুদের পদোন্নতির হিড়িক

ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিভিআইপি ফ্লাইটের সুপার ক্লিয়ারেন্স পাওয়া ক্রুদের পদোন্নতির হিড়িক পড়েছে। শুধু পদোন্নতির তালিকা ই নয় ম্যানেজমেন্টর শীর্ষ কর্তাদের পছন্দের ক্রুদের তালিকায়ও এদের নাম যোগ হচ্ছে। শীর্ষ কর্তারা রহস্যজনক কারণে বিমানের উন্নয়নের পরিবর্তে পছন্দের ক্রুদের (কেবিন ক্রু) উন্নয়নের দিকে বেশি মনোযোগী হচ্ছেন। সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তারা এক সময় দেশে বিদেশে হাসি তামাশার পাত্রে পরিণত হবেন। ভাইরাল হবেন ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বর্তমানে আওয়ামীলীগ আমলের নীতিতে অফিস প্লেসমেন্ট দিচ্ছে বিমান ম্যানেজমেন্ট। অর্থাৎ যোগ্য না হলেও সিনিয়র টপকিয়ে পছন্দের কর্মীর পদোন্নতি। আর এই কাজ সুচারুরূপে সম্পাদন করছেন বিমান কাস্টমার সার্ভিস প্রশাসন। বৈষম্য দূর করতে এসে বৈষম্যের সূচনা করতে চলেছেন তারা। চার জন জ্যেষ্ঠ চিফ পার্সারকে ডিঙিয়ে পছন্দের মহিলা কেবিন ক্রুকে সরাসরি শিডিউলিং ম্যানেজার বানাচ্ছেন যা নজীরবিহীন। আদেশ জারি হতে পারে সোমবার।

যাকে ম্যানেজার বানাচ্ছেন তিনি আবার পতিত আওয়ামীগীগ সরকারের আমলের আওয়ামী সমর্থনপুস্ট কেবিন ক্রু ইউনিয়নের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট। এই চিফ পার্সার  দীর্ঘদিন শেখ হাসিনার ভিভিআইপি ফ্লাইটের সুপার ক্লিয়ারেন্স পাওয়া ক্রু । ৫ই জুলাই পতনের পূর্বে শেখ হাসিনার স্পেন এবং ব্রাজিল যাবার জন্য বিমান যে ভিভিআইপি ক্রু তালিকা করে সেই খানে এই কেবিন ক্রু ছিলেন অগ্রভাগে, ফ্লাইট টি হলে তিনিই থাকতেন সেই ফ্লাইটের কেবিন ক্রু প্রধান ।

অভিযোগ আছে এই কেবিন ক্রুর আপন বোনের স্বামী আবু জাফর ছিলেন আরব আমিরাতের রাস্ট্রদুত। জুলাই আন্দোলনে ৫২ জন প্রবাসী আরব আমিরাতে গ্রেপ্তারে তার হাত থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার তাকে আবুধাবি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনে। এই কেবিন ক্রুর আরেক বোনের স্বামী স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন তার অন্যতম ঢাল। ৪ ই আগস্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান এর সাথে ছাত্র হত্যার “একটা গুলি করি একটা মরে বাকিডি যায় না” ভিডিওচিত্র থাকায় তাকেও অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে এই প্রভাবশালী দুজন চাকুরীতে না থাকলেও এই কেবিন ক্রুর ব্যপারে তাদের তদবির থেমে নেই। তাই নিয়ম ভেংগে সিনিয়র ক্রু থাকার পরেও তাদেরকে বঞ্চিত করে ৪ জন কে ডিঙিয়ে অফিসে বাসানোর ব্যবস্থা করতে প্রশাসনকে বিভিন্ন চাপ দিচ্ছে আওয়ামী সিন্ডিকেট।

সিনিয়রদের বঞ্চিত করে বিতর্কিত চীফ পার্সার কে বিশেষ ক্ষমতাবলে অফিসে বসানোর পরিকল্পনা করায় ইতিমধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও শুরু হয়েছে। বিষয়টি দুর্নিতি দমন কমিশনের ও বিমান সংশ্লিষ্ট অনেককে অবহিতও করা হয়েছে। ভুক্তভোগী অনেক ক্রুর অভিযোগ, বিমানে আওয়ামীলীগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য বেশকিছু কর্মকর্তার বিশেষ দুর্বলতা এখন প্রকাশ্য।

এ প্রসংগে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। কোন ক্রু, তার নাম কি সেটিও তিনি জানেন না। চারজনকে ডিংগিয়ে কাউকে ওই পদে দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হবে না। তাছাড়া সাবেক প্রধান মন্ত্রীর ভিআইপি ক্রুদের তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের কাউকে এই মুহুর্তে এরকম গুরুত্বপুর্ণ পদে বসানো ঠিক হবে না।  বিষয়টি তিনি দেখবেন বলেও জানান।

বিমানের সিকিউরিটি বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম হলো সিডিউলিং ম্যানেজার হওয়ার আগে যে কোন ক্রুকে  আগের চারটি পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এর আগে কখনোই এরকম অনভিজ্ঞ কাউকে এই পদে বসানোর কোন ধরনের পরিকল্পনা কখনো হয়নি। যারাই সিডিউলিং ম্যানেজার হয়েছেন তাদের সবাই আগের পদগুলোতে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.

EN