বছরে ৫০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছে বিমান সিবিএ

Biman-CBAএভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশ বিমানের ১০টি বিভাগের ৪০টি ঘাটে প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি ও হরিলুটের ঘটনা ঘটছে। বিমান শ্রমিক লীগসহ বেশ ক‘জন সিবিএ নেতার নেতৃত্বে প্রতি মাসে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ শুধুমাত্র চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিমান শ্রমিক লীগের অন্তত ৫০ জন শ্রমিক আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন।

চাঁদার টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয় সরকারের অনেক প্রভাবশালীদের মধ্যেও। একারণে বড় কোন অ্যাকশন হচ্ছে না অভিযুক্তদের। বিমানের চাদাবাজির এই শাখাগুলো হল মতিঝিল সেল্স অফিস, কার্গো বিভাগ, এয়ারপোর্ট সার্ভিস বিভাগ, বিক্রয় ও বিপনন পরিদপ্তর, সম্ভার ও ক্রয় পরিদপ্তর, যানবাহন উপবিভাগ, সিকিউরিটি ও তদন্ত বিভাগ, বিএফসিসি, বিমানের কর্মচারী নিয়োগ ও কর্মচারীদের পদোন্নতি, ফিটনেস বিভাগ, চুক্তি নবায়ন ও শাস্তি কালিন সময়ে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইতোমধ্যে এই চাঁদাবাজি বন্ধে সিবিএ নেতাদের দোষী করে দুনীতি দমন কমিশনে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, এয়ারপোর্ট ও অন্যান্য এলাকার অবৈধ কর্মকান্ড বৈধতা দেয়ার লক্ষ্যে ক্ষমতাধর সিবিএ নেতাদের দেয়া হয় মোটা অংকের অর্থ। তিনি সিবিএ নেতাদের তালিা তৈরী করে তাদের সম্পদের হিসাব নেয়ার অনুরোধ করেছেন দুদককে। জানা গেছে কেভিনের চিঠি পেয়ে দুদক একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে।

দুদক চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান জানান, বিমানের এমডি একটি চিঠি দিযেছেন। মুলত বিমানের দুনীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করতেই এই চিঠি। তিনি বলেন, কেভিন যে সব অভিযোগ করেছেন, সেগুলো তন্ত করে দেখা হবে।

শ্রমিকদের ওভারটাইম রোস্টার তৈরীর নামে চাঁদবাজি
শ্রমিক কর্মচারীদের ওভারটাইমের নামে বিমানে চলছে হরিলুট । গত বছর শুধু এই ওভারটাইম খাতে বিমানকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। তার আগের বছর ছিল ৩৮ কোটি টাকা। শিফটিং ডিউটি চালু করায় এই ক্ষতি চলতি বছর কমপক্ষে ১২০কোটি টাকা ছাড়াবে। অভিযোগ রয়েছে এই ৪২ কোটি টাকার মধ্যে অন্তত ৩০ কোটি টাকা চাঁদা হিসাবে দিতে হয় বিমান শ্রমিক লীগের শীর্ষ নেতাদের। জানাগেছে বিমান কতৃপক্ষ ঢালাও ভাবে চলা এই ওভারটাইম প্রথা বন্ধ করতে একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ওভারটাইম যথাসময়ে হচ্ছে কিনা এটা যাচাই করতে বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স সিস্টেম (ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন) এনেও সেগুলো চালু করতে পারেনি।

কার্গো রফতানি শাখায় ডিউটি রোস্টারের নামে চাঁদাবাজি
জানা গেছে সিবিএ নেতারা বিমানের কার্গো বিভাগের রপ্তানী শাখার স্পেস কন্ট্রোল, কার্গো ওজন চেকিং, কার্গো আমাদানী শাখার মেইন ওয়্যার হাউস, ডেলিভারী গেইট ও কার্গো প্রসিডিউস শাখায় শ্রমিকদের ডিউটি রোস্টারের নামে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা উঠাচ্ছে। অবাক হবার বিষয় হচ্ছে শ্রমিক লীগের সিবিএ নেতারা এসব শাখায় নিজদের নামে ডিউটি নিয়ে সেকাজ সাধারণ শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর ওই সিবিএ নেতা রাত ৯টা পর্যন্ত সিবিএ কার্যালয়ে আড্ডাবাজি করলেও মাস শেষে পে স্লিপের মাধ্যমে আদায় করছে লাখ টাকার ওপরে বেতন।

পিসিইউ শাখায় পোস্টিং দেয়ার নামে চাঁদাবাজি
বিমানের এয়ারপোর্ট ট্রাফিক শাখার পাসপোর্ট চেকিং ইউনিট (পিসিইউ) শাখায় পোস্টিং নিতে হলে প্রত্যেক স্টাফকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় সিবিএকে। এই শাখায় পোস্টিং নেয়া বিমানের একজন সদস্য প্রতিদিন আয় করছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বিমানের ট্রাফিক বিভাগের অধিকাংশ সদস্যের ঢাকায় একাধিক বাড়ি-গাড়ি ও নামে বেনামে সম্পদ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বিমান শ্রমিক লীগ নিজদের মনোনিত কর্মী নিয়োগ দিয়ে ইমিগ্রেশন শাখার যোগসাজাসে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন আদম পাচার করছে।

চেকিং কাউন্টারে অতিরিক্ত বাগেজ মাশুল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি
বিমানের চেকিং কাউন্টারে বিভিন্ন ফ্লাইটে গমনকারী যাত্রীদের অতিরিক্ত বাগেজ মাশুল আদায়ের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করছে। বাস্তবে এই টাকা বিমানের কোষাগারে জমা হচ্ছে না। একইভাবে হারানো ও প্রাপ্তি শাখায় তাদের নিজদের কর্মী পোস্টিং দিয়ে সিওডি ব্যাগেজের লাখ লাখ টাকা ভাড়া মাসুল আদায় করে সে টাকা বিমানের কোষাগারে জমা দিচ্ছে না।

সিট রিজারভেশনের নামে চাঁদাবাজি
সিট রিজারভেশন শাখায় নিজদের পছন্দের কর্মী পোস্টিং দিয়ে এজেন্টদের কাছ থেকে সিট কনফার্ম করার অজুহাতে ফ্লাইট ভিত্তিক লাখ লাখ টাকা আয় করেও সেই টাকা বিমানের কোষাগারে জমা না দিয়ে লুটপাট করছে। সম্ভার ও ক্রয় বিভাগে যে কোন ধরনের মালামাল বিমানে আসা মাত্র সিবিএকে কমিশণ দিতে হচ্ছে। এই খাতে মাসে কোটি টাকার বেশি আয় করছে সিবিএ নেতারা। অভিযোগ রয়েছে বিমানের মার্কেটিং বিভাগের একজন জেনারেল ম্যানেজারের নেতৃত্বে শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দ এই চাঁদাবাজি চলাচ্ছে।

যানবাহনের নামে চাঁদবাজি
বিমানের ভাড়া গাড়ির ঠিকাদার ও মালিকদের কাছ থেকেও মাসিক ভিত্তিতে লাখ লাখ টাকার মাসোহারা আদায় করছে সিবিএ। বিমানের প্রতিটি নিয়োগের জন্য সিবিএকে মাসোহারা দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি নিয়োগের জন্য গড়ে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে সিবিএকে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.