এভিয়েশন নিউজ: গত হজ মৌসুমে বাংলাদেশ বিমানের জেদ্দা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহন, ব্যাপক অনৈতিক কর্মকান্ড আর মাশুল না নিয়ে অতিরিক্ত লাগেজ পরিবহনের সুযোগ দিয়ে শত কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ উঠেছে। খোদ সৌদি আরব সরকারের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযোগ প্রমানিত হযেছে। এই ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে বিমানের জেদ্দা অফিসে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল বলেছেন, এই অভিযোগের বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানাগেছে এই ঘটনার সঙ্গে শুধু জেদ্দা অফিসের নিয়মিত কর্মীরাই জড়িত ছিল না, এর সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত রয়েছে।
বিমান কর্তৃপক্ষ জেদ্দা থেকে ঢাকাগামী ফিরতি হজ্ব ফ্লাইটে এ অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেয়েছে। ২১ শে অক্টোবর সৌদি ন্যাশনাল সুলেমান রাশদির অভিযোগের ভিত্তিতে, বিমানের সদ্য সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কেভিন জন স্টেল ঘটনাটি অবিলম্বে তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন “সব অতিরিক্ত লাগেজের মূল্য পরিশোধের জন্য ভাউচার প্রস্তুত করতে হবে। কোনো প্রকার অসংগতি পাওয়া গেলে তা গুরুতের সাথে দেখা হবে এমনকি বরখাস্ত ও করা হতে পারে।”
অভিযোগ এর ফলে, জেদ্দা থেকে হজ্ব যাত্রী বহনকারী ফ্লাইটে বিমান কর্তৃপক্ষ অনথিভুক্ত অতিরিক্ত লাগেজ পরিদর্শনের জন্য একটি দল গঠন করে পাঠিয়েছে। ইমেইল এর মাধ্যমে বিমানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে যে অভিযোগ পাঠানো হয়, তাতে বলা হয় জেদ্দায় কিং আব্দুল আজিজ টার্মিনালে কর্মীরা এবং বিমানের নিরাপত্তা কর্মীরা এর সাথে জড়িত। তারা অতিরিক্ত লাগেজ মানি কোনো প্রকার লাগেজ টিকেট ছাড়াই পকেটস্থ করেছে।
জনাব Rasheedz বলেন “আমি দেখেছি তারা প্রতি কেজি ৬০ সৌদি রিয়াল (এসআর ) হিসাবে যাত্রী প্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ এসআর এর চেয়ে বেশি নিয়েছে। ”তিনি আরও বলেন “প্রতিটি ব্যক্তি সঙ্গে জড়িত থাকার কারনে অবৈধ এই অর্থ উপার্জন পুরোদমে চলছে।”
২৩ অক্টোবর অন্য একটি ইমেইলে, তিনি উল্লেখ করেন এই ঘুষের কারবার এখনও পুরোদমে চলছে এবং টার্মিনালের কর্মীরা এবং নিরাপত্তা কর্মীরা তদন্তের ব্যাপারে একেবারেই ভীত নয় কারন তারা রাত আটটার সময়ে ইএ২০২০ বহনকারী ৩১২ জন যাত্রীর কাছ থেকে অর্থ নিয়েছে আরএস ১০,৪৬০। যদিও তারা ঐ ফ্লাইটে অতিরিক্ত লাগেজ দেখিয়েছে মাত্র ৫ কেজি।
দ্বিতীয় ইমেইলে লিখেছেন “আমার লোকেরা টার্মিনালের কর্মী এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের পর্যবেক্ষণ করেছে, যার প্রমান স্বরূপ আমি হজ্ব টার্মিনালের গোপন ক্যামেরাতে ধারণকৃত ২ ঘন্টা ৩৪ মিনিটের একটি রেকর্ডেড ভিডিও প্রদান করবো।” DGM CQRM মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে দুই সদস্য ম্যানেজার ফ্লাইট সেফটি (actg.) মুজিবুর রহমান ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা সায়েদ আহমেদ দ্বারা গঠিত পরিদর্শক দল ফ্লাইট ইএ২০১৬ এয়ারক্রাফট উঈ১০ ূ ৩০ এক পর্যবেক্ষণ করে, যা ২২শে অক্টোবর ৩১৪ জন হাজী বহন করে জেদ্দা থেকে এসেছে।
দলের সদস্যরা সন্দেহভাজন অতিরিক্ত লাগেজ বহনকারী হাজিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তিনজনকে পাওয়া যায় যারা বাড়তি ওজনের অর্থ পরিশোধ করেছেন। কেবলমাত্র একজন হাজী আলহাজ্ব আব্দুর রহিম তার পেমেন্ট রসিদ দেখান নি, তিনি ৪০ কেজি লাগেজ বহন করেছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি এসআর ১৫০ প্রদান করেছেন কিন্তু জেদ্দায় টার্মিনালে কর্মীরা তাঁকে কোন মানি রিসিপ্ট দেয়নি।
অন্যান্য হাজিদের সঙ্গে মৌখিক কথোপকথনে জানা যায়, অতিরিক্ত লাগেজের জন্য তাঁরা ঔঊউ এ কর্মীদের অর্থ প্রদান করেছেন, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদেরকে মানি রিসিপ্ট দেয়া হয়নি। অন্য দিকে, অনেক হাজী পরিদর্শন দলকে জানান অতিরিক্ত লাগেজের ওজন, ওজন সীমার মাঝে থাকার কারনে তাঁদের কাছে অর্থ চাওয়া হয়নি। সূত্র বলেছে,দল ঔঊউ তে তাদের পরিদর্শন অব্যাহত রাখবে। এবং যদি কোন অসঙ্গতি পাওয়া যায় ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে অবহিত করবে।
সৌদি ন্যাশনাল ইমেইলে উল্লেখ করেছেন এই ধরনের অভ্যাস ইসলামে হারাম এবং এয়ারলাইন্সের জন্য বিরাট ক্ষতি। “আমার বিনীত অনুরোধ হজ্ব টার্মিনালের ব্যাপারে যতœবান হোন কারন এটি বড় ধরনের হারাম এবং আমরা চাইনা এ ধরনের ঘুষ আমাদের হজ্ব টার্মিনালে চলতে থাক”
এই বছরে বিমান বোয়িং ৭৭৭ – ৩০০ঊজ ও উঈ১০ -৩০ এয়ারক্রাফট এর মাধ্যমে ৪২ হাজার হজ্ব যাত্রী বহন করেছে। প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট জেদ্দা থেকে ছেড়েছে। সাধারণত, হাজিরা ৩০ কেজি মালামাল বহন করার অনুমতি পান। কিন্তু বেশিরভাগ হাজী এর থেকে বেশি বহন করেন।
সূত্র জানায়, বিমানের কিছু কর্মচারী প্রতিটি ফিরতি ফ্লাইটে অতিরিক্ত লাগেজ বহনের মাধ্যমে অনৈতিকভাবে প্রচুর অবৈধ অর্থ আদায় করছে।কারণ , ফ্লাইটের ভিতরে কোন খালি জায়গা না থাকা সত্বেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অতিরিক্ত লাগেজ দেখায়নি।