কম খরচে কাতারে যাওয়ার সুযোগ

katarএ বছর যাঁরা বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য হতে পারে কাতার। চলতি বছরই বাংলাদেশ থেকে লক্ষাধিক কর্মী নেবে কাতার। ইতিমধ্যে ৫০ হাজার কর্মীর ভিসার অনুমোদন দিয়েছে দেশটি। এর চেয়েও বড় সুখবর বাংলাদেশ থেকে কর্মী যেতে খরচও বহুলাংশে কমে আসবে। থাকবে না কোনো মধ্যস্বত্বভোগী। কেবল সাধারণ শ্রমিক নন; দক্ষ প্রকৌশলী, রসায়নবিদ, ব্যাংকার ও ইমামদেরও কাতারে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি কাতার সফর শেষে ঢাকায় ফিরে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কাতার আমাদের জন্য পপুলার ডেসটিনেশন। ২০১৪ সালে অনেক লোক কাতারে গিয়েছে। আগে কাতারে সবচেয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক দেশ ছিল নেপাল, ভারত ও ফিলিপাইন। কিন্তু কাতার শ্রমিক নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশকে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে কাতার সরকার ৫০ হাজার শ্রমিকের চাহিদাপত্র ও ভিসার অনুমোদন দিয়েছে। আমি আসা করছি, বছর শেষে এক থেকে দেড় লাখ কর্মী নেবে কাতার।’
চলতি বছরের ২৩ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কাতার সফর করে।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাব অনুযায়ী, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার যখন নানা সংকটে তখন বাংলাদেশ থেকে গত কয়েক বছরে কাতারে বাংলাদেশিদের যাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যত লোক বিদেশে গেছে তার মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষে ছিল কাতার। ওই বছর ৫৭ হাজার ৫৮৪ জন কর্মী কাতারে যান। আর ২০১৪ সালে যান ৮৭ হাজার ৫৭৫ জন কর্মী। আর এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে ১৪ হাজার ৬২২ জন কর্মী কাতারে গেছেন।

এবার যে প্রক্রিয়ায় কর্মী যাবেন
এবার কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী যাবেন জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাহিদা এবং নির্বাচন এই এই দুই জায়গার মাঝখানে কোনো মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না। এই দুই জায়গায় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। তাহলে আর মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ পাবে না। আর খরচও বাড়বে না। কাতার সরকার আমাদের এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। ফলে কাতার এখন থেকে সরাসরি আমাদের দূতাবাসে চাহিদাপত্র দেবে। এরপর দূতাবাস সেই চাহিদাপত্র ঢাকায় পাঠাবে। এরপর আমরা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে ডেটাবেইস থেকে কর্মী দেব। ৫০০ জনের চাহিদার বিপরীতে আমরা ১ হাজার ৫০০ জনের নাম দেব। সেখান থেকে জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা কর্মী ঠিক করবে।’

খরচ কেমন
ভিসা-বাণিজ্যের কারণে কাতারে যাওয়ার খরচ বেড়ে যায় উল্লেখ করে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা ট্রেডিং বন্ধ করতে আমাদের প্রস্তাবে কাতার সরকার রাজি হয়েছে। ফলে খরচ কমে যাবে। আমার এই সফরের মূল লক্ষ্য সেই খরচ কমিয়ে আনা। আমি চাই সেই খরচ শূন্যে নেমে আসুক।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আমরা দুই দেশই জিরো মাইগ্রেশন কস্টের বিষয়ে একমত হয়েছি। কর্মীর যাওয়ার খরচসহ সবকিছু নিয়োগকর্তা দেবে। কাজেই শ্রমিকের কাতার যেতে সেভাবে খরচ লাগবে না। তবে পাসপোর্ট ও অন্যান্য বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।’

ডেটাবেইস থেকে কর্মী যাবেন
নতুন যে বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইন হয়েছে তাতে সরকারিভাবে নিবন্ধন করা ছাড়া এখন আর কারও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। কাজেই বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আপনাকে শুরুতেই ঢাকার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কিংবা আপনার জেলার জনশক্তি কার্যালয়ে গিয়ে নাম নিবন্ধন করতে হবে। ২০০ টাকা খরচ করে বিএমটির ডেটাবেইসে নাম নিবন্ধন করা যাবে। নাম নিবন্ধনের পর আপনি দালাল এড়িয়ে বৈধ যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রায় এক হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, যাদের প্রত্যেকের একটি করে লাইসেন্স নম্বর আছে। www.baira.org.bd এই তালিকায় গিয়ে সেগুলোর নাম জানা যাবে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সভাপতি আবুল বাসার বলেন, বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি ছাড়া আর কারও চাকরির জন্য বিদেশে লোক পাঠানোর সুযোগ নেই। কাজেই কেউ অন্য কোথাও টাকা দিয়ে প্রতারিত হবেন না।
কাতারের শ্রম ও সামাজিক বিষয়ক শ্রমমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন সালেহ আল খেলায়ফির সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের ডেটাবেইস ও শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে প্রস্তুতির কথা শুনে কাতার অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কাজেই ডেটাবেইস থেকেই কর্মী যাবে।’

দক্ষ কর্মীদেরও চাহিদা আছে
কেবল সাধারণ শ্রমিক নয়, দক্ষ প্রকৌশলী, ব্যাংকার, রসায়নবিদসহ বিভিন্ন খাতেও বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত কর্মী নিচ্ছে কাতার। কাতার ফার্টিলাইজারে কয়েক শ প্রকৌশলী রয়েছেন। এ ছাড়া কাতারের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অনেক বাংলাদেশি কাজ করছেন। এসব ক্ষেত্রে দক্ষ লোকদেরও চাহিদা রয়েছে কাতারে। এ ছাড়া কাতারে এক হাজারেরও বেশি ইমাম-মুয়াজ্জিন বর্তমানে কর্মরত আছেন। নতুন করেও অনেক ইমাম-মুয়াজ্জিন নিতে চায় কাতার। এ ক্ষেত্রে ইসলামি ও আরবি বিষয়ে যাঁদের যোগ্যতা আছে, তাঁদের বিশাল সুযোগ রয়েছে কাতারে। সরকারি জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলে দক্ষ কর্মীদের চাহিদা জানিয়ে নিয়মিত বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব মনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২২ সালের বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতার বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সেটি আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক খবর। আমরা আশা করছি, কাতারের শ্রমবাজারে বাংলাদেশ আরও শক্তিশালী হবে।’

দক্ষ হোন, ভাষা শিখুন, জানুন আইনকানুন
কাতার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। এখানে ইসলামি শরিয়া আইন প্রচলিত। কাজেই দেশটিতে যাওয়ার আগেই সেখানকার আইনকানুন জেনে যান। আর আরবি ভাষা শিখে যেতে পারলে সবচেয়ে ভালো। সেটি সম্ভব না হলে আরবি ভাষার জরুরি কিছু শব্দ ও বাক্য শিখে যেতে পারেন। আর বিদেশে যাওয়ার আগে দক্ষতা খুব জরুরি। বিএমইটির অধীনে দেশে ৩৮টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। সেখানে গিয়ে যেকোনো পেশায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।

কখনোই যা করবেন না
বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আপনি কখনোই দালালদের কাছে যাবেন না। কখনো কোনো অবস্থাতেই অগ্রিম অর্থ লেনদেন করবেন না। বিনা রসিদে কাউকে টাকা দেবেন না। রিক্রুটিং এজেন্সি বাদে কারও কাছে পাসপোর্ট দেবেন না। যে কাজ পারেন না সেই কাজ করতে যাবেন না। ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ দেবেন না। মাদকাসক্ত অবস্থায় বিদেশে যাবেন না।

প্রয়োজনীয় কিছু নম্বর ও ঠিকানা
প্রবাসী কলাণ ভবন, ৭১-৭২, পুরোনো এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা।
www. probashi.gov.bd
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো: ৮৯/২, কাকরাইল ঢাকা, www. bmet.gov.bd
বোয়েসেল: ৭১-৭২ এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডেন ঢাকা। www. boesl.org.bd
বায়রা: বায়রা ভবন, ১৩০ নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা। www. baira.org.bd

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.