তরঙ্গ নিলাম বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে বিটিআরসির চিঠি

BTRCতরঙ্গ নিলামের আগে মোবাইল কোম্পানিগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়া বিষয়গুলো সমাধানে বৈঠকে বসতে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আজ বৃহস্পতিবার এ চিঠি দেওয়া হয় বলে বিটিআরসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে।
১ মার্চ দেশের শীর্ষ চারটি মোবাইল কোম্পানির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান না করা হলে আগামী ৩০ এপ্রিলের তরঙ্গ নিলামে তাদের এ-দেশীয় অপারেটররা অংশ নেবে না।
ওই চিঠিতে সই করেন গ্রামীণফোনের পক্ষে টেলিনরের প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জন ফ্রেডরিক বাকসাস, রবির পক্ষে আজিয়াটা গ্রুপ বারহাদের প্রেসিডেন্ট ও গ্রুপ সিইও দাতো শ্রি জামালউদ্দিন ইব্রাহিম, বাংলালিংকের পক্ষে ভিম্পেলকমের সিইও জো লানডার, এয়ারটেল বাংলাদেশের পক্ষে ভারতী এয়ারটেলের চেয়ারম্যান সুনীল মিত্তাল।
নিলামে তরঙ্গ বিক্রি না হলে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে সরকার।
চিঠিতে বলা হয়, ২০১৩ সালে তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) তরঙ্গ নিলামের সময় সরকারের পক্ষে বিটিআরসি কয়েকটি সমস্যা সমাধানে অপারেটরদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সমস্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সিমকার্ড প্রতিস্থাপন কর-সংক্রান্ত মামলার সমাধান, নিলামে বিক্রি হওয়া তরঙ্গমূল্যের ওপর ধার্য করা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার, বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইন সংস্কার, তরঙ্গ ব্যবহারে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, কর কাঠামোর সংস্কার প্রভৃতি। উল্লিখিত সমস্যাগুলোর একটিও এখন পর্যন্ত সমাধান করা হয়নি। তাই তরঙ্গ নিলামে অংশ নিয়ে নতুন করে বিনিয়োগে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।
মোবাইল অপারেটরদের পাঠানো ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তরঙ্গ নিলামের বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে যায়। সে পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসির পক্ষ থেকে আজ এ চিঠি পাঠানো হয় বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সূত্র জানিয়েছে। বিটিআরসির উপপরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সমস্যাগুলোর সমাধানের মাধ্যমে তরঙ্গ নিলাম কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে করতে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিটিআরসির চেয়ারম্যান, এনবিআরের চেয়ারম্যান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের বৈঠক প্রয়োজন। এ জন্য চিঠির মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর সময় চাওয়া হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, শিগগিরই অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির (টুজি) সেবা দেওয়ার জন্য অব্যবহৃত ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ এবং তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির (থ্রিজি) জন্য অব্যবহৃত ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ নিলাম আয়োজনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৩০ এপ্রিল। নিলামের নীতিমালা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজের জন্য নিলামের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে তিন কোটি মার্কিন ডলার বা ২৩২ কোটি টাকা। ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজের ভিত্তিমূল্য ২ কোটি ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
জিএসএম বা টুজির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অপারেটররা ১ হাজার ৮০০ মেগাহার্টজ ও তৃতীয় প্রজন্মের থ্রিজি নেটওয়ার্কের জন্য ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করে। টুজির ১০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ও থ্রিজির জন্য ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ এ নিলামে বিক্রি হওয়ার কথা। ভিত্তিমূল্যে যদি এ তরঙ্গ বিক্রি হয়, তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
১ মার্চ দেওয়া চিঠিতে নিলামে অংশ নেওয়ার আগে টেলিযোগাযোগ নীতিমালা সংশোধন, তরঙ্গের ওপর ভ্যাট, সিম প্রতিস্থাপনের বিষয়ে ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান চায় চারটি মোবাইল ফোন কোম্পানি।
সিম প্রতিস্থাপন কর-সংক্রান্ত বিষয়টি সমাধান না হওয়াকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে এটি সমাধান না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে কোম্পানিগুলো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সিম প্রতিস্থাপনে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে ২০১২ সাল থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে দাবি করে আসছে। সেটি ১ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে গত বছরের নভেম্বর মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এনবিআরকে ২ হাজার কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশনা দেন। বিষয়টি সমাধানেও চিঠিতে বিশেষভাবে জোর দেওয়া হয় অপারেটরদের পক্ষ থেকে।
এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী গ্রামীণফোনের কাছে তাদের পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। বাংলালিংকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির পাওনা ৭৬২ কোটি টাকা, রবির কাছে পাওনা ৬৪৭ কোটি টাকা ও এয়ারটেলের কাছে পাওনা ৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
অন্যদিকে মোবাইল ফোন অপারেটররা তরঙ্গ ব্যবহারে স্বাধীনতার বিষয়টি অনেক দিন থেকেই বিটিআরসির কাছে দাবি করে আসছে। বর্তমানে শুধু ২ হাজার ১০০ মেগাহার্টজের মাধ্যমে থ্রিজি সেবা দিতে পারে অপারেটররা। আর ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজে টুজি সেবা দেওয়া যায়। সব তরঙ্গে টুজি ও থ্রিজি সেবা দেওয়ার অনুমতি পেলে গ্রামাঞ্চলে সেবার মান বাড়ার পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট ও ভয়েস কল সেবা দেওয়া সম্ভব বলে দাবি অপারেটরদের।
টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পথনকশা না হওয়ার বিষয়টিরও সমাধান চায় অপারেটররা। এ জন্য বিদ্যমান টেলিযোগাযোগ আইন সংস্কার করে যুগোপযোগী করার কথা বলছে অপারেটররা।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.