হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ ও মুদ্রা পাচার সিন্ডিকেটের তৎপরতা আবারো বেড়ে গেছে। চক্রের সদস্যরা এ বিমানবন্দরকে ‘নিরাপদ’ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। যার কারণে বেশির ভাগ চালান বিমানবন্দর দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছে। তবে কাস্টম ও শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারিতে মাঝেমধ্যে চালান ধরা পড়লেও তা একেবারেই কম।
গত বৃহস্পতিবার রাতেও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নজরদারির কারণে দুবাইগামী ফাইটের যাত্রী শহীদুল আলমকে গ্রিন চ্যানেল এলাকায় আটক করা হয়। পরে তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সেই যাত্রী স্বীকার করেন, তিনি চলতি বছর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে অন্তত ৪০ বার দুবাই আসা-যাওয়া করেছেন। কিন্তু কখনো তিনি বিমানবন্দরে কোনো ঝামেলায় পড়েননি।
বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু কাস্টমস কর্মকর্তাসহ অন্যদের ‘ম্যানেজ’ করে অথবা তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাত্রী শহীদুল আলম নিরাপদে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার চালান দুবাই নিয়ে গেছেন এবং ফেরার সময় স্বর্ণের চালান নিয়ে এসেছেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের দুবাইগামী একটি ফাইটে ওঠার আগেই বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় যাত্রী শহীদুল আলমের গতিবিধি সন্দেহজনক দেখে আটক করা হয়। প্রথমে কালো রঙের হ্যান্ড ট্রলিব্যাগে বিদেশী মুদ্রা (সৌদি রিয়াল) থাকার কথা অস্বীকার করলেও আবার ব্যাগেজ স্ক্যানিং করে ব্যাগের ভেতর কাগজের মুদ্রার অস্তিত্ব ধরা পড়ে। এরপরই যাত্রীকে এয়ারলাইন্স থেকে অফলোড করে কাস্টমস হলে নেয়া হয়। এ সময় তার ট্রলির ভেতর আরেকটি ছোট ট্রলি পাওয়া যায়। দু’টি ট্রলির ভেতরের নিচের দিকে সুকৌশলে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে স্তরে স্তরে বিদেশী মুদ্রা লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায়। যার মধ্যে এক লাখ ৫৬ হাজার ২০৫ সৌদি রিয়াল ও ৩১ হাজার ৫৭ দিরহাম রয়েছে। বাংলাদেশী টাকায় ৩২ লাখ টাকা। আটক যাত্রীর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। তার পাসপোর্ট নাম্বার এএফ-৭০৩১০৭৩।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তার পাসপোর্ট যাচাই করে জানতে পারেন যাত্রী শহীদুল আলম চলতি বছরে ৪০ বার দুবাই যাতায়াত করেছেন। এ সময় তিনি নিজেকে ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। কাস্টম গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি তাকে বিদেশী মুদ্রাগুলো দুবাই নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন।
কাস্টমস গোয়েন্দাদের ধারণা, ঢাকা থেকে দুবাই নিয়ে মুদ্রার বিনিময়ে যাত্রী স্বর্ণের চালান নিয়ে আসত। যাত্রীর কোনো মুদ্রা পাচারকারী নেটওয়ার্কের সাথে যোগাযোগ রয়েছে কি না তা গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন।
এ দিকে বিমানবন্দরের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, শহীদুল আলমের মতো যাত্রীরূপী অনেকেই নানা কৌশলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন মুদ্রা দেশের বাইরে পাচার করছে। বিনিময়ে দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে কেজি কেজি স্বর্ণের চালান নিয়ে আসছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দু-একটি চালান আটক করে কর্মকর্তারা ‘আওয়াজ’ দিলেও বেশির ভাগ চালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ‘ম্যানেজ’ করে নিয়মিত চোরাচালান বাণিজ্য অব্যাহত রাখছে। যার কারণে বেশির ভাগ চালান থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের প্রশ্ন, বিমানবন্দরে সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার পরও কিভাবে এক ব্যক্তি একই বিমানবন্দর ব্যবহার করে দুবাই ৪০ বার আসা-যাওয়া করল? এ সময়ের মধ্যে তিনি কি পরিমাণ মুদ্রা ও স্বর্ণ পাচার করেছেন এবং এর সাথে সিন্ডিকেটের সদস্য ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারা জড়িত রয়েছে, তা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরও খবর