মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশ সফরে আসতে চান। তার আগেই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি ঢাকা আসবেন। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম মাহমুদ আলী। এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি শুরু করেছে বলেও জানান তিনি। বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছে।
বৈঠকে মাহমুদ আলী জানান, ফেব্র“য়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে তার বৈঠক হয়। সেখানে কেরী জানান, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বাংলাদেশ সফরে বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশ চাইলে যত দ্রুত সম্ভব এ সফরের আয়োজন করতে পারে। তবে ওবামার বাংলাদেশ সফরের আগেই কেরী ঢাকা আসবেন বলে জানান।
দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাহায্য চান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এসময় জন কেরি জানান, এ ধরনের আসামিকে সে দেশের বিদ্যমান আইনে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বেশ জটিল। তারপরও এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে আইনি সহযোগিতা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন।
মন্ত্রী আরো জানান, জন কেরি বাংলাদেশী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সন্ত্রাস দমনে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চান। এসময় মন্ত্রী সন্ত্রাস দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কার্যক্রম, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সরকারের পদক্ষেপের কথা জানালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনা হয়। এতে অংশ নিয়ে কয়েকজন মন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে দেখে মনে হয়েছে তিনি বেশ ক্ষুব্ধ। তার মধ্যে বেশ হতাশাও ছিল। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ধারণা মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। আর কর্মসূচি দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা আÍগোপনে রয়েছেন। মুলত: হতাশা এসব কারণেই। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনসমর্থনহীন অবরোধ বলেই সব কিছুই স্বাভাবিক আছে। আমদানি রপ্তানিতেও স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতি নির্বাচনে এক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন।
বিভাগীয় শহরে বিআরডিবি অফিস হচ্ছে ঃ বিভাগীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) কার্যালয় স্থাপনের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০১৫’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে আইনটি মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছিল। তখন মন্ত্রিসভা কিছু পর্যবেক্ষণসহ ফেরত দিয়েছিল। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী পরিমার্জন করে উপস্থাপন করেছে। এটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বোর্ড পরিচালনায় অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করতে খুব বেশি পরিবর্তন করা হয়নি। মূলত এটি বাংলায় করা হয়েছে।
প্রশাসনিক কাঠামোর বিষয়ে সংযোজন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিআরডিবির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে, জাতীয় পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে ও উপজেলা পর্যায়ে অফিস প্রতিষ্ঠার বিধান ছিল। নতুন আইনে বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস স্থাপনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। কারণ এর কাজ অনেক বিস্তৃত হয়েছে, বিভাগীয় পর্যায়ে অফিস থাকা দরকার।
সচিব জানান, সমবায় সমিতি নিয়ে কাজ করে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)। সমবায় সমিতিগুলোর নিবন্ধন দেয় সমবায় অধিদপ্তর। আর এদের অর্থ, প্রশিক্ষণ, ব্যবস্থাপনাগত সহায়তা দেয় বিআরডিবি। সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন ছাড়াও বিআরডিবির অনুমোদন নিয়ে কিছু কিছু ইনফরমাল গ্রুপও (অনানুষ্ঠানিক দল) কিন্তু কাজ করছে। এদেরও নতুন আইনের কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন “মন্ত্রিসভা বলেছে, এদের ইনফরমাল গ্রুপ বা অন্য কোন নাম দেবে কিনা তা বিআরডিবি পরীক্ষা করে দেখবে।”
বর্তমানে পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। নতুন আইনে চেয়ারম্যান হবেন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী। মন্ত্রী না থাকালে প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীরা যাতে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বোর্ডও কিছুটা পুনর্গঠন করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আগে বার্ড (বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, কুমিল্লা) ও আরডিএ’র (পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া) মহাপরিচালক বোর্ডের সদস্য ছিলেন। গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমি স্থাপিত হয়েছে। নতুন আইনে এ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকও বোর্ডের সদস্য হবেন।” নির্বাচিত নমিনেটেড সদস্যদের মেয়াদ ছিল এক বছর তা তিন বছর করা হচ্ছে নতুন আইনে।
সুবিধা পাবে না বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠানঃ বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশে যাতে অতিরিক্ত শুল্ক রেয়াত সুবিধা না পায় সে বিধান রেখে নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ জন্য ‘দি ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন আইন, ২০১৫’ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের পার্টনারশিপ রয়েছে জানিয়ে বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একটি হল ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) যা নমনীয় ঋণ দিয়ে থাকে। অপরটি হল আইএফসি, যা মূলত প্রাইভেট সেক্টরকে সাপোর্ট করে থাকে। যখন কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি হয় তখন তা কোনো দেশে কার্যকর করতে আইনি কাঠামো প্রয়োজন হয়। আইন প্রণয়ন করতে হয়। ১৯৭৬ সালে সামরিক শাসনামলে ‘ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন অর্ডিনেন্স’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইএফসি কার্যকর করতে একটি আইনি কাঠামো তৈরি করা হয়।
অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করতে কোনো পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এনবিআরের পরামর্শে একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। ইউএন মিশন, ডিপ্লোমেটিক মিশন বা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন যে সব পণ্য তাদের ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশে আনেন তা শুল্কমুক্ত হয়। এখানে এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) পরামর্শে এই টেক্সটাকে একটু ইলাবোরেট (ব্যাখ্যা) করা হয়েছে যাতে তারা অতিরিক্ত কোনোরকম শুল্ক রেয়াত পেতে না পারে, অবারিত সুবিধা দেওয়া হবে না। অবশ্য অবারিত সুযোগ নেওয়ার কোনো স্কোপও নেই’ বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
খসড়া আইনটিতে ৮টি ধারা আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইএফসি থেকে যে অর্থ পাব তা প্রজাতন্ত্রের সংযুক্ত তহবিলে যুক্ত হবে। আইএফসিকে যদি চাঁদা দিতে হয় বা অর্থ পরিশোধ করতে হয় তাহলে প্রজাতন্ত্রের সংযুক্ত তহবিল থেকে পরিশোধ করতে হবে। আইএফসি থেকে যে ফরেন এক্সচেঞ্জ পাব বাংলাদেশ ব্যাংক তার কাস্টোডিয়ান হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।