এভিয়েশন নিউজ: চট্টগ্রাম বিমান স্টেশনের যানবাহন শাখায় ব্যাপক অনিয়ম-দুনীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ যানবাহন শাখায় কর্মরত সিডিউলিং সুপার ভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কর্মচারী মোঃ আরিফুর রহমান (পি-৩৫৪৫০) পুরো অনিয়ম-দুনীতির সঙ্গে জড়িত। জানা গেছে তার বিপরীতে শিফটে সিডিউলার/ সুপারভাইজার না থাকা সত্বেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডিউটি রোষ্টার তৈরী করে আসছেন। এতে পছন্দের লোকজনকে ডিউটিতে দিয়ে প্রতি মাসে নানাভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। জানাগেছে গত বছর অক্টোবর মাস থেকে চলে আসছে তার এই অবৈধ কর্মকান্ড।
বিমান প্রচলিত বিধি অনুযায়ী একক ব্যক্তি দ্বারা কোন শিফ্ট ডিউটি দেখানো যায় না। যার প্রেক্ষিতে প্রতি মাসে ৩২২ ঘন্টা ওভার টাইম বাবদ পঁচিশ হাজার টাকা অফিসের অধিক অপচয় হচ্ছে। তিনি প্রতি মাসে ১০/১২ দিন ছুটিতে ঢাকায় থাকায় অবস্থান কালে যদি সেকশনের কোন সমস্যা না হয় তবে সাধারণ পালায় ডিউটি পালনে সংস্থার কেন সমস্যা হবে তা বোর্ধগম্য নয়।
বিগত মার্চ মাসের ৩-৫ তারিখ পর্যন্ত তিনি স্বপরিবারে (স্ত্রী, ১ মেয়ে ঐশি, ১ ছেলে স্বচ্ছ সহ) কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন এ অবস্থান করেছিলেন। অথচ শুধু মাত্র ২ মার্চ ছুটি নিয়ে ছুটির দরখাস্ত টেম্পারিং করে ৩ মার্চ দেখিয়ে ষ্টেশন ত্যাগ করেন। কিন্তু বিনা ছুটিতে ৪, ৫ মার্চ কক্সবাজারে থেকেছেন। যা পৃথিবীর কোন সংস্থায় সম্ভব না হলেও চট্টগ্রাম যানবাহন শাখায় সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, বিগত ১৮ এপ্রিল উক্ত ষ্টেশনের কর্মচারী জহিরুল ইসলাম বাবুর বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদানে জন্য ফেনী গিয়েছিলেন তিনি। কোন প্রকার ছুটি ও ষ্টেশন ত্যাগের অনুমতি ব্যতীত। গত বছর অক্টোবর মাস হতে চলতি বছরের পর্যন্ত ৬ মাস পূর্ববর্তী ৬ মাসের তুলনায় প্রায় ৭০ হাজার টাকার বেশী জ্বালানী ব্যয় হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ৫ জানুয়ারী নির্বাচন পূর্ব সহিংসতার প্রেক্ষিতে প্রায় ৪ মাস হরতাল/অবরোধের কারণে যানবাহন শাখায় রক্ষিত ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী ৭০ শতাংশ গাড়ী কম চলাচল করেছে।
কিন্তু গাড়ী কম চলাচলের কারণে ওভার টাইম প্রদানের হারে কোন হের-ফের হয়নি। সুন্দর ভাবে গণি মতের মালের মত ভাগাভাগি করে ওভার টাইম নিয়েছেন তিনি। আরো বিষ্ময়কর তথ্য হল বিমানে মাসে কত দিন হাজিরা থাকলে ৩২২ ঘন্টা অধিকাল নেওয়া যাবে তা নির্ধারিত না থাকায় বিগত ৬ মাসে উক্ত সুপার ভাইজার মাসে ১৫ দিন বা ১৬/১৭ দিন হাজিরা থাকলেও পূর্ণ অধিকাল আত্মতৃপ্তির সাথে নিয়েছেন। এমনকি ডিউটি করেছেন ১৬ দিন ওভার টাইম দেখিয়েছেন ১৫ দিন। যা তদন্ত করলে পাওয়া যাবে।
উক্ত সুপারভাইজার প্রায়ই ছুটি হতে যোগদানের দিন ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। উল্লেখ্য যে, ফ্লাইটে এসে রাতে ৮/৯ ঘটিকায়ও হাজিরা স্বাক্ষর করে ডিউটি দেখায়। চট্টগ্রামে যানবাহন শাখায় তদন্ত করলে এ ধরনের অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। বিগত ১৫ এপ্রিল বিজি ০২৭ ফ্লাইটে সন্ধ্যা ৭ টায় তিনি ঢাকা হতে চট্টগ্রামে এসে ডিউটি রোস্টারে স্বাক্ষর করেছেন।
গাড়ী নং ৫১-৫১৪১ একটি ট্যাং লরি কর্তৃক দূর্ঘটনায় কবলিত হওয়ায় মেরামতের জন্য চার হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছিল। কিন্তু বিমানের নিয়ম অনুযায়ী উক্ত টাকা খরচ না করে ২২০০ টাকা মেরামতের কাজ করে বাকী টাকা পকেটে ভরেছেন।
অভিযোগ রযেছে, সোনা চোরা কারবারীদের সহয়তা করার জন্য অপারেটর পলাশকে প্রায় তিনি এপ্রোন ডিউটিতে নিযুক্ত করতেন। প্রকৌশল শাখা হতে ফ্লাইট পার্কিং এলাকা চার বার গাড়ী যাওয়া আসা করলে ১ কিলোমিটার হতে পারে। সেক্ষেত্রে উক্ত অপারেটর এপ্রোন এলাকায় ১০/১২ কিলোমিটার গাড়ী কোথায় চালিয়ে ছিল তার ব্যাখ্যা জানা প্রয়োজন। ডিউটি রেজিষ্টার যাচাই করলে দেখা যাবে।
গত বছর ৬ ডিসেম্বর গাড়ী নং-১৯৫২ মাক্রোবাসে ৩০ মিনিটের ব্যবধানে ৬০ লিটার অকটেন গ্রহণ করেছেন। অথচ উক্ত গাড়ীর ফুয়েল ট্যাংক এর ধারণ ক্ষমতা ৫৫ লিটার এবং উক্ত গাড়ী অপারেটর ছিল পলাশ। জি-৫০২৭১ এবং হারুনুর রশিদ সি-১৫৫৮ এ উক্ত তথ্য যেন প্রকাশ না পায় তার জন্য ফুয়েল ইনডেন্ট বইতে তারিখ পিছিয়ে দেখা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে বিগত ৬ মাসে উক্ত সিডিউলিং সুপারভাইজার ১ দিনের জন্য ইউনিফর্ম পরিধান করেন নাই। যার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য কর্মচারীগণ ইউনিফর্ম পরিধানে অনিহা প্রকাশ করছে। উল্লেখ্য যে, ফুয়েল সংগ্রহের ডিউটি ¯øীপে অপরাধ হতে মুক্তির জন্য বহু কাটাকাটি করা হয়েছে।
উক্ত শাখায় কর্মরত কর্মচারী জহিরুল ইসলাম সি-০১৫১ ইচ্ছা হলে অফিসে আসে অন্যথায় আসে না। অফিসে এসে ২০ মিনিট বা আধা ঘন্টা থেকে চলে যান। এ বিষয়ে হাজিরা সীটে উক্ত কর্মচারীর নামের পাশে রিমার্ক হলে কোন ফলাফল দেখা যায় না। অন্য কর্মচারী মুকুল সি-০১৫০ (সহ মেকানিক) এয়ার পোর্টে বিকেলে থাকা আবশ্যিক ভাবে নিয়েছেন। হাজিরা প্রতিবেদনে দেখা যায় এ শিফ্ট এ (০৫০০-১৩০০) ঘটিকায় ডিউটি থাকলে বি শিফ্ট এ ইচ্ছা অনুযায়ী ওভার টাইমে থাকে।
আর বি শিফটে ডিউটি থাকলে কোন দিন কাজ থাকলেও সকালে ওটি কলে আসেন না। অর্থাৎ বিকালে কেন এয়ার পোর্টে নিয়মিত থাকতে চাই এর রহস্য উদঘাটন হওয়া দরকার। বিগত ২০ মার্চ সোনাসহ আটক ২জন সুইপার সুকলাল ও জীবন এর মোবাইল কল লিষ্টে সর্বশেষ ডায়াল কলে মুকুলের সাথে কথা বলার রেকট পাওয়া গেছে। রিমান্ডে ১৬৪ ধারায় মুকুলসহ আরও ২জনের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
পুলিশ সুত্রে জানাগেছে মুকুলের মোবাইল নং ০১৬৭০৮৮৯০৭৯/০১৭১২০২৯৬০২ জীবনের মোবাইল নং ০১৮২২৭২১৭৯২ সুকলাল এর মোবাইল নং ০১৭১৮০৭৯১১৮। মামলা নং ০৮ তারিখ ২০ মার্চ ২০১৪ পতেঙ্গা থানা , চট্টগ্রাম। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মুকুলের সেলারি একাউন্ট ও ব্যাক্তি গত একাউন্ট যাচাই করলে বহু অবৈধ টাকা লেন-দেনের তথ্য পাওয়া যাবে।
চট্টগ্রাম স্থানীয় হোটেল আগ্রাবাদ/পেনিনসুলা সাথে ক্রু পিক আপ ড্রপ সংক্রান্ত বিষয়ে চুক্তিতে উল্লেখ আছে যে চেক ইন এবং চেক আউটের ক্ষেত্রে হোটেল কর্তৃপক্ষ গাড়ী সরবরাহ করবে। যদি কোন কারণে হোটেল কর্তৃপক্ষ গাড়ী সরবরাহ করতে না পারে তবে বিমানের গাড়ী দিয়ে ক্রুদের পিক আপ ড্রপ করা হবে। যার প্রেক্ষিতে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিল হতে বিমারেন গাড়ী বাবদ নির্দিষ্ট টাকা কর্তন করা হবে।
অতীতে এ বিষয়ে বিল কর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে কোন এক অদৃশ্য কারণে উক্ত টাকা কর্তন করা হচ্ছে না। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর এবং চল বছর ২৩ মার্চ হোটেল আগ্রাবাদ ও পেনিনসুলা কর্তৃক গাড়ী সরবরাহ করতে না পারা সত্বেও বিল কর্তন করা হয় নাই। সংশ্লিষ্টরা বরেছেন, তদন্ত করলে এসব তথ্য পাওয়া যাবে। আর এতে বিমানের বিপুল অংকের টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলেও তারা জানান।
বিমান এয়ারপোর্ট কমপ্লেক্স এর পরিচ্ছন্নতার প্রত্যয়নকারী হিসেবে এম.টি ইনচার্জ এর স্বাক্ষর বিলে করার নিয়ম থাকলেও দেখা যায় মাত্র ১ জন ক্লিনার দ্বারা ২/৩ ঘন্টা কাজ করিয়ে ঠিকাদার হতে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে প্রত্যয়ন করে যাচ্ছে। বাস্তবে টয়লেট ড্রেন ও অন্যান্য স্থান খুবই অপরিস্কার। উল্লেখিত তথ্যাবলি পর্যায়লোচনা করলে সিডিউল সুপার ভাইজার আরিফ দূর্নীতি আর্থিক অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা চোরাকারবারীদের সহায়তা করে ভি.আর.এস এর পূর্বের ন্যায় লুটপাটের গড ফাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। যার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী।