চোরের মায়ের বড় গলা

ICCবাংলাদেশের বিপক্ষে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিলেও মোটেই অনুশোচনা নেই দুই আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড ও আলিম দারের; উল্টো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বর্তমান এবং বিসিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট আ হ ম মুস্তফা কামালের বিপক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা-ভাবনাও করছে তারা। আর বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরও এই দুই আম্পায়ারকে সমর্থন জানিয়েছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহি ডেভ রিচার্ডসন।

বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও ভারত। শক্তির বিচারে এগিয়ে থাকলেও ম্যাচে ভারতের সঙ্গে সমান তালেই লড়ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এক পর্যায়ে বাংলাদেশী বোলারদের বিপক্ষে সংগ্রামও করতে হচ্ছিল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু ইনিংসের ৩৪তম ও ৪০তম ওভারে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন দুই অনফিল্ড আম্পায়ার ইংল্যান্ডের ইয়ান গোল্ড ও পাকিস্তানের আলিম দার। এর একটি ছিল মাশরাফির বলে সুরেশ রায়না এলবিডব্লিউ আপিল এবং অপরটি ম্যাচের একমাত্র সেঞ্চরিয়ান রোহিত শর্মার ক্যাচ আউট হওয়া। টেলিভিশন রিপ্লেতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়েছে যে দুটি ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু সিদ্ধান্ত গেছে ভারতের পক্ষে।

এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস চলাকালেও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আম্পায়াররা। বাংলাদেশের ইন-ফর্ম ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের একটি হুক শট বাউন্ডারি লাইনে তালুবন্দী করেছিলেন ভারতীয় ফিল্ডার শেখর ধাওয়ান। কিন্তু সেই সময় বলটি হাতে থাকা অবস্থায় বাউন্ডারি লাইন টাচ করেছেন তিনি। নিয়ামানুযায়ী এটি ছয় হওয়ার কথা। অথচ তা না করে মাহমুদউল্লাহকে আউট দেওয়া হয়েছে। এ ৩টি সিদ্ধান্তের খেসারত হিসেবে ভারতের কাছে শেষ অবদি ১০৯ রানে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

ম্যাচশেষে তাই দেশে-বিদেশে বাংলাদেশীরা ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে এই দুই আম্পায়ার ও থার্ড আম্পায়ার স্টিভ ডেভিসের (অস্ট্রেলিয়া) বিপক্ষে। তীব্র সমালোচনা হয়েছে আইসিসিরও। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশের আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনিও ম্যাচশেষে আম্পায়ার ও আইসিসির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এখন দেখছি, আইসিসি মানে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। আমি ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের তো প্রতিনিধিত্ব করব না। এমন যোগ্যতাহীন আম্পায়ার দিয়ে ম্যাচ পরিচালনার করার বিষয়টিতে অবাক হয়েছি। আইসিসির পরবর্তী বৈঠকে আমি বিষয়টি উপস্থান করব। এর তদন্ত হওয়া উচিত। প্রয়োজন হলে আইসিসি থেকে পদত্যাগ করব আমি।’

মুস্তফা কামালের এমন মন্তব্যের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহি দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ডসন। তিনি বলেছেন, ‘মুস্তফা কামালের বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা দুঃখজনক। তিনি যা বলেছেন তা একান্তই তার ব্যক্তিগত মতামত, আইসিসির নয়। তিনি যে অভিযোগ করেছেন তা ভিত্তিহীন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের সংস্থা ও এর এলিট প্যানেল আম্পায়ারদের বিপক্ষে সমালোচনা করার ক্ষেত্রে তার সতর্ক মন্তব্য করা উচিত ছিল।’

আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে রিচার্ডসন বলেছেন, ‘আম্পায়ারদের সততা নিয়ে প্রশ্ন করা চলে না। রুবেলের বিপেক্ষ ‘নো-বল’ কলটি ছিল ৫০-৫০ সম্ভবনার। ক্রিকেটের স্পিরিট বলে, আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং তা অবশ্যই সম্মান করতে হবে।’

এদিকে, অস্ট্রেলিয়ান পত্র-পত্রিকার দেওয়া সংবাদানুযায়ী, আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছে ইয়ান গোল্ড ও আলিম দার। এই বিষয়ে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিবে কিনা তাও আলোচনা চলছে। আইসিসি প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে নিজেদের জন্য সম্মানহানীকর হিসেবেই দেখছেন তারা।

আইসিসি কিংবা দুই আম্পায়ার কি করবেন, তা সময়ে বলে দিবে। তবে তারা যাই করুন না কেন, বাংলাদেশীদের কাছে তাদের এ সব কর্মকাণ্ড ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ হিসেবেই বিবেচিত হবে নিঃসন্দেহে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.