আল্পসে বিধ্বস্ত জার্মান প্লেন, দুর্ঘটনা না অন্য কিছু ?

germenwing_bঢাকা: ফ্রান্সের আল্পস এলাকায় দেড়শ’ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত প্লেনটি কেন দুর্ঘটনার শিকার হলো, তার উত্তর খুঁজতে বেশ গলদঘর্মই হতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। ঘটনার দিন আকাশ ছিল পরিষ্কার, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনো লক্ষণ ছিল না, তবু প্রায় ৩৮ হাজার ফুট উপর থেকে খসে পড়ে ফ্লাইট-৯৫২৫।

ঘটনাস্থল থেকে খুঁজে পাওয়া প্রথম ব্ল্যাকবক্স থেকে উদ্ধার করা গেছে খুবই কম তথ্য। কিন্তু সেই সামান্য তথ্যটুকুই প্লেন বিধ্বস্তের ঘটনায় রহস্যের চাদর আরো গাঢ় করে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মনে এখন প্রশ্ন, এ ঘটনা নিছক একটি দুর্ঘটনা নাকি আত্মঘাতী হামলা?

১৮টি দেশের দেড়শ’ আরোহী নিয়ে স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জার্মানির ডুসেলডর্ফ যাওয়ার পথে ফ্রান্সের আল্পস এলাকায় ডিজনির কাছে মঙ্গলবার বিধ্বস্ত হয় লুফথানসা বিমান সংস্থার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জার্মানউইংয়ের এ-৩২০ প্লেন।

জার্মানউইং জানিয়েছে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ছয় হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা অবস্থায় রাডারের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় প্লেনটির। এরপর এটি ৩৮ হাজার ফুট উপরে ওঠে। তারপরই মাত্র আট মিনিটে খসে পড়ে আল্পসে বিধ্বস্ত হয় এটি।

তবে ফ্লাইট-৯৫২৫ এর ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের পর চমকে দেওয়ার মতো তথ্য পাওয়া গেছে।

দুর্ঘটনার আগে এর একজন পাইলট ককপিটের বাইরে আটকা পড়ে গিয়েছিলো বলে ব্ল্যাকবক্সে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।

ব্ল্যাকবক্সে প্রাপ্ত রেকর্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক সেনা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই সংবাদপত্রকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্লেনটি বার্সেলোনা থেকে ওড়ার সময় দুই পাইলটের মধ্যে স্বাভাবিক কথাবার্তা চলছিল। এরপরই অডিও শুনে বোঝা গেল, একজন পাইলট ককপিটের বাইরে। তিনি ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু পারছেন না।

তিনি বলেন, ব্ল্যাকবক্সের রেকর্ডে প্রথমে আমরা ককপিটের দরজায় মৃদু করাঘাতের আওয়াজ পাই। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। এরপর বাইরের পাইলট জোরে জোরে করাঘাত করতে শুরু করেন। তখনো কোনো সাড়া দেননি ভেতরের পাইলট।

জানা গেছে, দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট এয়ারবাস এ-৩২০’য়ে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। এমনকি পতনের আট মিনিটেও এর কোনো ইঞ্জিন বিকল হয়নি। প্লেনটি সরাসরি আল্পসে আঘাত হেনে বিধ্বস্ত হয় বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্তকারীরা।

প্রথম ব্ল্যাকবক্সে প্রাপ্ত তথ্যের অর্থ দাঁড়ায়, শেষ মুহূর্তে একজন পাইলটই ককপিটের ভেতরে ছিলেন। এ কারণে এই ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলেও উড়িয়ে দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারা সন্দেহ পোষণও করেছেন, প্লেন বিধ্বস্তের ঘটনাটি একটি আত্মঘাতী ঘটনাও হতে পারে।

গত বুধবার (২৫ মার্চ) ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা বিধ্বস্ত প্লেনটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করেছে।

তবে এর বাইরের আবরণ ভেঙ্গে গেছে। এই ব্ল্যাকবক্সে শুধুমাত্র একজন পাইলটের ককপিটের বাইরে আটকা পড়ার বিষয়টি জানা গেছে। বাকি রহস্য উন্মোচনে দ্বিতীয় ব্ল্যাকবক্সের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে অনুসন্ধান ও তদন্তকাজে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের। তবে দ্বিতীয় ব্ল্যাকবক্সটি এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে লুফথানসার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কার্সটেন স্পোর।

এদিকে উদ্ধার কাজ ও তদন্ত কাজে নিয়োজিতদের ফ্রান্সের আল্পস এলাকায় কাজ চালিয়ে যেতেও বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। বন্ধুর এই জায়গায় সরাসরি সড়কপথে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। উদ্ধারকাজে একমাত্র অবলম্বন হেলিকপ্টার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.