এভিয়েশন নিউজ, ঢাকা : শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিলো জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ(জেএমবি)। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর মতো জেএমবি সদস্যরা নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে চেয়েছিলো। মাস খানেক আগে বিমান বন্দরের অদূরে দক্ষিণখানে বাসা ভাড়া নিয়ে পরীক্ষিত সদস্যদের একত্রিত করছিলেন জেএমবি’র এহসার সদস্য আঃ রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুন। নাশকতার জন্য গ্রেনেডসহ পর্যাপ্ত বিস্ফোরকও সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। কিন্তু একটি মোবাইল কল তার নাশকতার এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। প্রায় দেড় মাস আগে সন্দেহজনক ওই মোবাইল কল ট্র্যাকিংয়ের পর র্যাবের গোয়েন্দারা পিছু নেয় জেএমবি’র চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর এবং এহসার সদস্য আঃ রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুনের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে মামুন ও তার তিন সহযোগীকে। গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির নাশকতার এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছে র্যাব।
র্যাব ইন্টেলিন্স উইংয়ের একটি সূত্র বলেছে, চট্রগ্রামের পাহাড়ে জেএমবির অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিযানের সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনের ওই সূত্র ধরেই সন্ধান মেলে মামুনের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর দক্ষিণখানে পূর্ব মোল্লারটেক প্রেমবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে। মামুন ছাড়া গ্রেফতার হওয়া অপর তিনজন হলেন-জেএমবির নওগাঁ জেলার আমীর এবং গায়েরে এহসার সদস্য জিয়াউল বারী ওরফে ডালিম, জেএমবি’র দিনাজপুর জেলার আমীর ও এহসার সদস্য মোঃ কোরবান আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী ওরফে হাঞ্জালা, জেএমবির রংপুর জেলার অর্থ সম্পাদক ও গায়েরে এহসার সদস্য মোঃ মোফাজ্জল হোসেন । গ্রেফতারকৃতদের বয়স ৩২ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। র্যাব সদস্যরা এসময় তাদের কাছ থেকে আর্জেস গ্রেনেড, হাতবোমা ও পেট্রল বোমা ও বিপুল পরিমাণ শক্তিশালী বিস্ফোরক উদ্ধার করে র্যাব সদস্যরা। বৃহস্পতিবার রাতের ওই অভিযানে অংশ নেয়া র্যাবের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে মামুন গ্রেনেড বিস্ফোরণের হুমকি দিয়েছিলেন। গ্রেনেড হাতে তেড়ে এসেছিলেন র্যাব সদস্যদের দিকে। প্রায় ঘণ্টা খানেক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির পর তাকে মানষিকভাবে দূর্বল করে কৌশলে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যরা চলতি মাসেই বাংলাদেশ বিমানের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রবের প্রেমবাগান এলাকার ৩ নম্বর বাড়িটি ভাড়া নেয়। তারা পরিকল্পিতভাবে রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা করার জন্য ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে একত্রিত হয়েছিল। র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই জেএমবি’র এ চক্রটি র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারীতে ছিলো।
শুক্রবার সকালে দক্ষিণখানের মোল্লারটেক প্রেমবাগান এলাকার ওই বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিচয় গোপন করে চলতি মাসেই ওপরে টিনশেড দুই রুমের ওই বাড়িটি সাত হাজার টাকায় ভাড়া নেন আঃ রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুন। ওই বাড়িতে গ্রেফতারকৃত চারজন ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। এমনকি ঘরে একটি মাত্র চৌকি ছাড়া কোন আসবাবপত্রও দেখা যায়নি। রান্নাঘরে একটি গ্যাসের চুলা, তার ওপর পাতিলে ভাত ও মেঝেতে রান্না করা মুরগির মাংশের তরকারি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো চাল, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা।
টিনশেড ওই বাড়ির বাড়ির দুটি কক্ষে থাকতেন জেএমবি সদস্যরা। একটি কক্ষে শুধু একটি কাঠের চৌকি। উদ্ধার বিস্ফোরকগুলো সেখানে রাখা ছিলো। পাশের কক্ষের দেওয়ালে ঝুলছিল একটি সবুজ রংয়ের পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা।
বাড়িটিটির মালিক বাংলাদেশ বিমানের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুর রউফের স্ত্রী হুসনে আরা বেগম ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাশেই একই ধরনের একটি আধাপাকা বাসায় থাকেন। হুসনে আরা বেগম শুক্রবার যুগান্তরকে জানান, গ্রেফতারকৃতদের একজন নিজেকে মামুন এবং গার্মেন্ট ব্যবসায়ী পরিচয়ে বাড়িটি ভাড়া নেন। ওই সময় তিনি জানান, তিনি তার পরিবার নিয়েই ওই বাসায় থাকবেন। তবে স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা হওয়ায় এখনই তিনি আসবেন না। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তিনি ঢাকায় আসবেন।
র্যাব সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে তাদের নাশকতার একটি পরিকল্পনার ছক পাওয়া গেছে। এরমধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ স্থাপনায় হামলা করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর মতো জেএমবি সদস্যরাও নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে চেয়েছিলো। এ জন্য তারা বিমান বন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় নতুন করে ঘাঁটি তৈরী করে। এর আগে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিমান বন্দরে বিমান বন্দরে ড্রোন হামলার পরিকল্পনা করে। তবে তার আগেই গোয়েন্দাদের ফাঁদে পড়ে জঙ্গিরা।
যেভাবে গ্রেফতার
চার জেএমবি নেতাকে গ্রেফতার করতে র্যাবের একটি চৌকষ দল অংশ নেয়। এই অভিযানে অংশ নেয়া র্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, রাত একটার কিছু পরে র্যাবের দলটি ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এর আগে র্যাবের আরেকটি দল বাড়িটি রেকি করে। অভিযান পরিচালনার আগেই তাদের কাছে তথ্য ছিলো ওই বাড়িতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে। এ কারণে তারা অভিযান পরিচালনার ক্ষেেেত্র সাবধানতা অবলম্বন করেন।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে দরজা খুলেই মামুন বেরিয়ে আসে। এসময় সে গ্রেণেড হাতে হুংকার দিয়ে সামনে এলেই গ্রেনেডটি বিস্ফোরণ ঘটানোর হুমকি দেয়। তার এ হুমকিতে প্রথম দিকে র্যাব সদস্যরা কিছুটা পিছু হটে এবং কৌশলের আশ্রয় নেয়। র্যাব সদস্যরা দূর থেকে মামুনকে গ্রেনেডের ভয়াবহতা সম্পর্কে বোঝাতে থাকেন। এসময় র্যাব কর্মকর্তারা মামুনকে বলেন, গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটালে তিনিও মারা যাবেন। গ্রেনেডের পিন না খুলতে অনুরোধ জানিয়ে র্যাব কর্মকর্তারা মামুনকে বিভিন্ন প্রতিশ্র“তি দিতে থাকেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক এভাবে বোঝানোর পর মামুন দূর্বল হয়ে পড়েন। এর পর রাত আড়াইটার দিকে মামুন ও তার অপর তিন সঙ্গিকে গ্রেফতারে সফল হয় র্যাব সদস্যরা।
মোবাইল কলের সূত্র ধরে গ্রেফতার
র্যাব ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রায় দেড় মাস আগে সন্দেহজনক একটি মোবাইল কলের সূত্র ধরেই আব্দুর রাজ্জাক ওরফে মামুনের পিছু নেয় র্যাব সদস্যরা। ওই মোবাইল কলে মামুন অপর একজনকে সাংকেতিক ভাষায় বলছিলেন, মাংশ রান্না করবো, যত দ্রুত পারো মসলা জোগাড় করো। অপর প্রান্তে ওই ব্যক্তি কি পরিমাণ মশলা প্রয়োজন তা জানতে চাইলে মামন জানান, ১৫ থেকে ২০ কেজি হলেই চলবে। মশলার পরিমাণের তথ্য শুনে র্যবি সদস্যদের সন্দেহ দানা বাঁধে। এছাড়া ওই মোবাইল ফোনে জ্যাম. জেলিসহ সাংকেতিক ভাষায় আরও কিছু বিস্ফোরকের নাম বলা হয়। র্যাব ইন্টেলিন্স উইংয়ের একটি সূত্র বলেছে, চট্রগ্রামের পাহাড়ে জেএমবির অস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অভিযানের সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া মোবাইল ফোনের ওই সূত্র ধরেই সন্ধান মেলে মামুনের। পরবর্তীতে কল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণখানের মোল্লারটেক এলাকায় মামুনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় র্যাব সদস্যরা। প্রায় দেড় মাস চেষ্টার পর অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অভিযানে নামে র্যাব সদস্যরা।
বিস্ফোরকসহ উদ্ধারকৃত সরঞ্জাম
র্যাব সদস্যরা ওই বাড়ি থেকে ১টি তাজা আরজেস গ্রেনেড, ৩৪টি নন-ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ১৪টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ৩০মিটার করডেক্স, আড়াই কেজি স্প্রিনটার, আধা কেজি গান পাউডার, ১কেজি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসভ, ৬টি বড় ককটেল, ২৪টি ছোট ককটেল, ১২টি পেট্রল বোমা, ২কেজি কাচের মারবেল, আধা কেজি সালফিউরিক এসিড, ১টি ডেটোনেটর বক্স, এক বান্ডেল ইলেক্ট্রনিক তারসহ অস্ত্র প্রশিক্ষণের বই ও নাম সম্বলিত বিপুল পরিমান জিহাদী বই উদ্ধার করে র্যাব সদস্যরা।
র্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, উদ্ধার করা বিস্ফোরক দিয়ে অন্তত অর্ধশত বড় ধরণের বোমা তৈরী সম্ভব ছিলো। আর এসব বোমায় হাজার খানেক মানুষের প্রাণহানী ঘটানো যেতো। আর আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণে দুই শত গজের অভ্যন্তরে থাকা মানুষ হতাহত হতে পারতেন।
পাথর ভাঙ্গার শ্রমিক থেকে জঙ্গি নেতা
কুরবান আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী ওরফে হানযালা। বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। তার পিতার নাম মৃত আব্দুল বাকী। ১৯৮৩ সালে ধর্মজাইন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনী এবং ১৯৮৮ সালে কামদেবপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে। ১৯৯০ সালে খানসামা আলিয়া মাদ্রাসা সে আলীম ভর্তি হলে ফেল করার পর বাবার সংসারে কৃষিকাজে নিয়োজিত হয়। পাশাপাশি পাথর ভাঙ্গার কাজও করতো। একই গ্রামের নকিব উদ্দিনের ছেলে বেলাল উদ্দিনের সঙ্গে সে পাথর ভাঙ্গার কাজে ভারতের হরিয়ানা গিয়ে ৩/৪ বছর অবস্থান করে। ১৯৯৭ সালে ভারতের হরিয়ানা থেকে দেশে ফিরে এসে পুনরায় পিতার সংসারে কাজ করতে থাকে। ২০০০ সালে তার পূর্ব পরিচিত (প্রেমের সম্পর্ক ধরে) একই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ৩য় কন্যা (তালাকপ্রাপ্ত) মুসফিকাকে বিয়ে করে। বিয়ের ১ মাস পরে দপ্তরিপাড়া মসজিদে মোয়াজ্জিনের চাকুরী যোগদান করে। সে ৩/৪ মাস পরে গ্রামের বাড়ী থেকে তার স্ত্রীকে নিজের কাছে (দপ্তরি পাড়া) নিয়ে আসে এবং বসবাস করতে থাকে।
র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর হানযালার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চাকুরী করাকালীন সময়ে হাবিব নামের এক লোকের মাধ্যমে একটি ফলের দোকানে চাকরি নেয়। এর কিছু দিন পরে সে হাবিবের দেয়া ভাড়া বাসায় উঠে। এই বাসা থেকে রংপুর পুলিশ জেএমবি সন্দেহে তাকে আটক করে। সে ১ বছর জেল হাজতে থাকার পড়ে ২০০৭ সালে জামিন লাভ করে। পরে নিজের সাইকেল বিক্রি করে নবাবগঞ্জ থানাধীন ভাদুরিয়ায় একদল রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে সে কাজ করতে থাকে। ৪/৫ দিন কাজ করার পড় এই দলের সঙ্গে সে ঢাকায় এসে গাবতলীতে ১৫/১৬ দিন রাজমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করে। সেখান থেকে পুনরায় ভারতের হরিয়ানায় পালিয়ে গিয়ে আনার দেশে এসে জেএমবি’র এহসার পদ লাভ করে। বর্তমানে সে জেএমবি’র দিনাজপুর জেলার আমিরের দায়িত্ব পালন করে আসছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, অন্যান্য জেএমবি সদস্যদের সহয়তায় জেএমবি সংগঠনকে পূনরায় সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জেএমবি সদস্যদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের কাছ থেকে ইয়ানত সংগ্রহের কার্যক্রম হাতে নেয়। এদিকে, দিনাজুপর জেলা পুলিশের ২২ তালিকাভুক্ত জঙ্গির একজন হানযালা। বিএনপি-জামায়াতের আমলে দিনাজপুরের ছোট গুলগুলায় যে জঙ্গিদের ছাত্রবাসের আঁড়ালে কার্যক্রম চলতো হানযালা এতে নেতৃত্ব দিতো। জাহানাবাদ থেকে তাকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। পরে সে জামিনের পর আতœগোপন করে।
যার হাতে বাইতুল মালের দায়িত্ব
র্যাবের হাতে গ্রেফতার জঙ্গি মোফাজ্জল হোসেন। বয়স আনুমানিক ২২ বছর। তার পিতার নাম মাহতাব আলী, সে ১৯৯৫ সালে দিনাজপুর জেলার চিরির বন্দর থানাধীন বড় হাশেমপুর গ্রামে জš§গ্রহন করে। সে ২০০৭ সালে নিজ গ্রামে ব্র্যাক স্কুল থেকে ৫ম শ্রেনী, ২০১২ সালে জতরামদনপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে। এরপর সে ২০১২ সালে দিনাজপুর পলিটেকনিকে ভর্তি হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জাানায়, ২০১৪ সালে রমজান মাসের আগে কলেজের সামনে রাজ্জাকের সঙ্গে বই পড়ার বিষয় নিয়ে প্রথম পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাদের দুজনের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। একদিন রাজ্জাক তাকে জানায় যে, তার কাছে আহলে-হাদিস সহ সহী বই আছে। এই সকল বই পড়ে তাকে জ্ঞান অর্জন করতে বলে। ভালো সম্পর্ক থাকার কারনে মোফাজ্জলও রাজ্জাকের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে থাকে। ভালো সম্পর্কের সুযোগে আঃ রাজ্জাক তাকে জেএমবি’তে যোগদানের লক্ষ্যে সম্পর্ক গভীর করতে থাকে। সে তার কলেজে আসলেই রাজ্জাকের সঙ্গে দেখা করতো এবং তাদের মধ্যে জেএমবি’র বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হতো। সে মূলতঃ জেএমবি সদস্যদের নিকট হতে উত্তেলোনকৃত চাঁদার (বাইতুল মাল) টাকা সংরক্ষনের দায়িত্বে ছিল। এছাড়াও দলীয় নেতাদের নির্দেশে উক্ত উত্তেলোনকৃত চাঁদার (বাইতুল মাল) টাকা সংগঠনের বিভিন্ন কাজে খরচ করতো।
মাষ্টার্স পাশ ডালিম যেভাবে জঙ্গিতে
জিয়াউল বারী ওরফে ডালিম। বয়স আনুমানিক ৩৩ বছর। তার পিতার নাম আঃ রহমান, সে ১৯৮২ সালে নঁওগা জেলার নিয়ামতপুর থানাধীন পরানপুর গ্রামে জš§গ্রহন করে। সে ১৯৯৩ সালে শিবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনী, ১৯৯৮ সালে কাপাসটিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৩ সালে শাহ পাহাড় সরকারী কলেজ, নঁওগা থেকে এইচএসসি, ২০০৭ সালে শাহ পাহাড় সরকারী কলেজ, নঁওগা থেকে বিএসসি এবং ২০১২ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে মাষ্টার্স পাশ করে। এ সময় সে নিজ বাড়ী নঁওগায় নিয়ামতপুরের পরানপুরই থাকতো। ২০০৩ সালে এইচএসসি পাশ করার পর তার এলাকার হযরত, জহুরুল, হাসান ও আবু তাহেরসহ কয়েকজন বন্ধু তখন থেকেই জেএমবি’র সংগঠনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ২০১৪ সালের রমজান মাসের আগে নঁওগার মান্দা থানা এলাকায় তার বিয়ের ঘটক জহুরুলে মাধ্যমে হানযালার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই সময় থেকে সে রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকায় জেএমবি’র দাওয়াতী কাজ করছে। পরে গায়েরে এহসার ও নওগাঁ জেলা আমীরের দায়িত্ব পালন করছে।
রাজ্জাকের অভাবের সুযোগ নেয় জাহাঙ্গীর
আব্দুর রাজ্জাক হায়দার মামুন। বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। তার পিতার নাম মোঃ সাইফুদ্দিন। সে ১৯৮০ সালে দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানাধীন মহাজেরপুর গ্রামে জš§গ্রহন করে। ১৯৯৫ সালে জাহানপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনী এবং ২০০০ সালে রঘুনাথপুর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে। এরপর সংসারের অভাব অনটনের কারনে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বাবার সংসারে সে কৃষিকাজ করতো। ২০০৫ সালে একই গ্রামের রবিউল ইসলামের ৩য় কন্যা জান্নাতুনকে বিয়ে করে। ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে তার বড় ছেলে আরিফ এর পা আগুনে পুড়ে গেলে ছেলেকে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য ২/৩ মাস থাকতে হয়। এই সময় হাসপাতালে তার ছেলের বেডের পার্শ্বের রোগীর আতœীয় নীলফামারী সদরের জাহাঙ্গীরের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তার ছেলের চিকিৎসায় রক্ত যোগাড় এবং ওষুধ বাবদ ৬/৭ হাজার টাকা দেয়। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর তাকে জেএমবিতে যোগ দেয়ার বিষয়ে উদ্ধুদ্ধ করে। ২০০৯ সালে ফেব্র“য়ারি মাসে প্রথমে জেএমবি’র সাংগঠনিক কাজে রাজশাহীতে যায়। রাজশাহীতে জাহাঙ্গীরের কথামতো আঃ রহিম নামের এক লোকের সঙ্গে সে জেএমবি সংগঠনের কাজে জড়িয়ে পড়ে। আরও স্বীকার করে, ২০০৯ সালে অক্টোবর মাসে রাজশাহী তেরখাদিয়া ভাড়া বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় তা সঙ্গে সাহাবুদ্দিন, মুনতাস, হাফেজ আসাদুল, আঃ রহিমকে তাদের বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের মে মাসে জামিনে বের হয়ে বাড়ীতে আসার ৩ মাস পরে মাদ্রাসা কোচিং সেন্টার শুরু করে। ২০১২ সালে বিরল তৈয়বপুর মসজিদে ইমাম হিসাবে চাকুরী নেয়। সেখানে চাকুরী চলাকালীন সময় হানযালাসহ কয়েক জনের সাথে জেএমবির’র বিষয়ে সম্পর্ক গড়ে উঠে। তখন থেকে হানযালা, মোফাজ্জল, খালেক ও সে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঘুরে ঘুরে জেএমবি সংগঠনের কাজে দাওয়াত দেয়।