মাঈনুল ইসলাম নাসিম : উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ২০১৫-২০১৭ মেয়াদে তিন বছরে সাড়ে ৩শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে দক্ষিণ কোরিয়া। এর মধ্য দিয়ে দেশটির শীর্ষ ৩ উন্নয়ন সহযোগী দেশের তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে বাংলাদেশ। আগের টার্মে অর্থাৎ ২০১২-২০১৪ মেয়াদে এর পরিমাণ ছিল ২৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবারের ৩৫০ মিলিয়নের সুসংবাদটি ১৮ মার্চ বুধবার এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন সিউলে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স খন্দকার মাসুদুল আলম। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন দক্ষিণ কোরিয়া-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানান বিষয়াদি।
চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স খন্দকার মাসুদুল আলম জানান, দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের এই ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তা থেকে ১৩০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় হবে রাজধানী ঢাকার শাহবাগে ‘বিশেষায়িত ও বহুমুখী’ চিকিৎসার সুবিধা সম্বলিত এক হাজার শয্যার নতুন আরেকটি হাসপাতাল নির্মাণে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ এর আগে সিদ্ধান্ত নেয় নতুন ঐ হাসপাতাল নির্মাণের। প্রসঙ্গতঃ বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউ ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এতে বর্তমানে দেড় হাজার শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। বিএসএমএমই’র নতুন হাসপাতালের জন্য ১৩০ মিলিয়ন ছাড়াও চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্পে ৯৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়াতে বাংলাদেশী পন্যের বাজার সম্প্রসারণে নিরলসভাবে কাজ করছে সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস। চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জানান, ২০১৪ সালে ৩৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের পন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় রফতানি করে বাংলাদেশ, পরিমাণে যা ২০০৯ সালের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া পন্যের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগের বেশি যথারীতি আরএমজি তথা রেডিমেইড গার্মেন্টস। ৩০ ভাগের বেশি চামড়াজাত পন্য এবং বাদবাকির মধ্যে রয়েছে ফ্রোজেন ফুড সহ অন্যান্য সামগ্রী। একই সময় অর্থাৎ ২০১৪ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করে ১.২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ পন্য।
দু’বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশের আমদানী ১.৫ বিলিয়ন ডলার থাকলেও সাম্প্রতিককালে চাইনিজ মেশিনারিজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের বাজারে। এর প্রভাবেই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানীর পরিমাণ গত বছর প্রায় আড়াইশ’ মিলিয়ন ইউএস ডলার হ্রাস পায়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ ও জুতা উৎপাদন কারখানাগুলোতে বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। প্রায় ২শ’ কোরিয়ান কোম্পানি কাজ করছে এখন বাংলাদেশে। পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই মজবুত হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
১৪ হাজার বাংলাদেশীর বসবাস বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়াতে। অদক্ষ-আধাদক্ষ হলেও প্রায় ১১ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক সুনামের সাথে কাজ করছেন নির্মাণ, উৎপাদন, সেবা, কৃষি, মৎস্য, পোল্ট্রি সহ অন্যান্য সেক্টরে। ৯শ’ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছেন দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ছোট-বড় ব্যবসায়ী হিসেবেও অনেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এখানে। শুধুমাত্র সরকারীভাবে ‘ইপিএস’ স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ থেকে অত্যন্ত সীমিত আকারে অদক্ষ শ্রমিক আমদানি করে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। গত ২ বছরে ২ হাজার করে প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান হয় দেশটিতে। ‘স্কিল্ড’ তথা দক্ষ জনশক্তির বিশেষ চাহিদা রয়েছে এখানে, তবে ভাষাগত দুর্বলতার কারণে তা ততোটা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশীরা।
২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যা ছিল গত ২০ বছরে দেশটিতে বাংলাদেশের কোন সরকার প্রধানের একমাত্র সফর। ১৩ বছর আগে ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ ঢাকা সফর করেন। এদিকে সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসে সবশেষ রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পেশাদার কূটনীতিক এনামুল কবির। এখানে আড়াই বছর দায়িত্বে থাকার পর গত ডিসেম্বরে অবসরে যান তিনি। নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরেক পেশাদার কূটনীতিক জুলফিকার রহমানের নাম ঘোষণা করে ঢাকার পররাষ্ট্র দফতর। এরপর প্রায় দু’মাস অতিবাহিত হতে চললেও তুরষ্কের আংকারা থেকে এখনো সিউলে যোগদান করতে পারেননি নয়া রাষ্ট্রদূত।