বিমানবন্দরে বসছে ফোন ট্র্যাকিং মেশিন, তল্লাশিতে ডগ স্কোয়াড

Phone-Trackingতাওহিদুল মাওলা, সিনিয়র রিপোর্টার, এভিয়েশন নিউজ: দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানের ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে কাস্টমসসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে সংস্থাগুলোর কর্তাব্যক্তিরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। শাহজালাল ও শাহ আমানত বিমানবন্দর চোরাচালানের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।

প্রতিনিয়তই উদ্ধার হচ্ছে সোনা ও মুদ্রার বড় চালান। গতকাল শনিবারও ১০৬ কেজি সোনার চালান আটক হয়েছে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হচ্ছে, থানায় মামলাও হচ্ছে। কিন্তু তার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না চোরাকারবারীদের তৎপরতা। পুলিশ-র‌্যাবের চেয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সোনা চোরাকারবারিদের ধরতে একের পর এক সফলতা দেখাচ্ছে। সফলতা দেখাতে গিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই এখন অনেকটা নিরাপত্তাহীন।

তাঁরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য তিন প্লাটুন বিশেষ আনসার ও ডগ স্কোয়াড চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। এর পাশাপাশি চোরাকারবারিদের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করতে বিমানবন্দরে বসানো হচ্ছে অত্যাধুনিক মেশিন।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, ‘চোরাচালান প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি কাস্টমস গোয়েন্দারা বিশেষ অভিযান চালিয়ে সফলতা পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে একাধিক সোনা ও মুদ্রার চালান আটক করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য গানম্যান হিসেবে তিন প্লাটুন বিশেষ আনসার চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াড ব্যবহারেরও চেষ্টা চলছে।’

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে দেশি ও আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। বড় বড় সোনা ও মুদ্রার চালান পাচার করে অনেকেই আজ কোটিপতি। কয়েক মাস ধরে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সোনা আমদানি নিষিদ্ধ থাকায় বেকায়দায় পড়ে চোরাকারবারিরা। তারা এখন বাংলাদেশ দিয়ে সোনার চালান ভারতে পাঠাচ্ছে। এর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে শাহজালাল ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে। চোরাকারবারিরা স্থানীয় এজেন্টদের ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করছে। চোরাচালান বেড়ে যাওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নানা উদ্যোগ নিয়েছে। র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর দুটি বিমানবন্দরে প্রতিনিয়ত বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু তারা লজিস্টিক সাপোর্ট পাচ্ছে না।

অন্যান্য সংস্থার চেয়ে তাদের জনবল অনেক কম। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিও তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ কোনো অভিযানে গেলে তাদের সঙ্গে থাকে না কোনো গানম্যান। আবার লাগেজ তল্লাশির জন্য নেই প্রশিক্ষিত ডগ স্কোয়াড। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকার জন্য দুই প্লাটুন ও চট্টগ্রামের জন্য এক প্লাটুন বিশেষ আনসার চেয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আবেদনটি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। আশা করছি আগামী তিন মাসের মধ্যে ডগ স্কোয়াড ও গানম্যান হিসেবে বিশেষ আনসারকে মাঠে নামানো যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশেষ আনসারের সদস্যরা চোরাকারবারিদের ধরতে পারবে। স্ক্যানিং মেশিনের পাশাপাশি ডগ স্কোয়াড দিয়ে লাগেজ-ব্যাগেজ তল্লাশি করা হবে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমাদের ১২৮ জন ইন্সপেক্টর থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২২ জন। অভিযানের সময় সবাইকে পাওয়া যায় না। থানায় চোরাচালান মামলা করার পর নিজস্বভাবে তদন্ত করা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। ফলে আসামিরা সহজেই পার পেয়ে যায়। কাস্টমসের গোয়েন্দারা যাতে নিজস্ব গতিতে মামলার তদন্ত করতে পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’

সূত্র জানায়, চোরাকারবারিদের মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করতে দুটি বিমানবন্দরে উন্নতমানের মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিমানবন্দরের পাশাপাশি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরেও থাকবে ট্র্যাকিং মেশিন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চোরাচালান প্রতিরোধে শুল্ক গোয়েন্দাদের আবেদন ইতিবাচকভাবে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের গানম্যান হিসেবে বিশেষ আনসার দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁদের ডগ স্কোয়াডও দেওয়া হবে।’

– তাওহিদুল মাওলা

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.