মুদ্রাপাচারে সক্রিয় দেশি-বিদেশি সুদর্শন যুবক চক্র

money20161223101203মুদ্রাপাচারে স্মার্ট ও সুদর্শন তরুণদের ব্যবহার করা হচ্ছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মুদ্রাপাচার সিন্ডিকেটে জড়িত ২৫টি দেশি-বিদেশি সুদর্শন যুবকের সংঘবদ্ধ চক্র। গত তিন বছর মুদ্রাপাচারে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশের বয়স ৩০ এর নিচে। কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও এপিবিএনের নজরদারির মধ্যেই বেশ কয়েকজন যুবক ধরা পড়ার আগে ৩০-৪০ মুদ্রাপাচারের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মুদ্রাপাচারের সঙ্গে কিছু মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রাপাচারে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রেড লিংক, ইন্টারপোর্ট, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হিমালয় ট্রেড, তাহেরা ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস।

কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা ও এপিবিএন সূত্রে জানা গেছে, শাহজালাল বিমানবন্দরকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চক্রের সদস্যরা। অনেকে মুদ্রার চালান নিয়ে যান, ফেরেন স্বর্ণের চালান নিয়ে। চালান ধরা পড়লেও তা একেবারেই কম।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর জানায়, চলতি বছরের ২১ অক্টোবর রাতে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নজরদারির কারণে দুবাইগামী ফ্লাইটের যাত্রী শহীদুল আলমকে গ্রিন চ্যানেল এলাকায় আটক করা হয়। পরে তার কাছে থাকা দুটি ট্রলির ভেতরে সুকৌশলে স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে স্তরে স্তরে বিদেশি মুদ্রা লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায়, যার মধ্যে ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ২০৫ সৌদি রিয়াল ও ৩১ হাজার ৫৭ দিরহাম। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য ৩২ লাখ টাকা।

ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে শহীদুল আলম জানান, তিনি চলতি বছরই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে অন্তত ৪০ বার দুবাই আসা-যাওয়া করেছেন। কিন্তু এর আগে কখনও তিনি বিমানবন্দরে ধরা পড়েননি। একইভাবে গত বছরের ১৭ জুন আবদুল কাদির নামের সিঙ্গাপুরগামী এক তরুণ যাত্রীকে বিমানবন্দরের ৩ নম্বর বহির্গমন গেটে আর্মড পুলিশের এক সদস্যের সন্দেহ হয়। লাগেজসহ তাকে আটক করে তল্লাশি করা হয়। এ সময় লাগেজের নিচের কাপড় ও কার্বন দিয়ে মোড়ানো স্তরে স্তরে সাজানো ও দুই পায়ের সঙ্গে বাঁধা এবং জুতার ভেতর থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়।

ওই বছরেরই ২৭ এপ্রিল বিমানবন্দরের কার্গোর রফতানি শাখায় সবজির কার্টনে প্রায় কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এরও আগে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টাকার সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রাসহ একজনকে আটক করে বিমানবন্দর শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু কাস্টমস কর্মকর্তাসহ অন্যদের ‘ম্যানেজ’ করে অর্ধশত সুদর্শন যুবক নানা কৌশলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন মুদ্রা দেশের বাইরে পাচার করছে। তারা নিরাপদে বৈদেশিক মুদ্রার চালান দুবাই নিয়ে গেছে এবং ফেরার সময় স্বর্ণের চালান নিয়ে এসেছে। কিন্তু ধরা পড়েনি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে ৪৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকার মুদ্রা জব্দ করা হয়েছে।এর আগে জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত ৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকার মুদ্রা, জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৫ পর্যন্ত ১৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মুদ্রা এবং জুলাই ২০১৩ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত ২১ কোটি ৮ লাখ টাকা সমমূল্যের মুদ্রা জব্দ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মুদ্রাপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ২৬ জনকে আটক করতে সমর্থ হয় শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার তানজিনা আক্তার বলেন, চোরাকারবারিরা সবসময়ই তৎপর। `স্মার্ট ও সুদর্শন’ তরুণদের মুদ্রাপাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিমানবন্দর মুদ্রাপাচারে জড়িত সিন্ডিকেট শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

এ ব্যাপারে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, ‘যে পরিমাণে মুদ্রাপাচার হচ্ছে সে হারে জড়িতরা আটক হচ্ছে না। বন্দরগুলো দিয়ে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নগদ আকারে বৈদেশিক মুদ্রা স্থানান্তর হচ্ছে। হুন্ডির আড়ালে পণ্য আমদানি বা রফতানির ক্ষেত্রে টাকা পাচার করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি। দ্রুত একটি বড় সিন্ডিকেটকে ধরা সম্ভব হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.