জর্জিয়া : গত ২৯ মার্চ রোববার আটলান্টার ক্লেয়ার মন্ট রোডস্থ ম্যারিয়ট হোটেল মিলনায়তনে জর্জিয়া আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মাহমুদ রহমানের পরিচালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ডঃ সিদ্দিকুর রহমান ও প্রধান বক্তা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নেতৃবৃন্দ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লক্ষ্য শহীদ ও দু লক্ষ্য মা-বোনসহ সকল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। এরপর পবিত্র কোরান থেকে তেলওয়াত ও বাংলাদেশের ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সভাপতি ডঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে হাইজ্যাক করেছিল পাকিস্তানি হায়েনার সমর্থকরা। এরপর বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পথে এগুচ্ছে, ঠিক তেমনি সময়ে একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে বাংলদেশে নাশকতা চাচ্ছে। এদের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ থেকে চিরতরে নির্মুলের জন্যে আবারও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডঃ রহমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের অনুমোদনে জর্জিয়া আওয়ামীলীগের যে কমিটি গঠিত হয়েছে, তাকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় রাখার জন্যে সকলের প্রতি আহবান জানান এবং সেই সাথে দলের মধ্যে কারো কোন কারণে অভিমান বা দ্বন্দ্ব থেকে থাকলে তা সকলে মিলে সমাধান করে সম্প্রীতি ধরে রাখার অনুরোধ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্টি আজও বাংলাদেশকে অস্বীকার করে দেশকে পাকিস্তানের তাবেদার রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন দেখছে, তাই নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে ঐ সমস্ত অপশক্তিকে প্রতিহত করতে। তিনি স্বাধীনতার পক্ষের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে নব্য ষড়যন্ত্রকারীদের উৎখাত করার জানান।
এছাড়া বিশেষ অতিথি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ডাঃ মুহাম্মদ আলী মানিক, জর্জিয়া আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি যথাক্রমে মিন্টু রহমান ও এম মওলা দিলু, সিনিয়র নেতা মশিউর রহমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় সহ সভাপতি হুমায়ুন কবির কাওসার সভার সঞ্চালনায় সহযোগিতা করেন।
তিন পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্বে শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে ব্যতিক্রমধর্মী পর্ব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস সম্বলিত অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের তাওহিদ ইসলাম বাংলাদেশের ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট ইংরেজী ভাষায় অংশগ্রহণকারী শিশু কিশোরদের সামনে উপস্থাপনা করেন। এরপর সেই প্রেক্ষাপটে প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতায় স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সকলকে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মুহূর্তগুলি শুরু হলে সেসময় এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারনা হয়। বাংলাদেশকে জানতে শেকড়সন্ধানী এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দৃশ্যত নতুন প্রজন্মের আগামীদিনের সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের সূচনা হয় ঐ অনুষ্ঠানে। এটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি ও সাংস্কৃতিক সংগঠক রুমী কবির ও অপর সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বাংলাধারার সমন্বয়কারী মাহবুবুর রহমান ভূইয়া। স্বাধীনতার ইতিহাসের সঠিক উত্তর দাতাদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই পর্বে আটলান্টার জনপ্রিয় শিল্পী হোসনে আরা বিন্দু ও নতুন প্রজন্মের তৃষা কয়েকটি গান গেয়ে দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন। এছাড়া নতুন প্রজন্মের মনজিমা কবির ও পারিশার চিত্তাকর্ষক নৃত্য পরিবেশনা ছিল একটি বাড়তি আকর্ষণ।
শেষ পর্বে অতিথি শিল্পী চ্যানেল আইয়ের ২০০৯ সালের ‘সেরা কণ্ঠ’ পুরস্কারপ্রাপ্ত মীরা সিনহা ও লাবনী পর পর কয়েকটি জনপ্রিয় গান গেয়ে সকলকে মাতিয়ে রাখেন।
অনুষ্ঠানে জর্জিয়া আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক সালাহ উদ্দিন জামিল, প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক আব্দুর রশীদ মোল্লা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের প্রতিস্থাতা সংগঠক আজিজুর রহমান, কবি গোলাম রহমান, ফজলুর রহমান সুরুজ, সৈয়দ মুরাদ, রেজা করিমসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
অনুষ্ঠানে একজন আমন্ত্রিত সাবেক সভাপতিসহ ঐক্যবদ্ধ কমিটির কয়েকজন কর্মকর্তাকে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।