রাজশাহী: হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত শেষ হয়েছে। তিনদিন রাজশাহীতে অবস্থান করে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন এইচ এম আক্তার খান।
শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) দুপুরে তদন্ত শেষে তিনি ঢাকায় ফেরেন। সবকিছু যাচাই বাছাই করে আগামী রোববার (৫ এপ্রিল) চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশন ইন্সপেক্টর ক্যাপ্টেন এইচ এম আক্তার খান বলেন, ঘটনার পর ১ এপ্রিল বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের মাধ্যমে তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কমিটির চার সদস্য। বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) তদন্ত কমিটির চারজন সদস্য আবারও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় সেখান থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া বিমানবন্দরে কর্তব্যরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আশপাশে প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে এইচ এম আক্তার খান বলেন, প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজটির যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি ছিল কি-না তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এটি জানতে আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। তবে প্লেনটি ওড়ার পরপরই বাঁক নিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রানওয়ের ওপর আছড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হয়।
এ সময় উড়োজাহাজের বাম পাশের ফুয়েল ট্যাংক ফেটে গিয়ে তেল বের হয়ে যায়। ওই তেল প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষকের শরীরে গিয়ে পড়ে। এরই মধ্যেই সেখানে আগুন ধরে যায়। ইঞ্জিন গরম (স্পার্ককিং) হওয়ার কারণে আগুন লাগতে পারে। তেল ছড়িয়ে পড়ার কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রশিক্ষণার্থী ও প্রশিক্ষকের শরীরে লেগে তারা দগ্ধ হন।
তবে ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তা এখনই বলা যাবে না। তথ্য-উপাত্তগুলো এখন যাচাই বাছাই করা হবে। কমিটির অন্য সদস্যদের নিয়ে আলোচনার পরে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলেও জানান তদন্ত কমিটির প্রধান।
প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ সেসনা-১৫২ সম্পর্কে এইচ এম আক্তার খান বলেন, দুনিয়াব্যাপী এ জাতীয় উড়োজাহাজ দিয়েই পাইলট তৈরি করা হয়। এসব উড়োজাহাজ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। আর তার প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শাহেদ কামাল খুবই দক্ষ। তার পাঁচ হাজার ঘণ্টা প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
নিয়মানুযায়ী পারসোনাল পাইলট লাইসেন্স (পিপিএল) কোর্সে এককভাবে ৫০ ঘণ্টা উড়োজাহজ চালাতে পারলে একটি সনদপত্র দেওয়া হয়। পরে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (সিপিএল) কোর্সে ভর্তি হতে হয়। তামান্না পিপিএল কোর্সের প্রশিক্ষণে ছিলেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান এইচ এম আক্তার খানের সঙ্গে থাকা তিন সদস্য হচ্ছেন ডা. আবদুল খালেক, লুৎফুল কবির ও আতাউল্লাহ হাশমি। এর মধ্যে আক্তার খান বাংলাদেশ এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন টিমেরও প্রেসিডেন্ট।
রোববার সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে।
এদিকে, সিভিল এভিয়েশনের সিনিয়র সাব-স্টেশন কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক জানান, তামান্না রহমান হৃদি রাজশাহীতে পারসোনাল পাইলট লাইসেন্স (পিপিএল) কোর্সে ভর্তি হন ২০১৩ সালে। নিয়ম অনুযায়ী একজন প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিক ১৬ ঘণ্টা উড্ডয়নের পর এককভাবে উড়োজাহাজ চালানোর অনুমতি পান।
গত মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) তা পূর্ণ হওয়ায় তামান্নাকে পিপিএল কোর্সের অধীনে এককভাবে উড়োজাহাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। ওইদিন তিনি সেসনা-১৫২ উড়োজাহাজ নিয়ে একাই আকাশে উড়েন। দ্বিতীয় দিন (১ এপ্রিল) প্রশিক্ষককে নিয়ে চালালেও আর নিরাপদে অবতরণ করতে পারেননি।
এর আগে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে নারী প্রশিক্ষণার্থী পাইলট তামান্না রহমান হৃদি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ হন প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন শাহেদ কামাল। তার শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
বুধবার (১ এপ্রিল) দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গুরুতর দগ্ধ প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শাহেদ কামালকে ওই দিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। তিনি বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।