যুক্তরাষ্ট্র অফিস: প্রতিবছর জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত অটিজম সচেতনতা দিবসের আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের অটিজম জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। বাংলাদেশসহ বিশ্বমিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয় অটিজম স্পিকস-এর এই আন্তর্জাতিক ইভেন্টের খবরটি। কিন্তু এবারই প্রথম নিউইয়র্কের জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন নিউইয়র্কে কর্মরত বাংলাদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানায়নি। অনুষ্ঠানের প্রেস পাস না থাকায় স্থানীয় দু’টি কমিউনিটি টিভি এবং ঢাকার দু-একটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক ছাড়া এবারের অনুষ্ঠানে অন্য সাংবাদিকরা অংশ নিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এ বছর কেনো এমনটি হলো তা আমার বোধগম্য নয়। দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আমার কী ই বা করার আছে। তবে তিনি বলেন, সম্প্রতি তার অফিসে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জরুরি কাজে তিনি অফিসের বাইরে ছিলেন। কেনো সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হলো না সে বিষয়টি তিনি অনুসন্ধান করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।
সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ না জানানোর কারণ হিসাবে নিজের অজ্ঞতার কথা স্বীকার করেন স্থায়ী মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) বিজর লাল দেব। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত সাত দিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত এবং বাসায় শুয়ে আছেন। বিজন লাল দেব তার অফিস সহকারীর কথা উল্লেখ করে বলেন, সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এখানে উল্লেখ্য, ফার্স্ট সেক্রেটারি পদটি সহকারী সচিব পর্যাদার হলেও যুগ্ম সচিব বিজন লাল দেব ওই পদে কাজ করছেন। এর ফলে অফিসের কাজকর্মে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, সায়মা হোসেনের অটিজম সচেতনতা শীর্ষক অনুষ্ঠানের খবর যাতে ফলাও করে প্রচার না পায় এজন্য সুপরিকল্পিতভাবে একটি চক্র কাজ করেছে এবং তারা সফলও হয়েছে। স্থায়ী মিশনের প্রেস উইংয়ে কর্মরত অফিস সহকারী এরশাদ উল্লাহ সাংবাদিকদের ফোন ও ইমেইল করে সাধারণত আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার তিনি দু-চারজন সাংবাদিক ছাড়া আর কাউকে ফোন বা ইমেইল করেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এরশাদ উল্লাহ কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে সায়মা হোসেনের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের স্থায়ী মিশন থেকে আমন্ত্রণ না জানানো এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতি কম হওয়ায় বিস্মিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানও। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তনয়া সায়মা হোসেন কাজ শুরুর পর বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে অটিজম সচেতনতা বেড়েছে। প্রতিবছর তার অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। সিদ্দিকুর রহমান ইত্তেফাককে জানান, স্থায়ী মিশন থেকে তাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তারপরও তিনি দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেমিনারে যোগ দেন।
একাধিক সূত্র জানায়, স্থায়ী মিশনে শীর্ষস্থানীয় পদে সদ্য একজন কর্মকর্তা যোগদান করেছেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিবের নিজের লোক বলে পরিচিত। ওই কর্মকর্তা যোগদানের পর স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. মোমেনের সঙ্গে টাগ অব ওয়্যার শুরু হয়েছে। ওই কর্মকর্তা স্থায়ী প্রতিনিধিকে না জানিয়েই বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ওই কর্মকর্তা জামায়াত মনা। বিগত জোট সরকারের আমলে তিনি দাপটের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেছেন। তার চাকরির মেয়াদও শেষ পর্যায়ে। অবসরে যাওয়ার আগে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদবির করে তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে যোগ দিয়েছেন। জামায়াত মনা ওই কর্মকর্তার ব্যাপারে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী একটি দেশ খোঁজ রাখছে বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মোমেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে অফিসের জটিলতার কথাটি পুনর্ব্যক্ত করেন।
আরও খবর