যাত্রার শুরুতেই হোঁচড় খেয়েছে বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। যাত্রী নিয়ে উড়াল দেওয়ার আগমূহূর্তে সদ্য আনা দুটি উড়োজাহাজের একটিতে (ময়ুরপঙ্খী) যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে সোমবার সকালে উদ্বোধনী ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী ফিরতি ফ্লাইটও যথারীতি বাতিল করতে হয়েছে। এ ছাড়া বিকেলে সৈয়দপুর ফ্লাইটও বাতিল করা হয়।
এর আগেরদিন মিশর থেকে ভাড়ায় আনা পুরানো টার্বোপ্রপ (ড্যাশ-৮) উড়োজাহাজ দুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিটি ৭৪ আসনের উড়োজাহাজ দুটির নতুন নামকরণও করা হয়। একটির নাম ময়ুরপঙ্খী আর অপরটির নাম দেওয়া হয় মেঘদূত।
ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিমানকে সময় ধরে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু শুরুতেই উড়াল দেওয়ার আগ মূহূর্তে বসে যায় উড়োজাহাজ ময়ুরপঙ্খী। অপর উড়োজাহাজটি দিয়ে তিনটি গন্তব্য কক্সবাজার, সিলেট ও যশোরে ফ্লাইট চালানো হয়। তবে একটিও ফ্লাইটসূচি অনুযায়ী সময়মত গন্তব্যে পৌছাতে পারেনি।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, গতকাল সকাল সাতটায় ছিল উদ্বোধনী ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়। সে অনুযায়ী যাত্রীরা বিমানবন্দরে যান এবং তাঁদের উড়োজাহাজে তোলা হয়। কিন্তু উড়াল দেওয়ার আগমুহূর্তে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়লে যাত্রীদের নামিয়ে এনে ত্রুটি সারানোর অনেক চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ত্রুটি সারানো যায়নি।
বিমানের ফ্লাইট পরিচালন শাখার একটি সূত্র জানায়, এই উড়োজাহাজ দুটির সঙ্গে মোটা অংকের বেতনে মিশরের স্মার্ট এভিয়েশন ছয়জন প্রকৌশলীও আনা হয়েছে। এসব প্রকৌশলীরা অনেকক্ষণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় যে জাহাজটির একটি যন্ত্রাংশ (নিউম্যাটিক বাল্ব) বিকল। ততক্ষণে বেলা প্রায় দশটা বেজে যায়। এরপর ফ্লাইটটি বাতিল ঘোষণা করা হয়। ওই যন্ত্রাংশ দ্রুত সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ শুরু করা হয়।
অবশ্য গতকাল বিকেলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাইল হেয়্যুড জানান, ওই যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করা গেছে। সেটি এখন বাংলাদেশের পথে রয়েছে। তিনি আশা করছেন, আজ মঙ্গলবার সেটি ঢাকায় এসে পৌছাবে এবং উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন উপেযোগী করা সম্ভব হবে।
উদ্বোধনী ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণ হিসেবে বিমানের এমডি বলেন, পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন শেষ করে উড়োজাহাজটি ফিরে আসতে দেরি হওয়ায় গতকাল সকাল সাতটায় ফ্লাইটটি ছাড়া যায়নি। পরে সোয়া নয়টায় যাত্রীদের নিয়ে উড়োজাহাজটি রানওয়ের দিকে রওয়ানা হওয়ার পর এর শীততাপ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেয়। তাই যাত্রীদের স্বস্তির কথা বিবেচনা করে ফ্লাইটটি বাতিল করা হয়। তিনি বলেন, ওই ফ্লাইটের যাত্রীরা যাতে পরবর্তীতে বিমানের অন্য ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেউ চাইলে তাদের ভাউচার দেওয়া হবে, যা দিয়ে তাঁরা বিমানের যে কোনো অভ্যন্তরীন গন্তব্যে আগামী ছয় মাসের ভ্রমণ করতে পারবেন।
তবে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানের এমডি যে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের কথা বলেছেন, তা ঠিক নয়। কারণ আগের রাতেই পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে উদ্বোধনী ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পর দ্বিতীয় ফ্লাইটটি ছিল ঢাকা-কক্সবাজার গন্তব্যে। ওই ফ্লাইটে যাত্রীদের সঙ্গে ভ্রমণ করেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও। বেলা ১২টায় কক্সবাজারে অবতরণের পর মন্ত্রী সেখানে ফিতা কেটে বিমানের কাউন্টার উদ্বোধন করেন।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, উদ্বোধন শেষে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁদের নাজেহাল করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাসান জহির। গণমাধ্যম কর্মীরা এ বিমানবন্দর দিয়ে ইয়াবা পাচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটির বিষয়ে প্রশ্ন করেন। মন্ত্রী জবাব দেওয়া আগেই বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক গণমাধ্যম কর্মীদের ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন। এক পর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় ক্ষুব্দ মন্ত্রী বিমান বন্দর ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন গণমাধ্যমকর্মীদের।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক হাসান জহির বলেন, ‘কিছু কথাবার্তা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে ভুলবুঝাবুঝি হয়েছে। বাপ-ছেলের মধ্যেও এ ধরনের ভুল বুঝাবুঝি হয়।’
কক্সবাজার থেকে ফিরে রাশেদ খান মেনন ঢাকা-সিলেট ফ্লাইটে চড়েন। ফ্লাইটটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পর বেলা ৩টা ৫৭ মিনিটে সিলেটে অবতরণ করে। সেখানে কেক ও ফিতা কেটে সিলেট-ঢাকা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
এ অনুষ্ঠানে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, দীর্ঘদিন পর আবার অভ্যন্তরীণ সাতটি গন্তব্যে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। শিগগির সিলেট-লন্ডন কার্গো সার্ভিস চালু করা হবে।
আরও খবর