যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে এবার লন্ডনের সবচেয়ে আলোচিত দুটি আসনে লেবার পার্টির পক্ষে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুই প্রার্থী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা হক। হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে প্রার্থী হয়েছেন টিউলিপ। রূপা হক লড়ছেন ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনে। আগামী ৭ মে যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির দখলে থাকা হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনটি এবারও ধরে রাখাই হবে টিউলিপের জন্য চ্যালেঞ্জ। কনজারভেটিভ পার্টি এবার ওই আসনটিকে ‘টার্গেট সিট’ বানিয়েছে। আর রূপার চ্যালেঞ্জ হলো গতবার কনজারভেটিভ পার্টির কাছে হারানো ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসনটি পুনরুদ্ধার করা। এ আসন এবার লেবার পার্টির অন্যতম ‘টার্গেট সিট’।
লন্ডনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১০টি আসনের শীর্ষে রয়েছে টিউলিপের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন। আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে রূপার আসনটি। এ কারণে আসন দুটির প্রতি গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি যেমন ভিন্ন, তেমনি প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জটাও অন্য রকম।
অস্কারবিজয়ী অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে ২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির এমপি ছিলেন। গত নির্বাচনে তিনি মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন। এই আসনে প্রধান তিনটি দলের মধ্যে লেবার পার্টি ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ, কনজারভেটিভ পার্টি ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি ৩১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পায়। যে কারণে এই আসনটিকে বলা হচ্ছে ‘ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ আসন। গ্লেন্ডা জ্যাকসন অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিলে লেবার পার্টির স্থানীয় সদস্যদের ভোটে এ আসনে এমপি পদে লড়াইয়ের মনোনয়ন পান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ।
একদিকে গ্লেন্ডার মতো ব্যক্তিত্বের স্থলাভিষিক্ত হওয়া, অন্যদিকে দলের দীর্ঘদিনের আসনটি ধরে রাখার লড়াই—প্রথমবার এমপি পদে নির্বাচন করতে নেমে এই চ্যালেঞ্জটা কেমন? প্রথম আলোর এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ মুঠোফোনে বলেন, ‘এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং। গ্লেন্ডা অনেক বিখ্যাত এবং পরিচিত একজন ব্যক্তি। সেই তুলনায় আমি একেবারেই নতুন।’ গ্লেন্ডার মতো হওয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে টিউলিপ বলেন, তিনি গ্লেন্ডার চেয়ে ভিন্ন ধাঁচের এমপি হতে চান। কারণ, গ্লেন্ডা তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করতেন না। কিন্তু টিউলিপ ১৫ বছর বয়স থেকে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নে বসবাস করছেন।
এই এলাকার স্কুলে পড়েছেন এবং কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জানিয়ে টিউলিপ বলেন, স্থানীয় জ্ঞান, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্বকে কাজে লাগিয়ে তিনি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। গ্লেন্ডা জ্যাকসনের কাছ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে টিউলিপ বলেন, স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর ইতিবাচক সাড়া এবং সবার সহযোগিতা তাঁকে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। এই আসনে টিউলিপের সঙ্গে লড়বেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী সায়মন মার্কাস ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টির মাজিদ নাওয়াজ।
এদিকে ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটনে গতবার ৩ হাজার ৭১৬ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী এঞ্জি ব্রে। কনজারভেটিভ পার্টির বাজেট কর্তনের কারণে এই এলাকার চারটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র (জিপি সার্জারি) বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে জনমনে সৃষ্ট ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে আসনটি এবার দখলে নিতে চান লেবার পার্টির প্রার্থী রূপা হক। তিনি কিংস্টন ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক। রূপা হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দলের প্রধান ‘টার্গেট সিটে’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বাড়তি চাপ আছে। আসনটি ফিরিয়ে আনার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন। রূপা হক বলেন, ‘চারটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বন্ধের কারণে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এ সমস্যা সমাধানে মানুষের আস্থা অর্জনটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’ এঞ্জি ব্রে এবারও আসনটিতে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী। লিবারেল ডেমোক্র্যাটস থেকে এবার এই আসনে লড়ছেন কাউন্সিলর জন বল।
আরও খবর