ভিসার জন্য সাক্ষাতের তারিখ পেতে জটিলতা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগের মুখে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ বলেছেন, ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থা মোটেই ঢাকা দূতাবাস থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় না।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক সংলাপে প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন ভারতীয় হাই কমিশনার।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিকাবের আয়োজনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
ভারত প্রতি দিন গড়ে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়ে থাকে। ব্যবসায়ীরা পাঁচ বছরের ‘মাল্টিপল এন্ট্রি’ ভিসা পায়। ভিসার আবেদনের জন্য সাক্ষাতের দিন পাওয়া নিয়ে জটিলতার বহু অভিযোগ রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে এর মধ্যেই ট্যুরিস্ট ভিসা ছাড়া অন্য সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রে সাক্ষাতের তারিখের বিষয়টি বাদ দিয়েছে বাংলাদেশে ভিসা ব্যবস্থাপনাকারী স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এমনকি এক সাংবাদিকও বলেছেন, ভারতীয় ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন ছিল।
এসব জটিলতার বিষয়ে নিজে ‘সচেতন’ রয়েছেন জানিয়ে হাই কমিশনার বলেন, “আমরা এই সব জটিলতা নিরসন করতে এবং কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়গুলো।”
ভিসা পাওয়া সহজ করতে সাক্ষাতের তারিখের বিধান তুলে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
“তারিখ পাওয়ার অপর্যাপ্ততার বিষয়ে সমস্যা কারণ খুঁজতে আমাদের কারিগরি ব্যবস্থার নিরীক্ষা চালানোসহ নানা ধরনের সমাধানের বিষয়ে নজর দিচ্ছি আমরা।
তিনি বলেন, “ভারতে আমাদের কারিগরি লোকদের দিয়ে এই নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ভিসা ব্যবস্থাপনা মোটেই হাই কমিশন নিয়ন্ত্রণ করে না।
“আমাদের চিন্তা এটাকে কিভাবে সহজ, সরল ও স্বচ্ছ করা যায়। এর মধ্যে আমরা কোনো দালাল বা কোনো অবৈধ উপায় সহ্য করি না।”
ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি /বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি /বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ভারতীয় দূত দুদেশের জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং উন্নততর সংযোগ ব্যবস্থার উপর জোর দেন।
ভারত ও বাংলাদেশ ‘পারস্পরিক অংশীদার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, শান্তি, স্থিতি, পারস্পরিক নিরাপত্তা ও সুবিধাজনক একটি পরিবেশে উভয় দেশ যাতে একসাথে প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি অর্জন করে তা নিশ্চিত করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
‘গ্রহণযোগ্য’ তিস্তা চুক্তি প্রক্রিয়াধীন
ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ‘গ্রহণযোগ্য’ ঐকমত্যে পৌঁছাতে বর্তমানে নয়া দিল্লিতে একটি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তবে পানি অপর্যাপ্ত সম্পদ হওয়ায় এই বণ্টনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালার অনুসরণ করতে হবে- বন্যা এবং খরা দুসময়েই তা সমান হতে হবে।
সংলাপে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন হাই কমিশনার।
তবে শুরুতেই তিনি বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানি বণ্টন ও স্থল সীমানা চুক্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি।
তবে এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না বলে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বড় কতগুলো বিষয় তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, ভার বণ্টন ও সমতার নীতিমালার ভিত্তিতে সমাধান হতে হবে।
“এই দুই বিষয়ে সন্তোষজনক ঐকমত্য তৈরি না হলে চুক্তিতে উপনীত হওয়া সম্ভব নয়।”
২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায় না আসার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তা হয়নি।
এবছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের সময় এবার তার উপর ‘আস্থা রাখতে’ বললেন মমতা।
পঙ্কজ বলেন, “অবশ্যই এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর সহায়ক হয়েছে।”
স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধানে দিল্লির প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতের সংসদে এই বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সংসদে পাশ হয়ে গেলেই ওই প্রটোকল বাস্তবায়ন শুরু হবে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় এই দুটি অমীমাংসিত বিষয় সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পঙ্কজ বলেন, তার সফরের জন্য ‘পরস্পরের জন্য উপযোগী’ একটি সময় খুঁজছেন তারা।
সংগঠনের সভাপতি মাসুদ কামালের সভাপতিত্বে সংলাপে সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।