আটক ২১৪ বাংলাদেশিকে নির্যাতন করা হচ্ছে: ব্যাংকক দূতাবাস

bangladesh-embassy-bangkokএভিয়েশন নিউজ: অবৈধভাবে সাগরপথে থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ২১৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থাইল্যান্ডের ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে (আইডিসি) রাখা হয়েছে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা বাংলাদেশি কি না, তা তদন্ত করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে সরকারের সহায়তা চেয়েছে ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাস।

বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (কনস্যুলার) মুহাম্মদ এহতেশামুল হক এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ দেশের ২২ জেলার পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের সহায়তা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। আটক ব্যক্তিরা যে নাম ও ঠিকানা দিয়েছেন, সেসব এলাকায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, এদের প্রচণ্ড নির্যাতন করা হচ্ছে, একটি ছোট কক্ষে রেখে অল্প পানি ও খাবার দেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগই ভয়ঙ্করভাবে অসুস্থ।

ব্যাংককে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলার এই ২১৪ জন দালালদের প্ররোচনায় অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় আটক হয়েছেন। দূতাবাসের দুজন কর্মকর্তা আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশি নাগরিক।

দূতাবাস থেকে যাদের নাম ও টেলিফোন নম্বর পাঠানো হয়েছে তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে সাতক্ষীরার মো. ইকবালের ভাই জাকির হোসেন জানান, তারা দালালদের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তার ভাইকে থাইল্যান্ডের কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ইকবাল তিন মাস আগে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হন। অনেক দিন যোগাযোগ ছিল না। এরপর একদিন টেলিফোনে যোগাযোগ করে ‘আমাকে বেচে দেয়া হয়েছে’ বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।

আটক হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে দূতাবাসের চিঠিতে আরও বলা হয়, তারা ব্যাংককের আইডিসিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আইডিসি কর্তৃপক্ষ আটক হওয়াদের মানসম্মত খাবার সরবরাহ এবং চিকিৎসাসেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আটক হওয়া ব্যক্তিরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের এ শোচনীয় অবস্থা বিবেচনা করে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই ২১৪ জন প্রকৃত বাংলাদেশি কি না, সেজন্য সবার নাম-ঠিকানা পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে দেরি হয়, তাই সরাসরি জেলাভিত্তিক তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

একই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, এই ২১৪ জন নাগরিক জানিয়েছেন, তারা ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে থাইল্যান্ডে ঢুকেছেন। তাদের নৌকা, ট্রলার ও সবশেষে বড় জাহাজে করে নিয়ে আসা হয়েছে। কয়েকজন জানিয়েছেন, তাদের এক লাখ ৮০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হয়েছে।

আবার কেউ কেউ বলেছেন, তারা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পরই টাকা দেবেন বলে দালালদের জানিয়েছিলেন। তবে যাত্রা শুরুর পর থেকে তাদের টাকা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয় ও অনেক নির্যাতন করা হয়। এছাড়া তাদের আত্মীয়স্বজনকে টেলিফোন করে টাকা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আটক হওয়া ব্যক্তিরা কাকে টাকা দিয়েছিলেন বা দেবেন, এমন কোন এজেন্ট বা ব্যক্তির নাম তারা উল্লেখ করতে পারেননি। এই ২১৪ জনের মধ্যে ১৫ বছরের কিশোর থেকে বৃদ্ধও রয়েছেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.