রমনায় জনতার ঢল, তীব্র যানজট

ramnaঢাকা: পুরনো বছরের জরাজীর্ণ দূর করে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে উৎসবে মেতেছে কোটি বাঙালি। বরাবরের মতো এবারও উৎসবের মূল কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীর রমনা পার্ক। প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপনে রমনা কেন্দ্রীক এলাকায় নেমেছে লাখো মানুষের ঢল।

উৎসব প্রিয় এ মানুষগুলোর পহেলা বৈশাখ উদযাপন নির্বিঘ্ন করতে রমনা পার্ক কেন্দ্রীক যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগ অভিমুখী রাস্তা। একইভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পল্টন থেকে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা। এতে রাজধানীর কয়েকটি সড়কে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের।
গাবতলী ও মিরপুর থেকে আসা গণপরিবহনগুলো কারওয়ান বাজার মোড় থেকে ইউটার্ন নিয়ে মিরপুর, গাবতলীর দিকে ফিরে যেতে হচ্ছে। আর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী যাওয়া পরিবহনগুলো এফডিসির সামনের রাস্তা দিয়ে মগবাজার-মালিবাগ হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে।

পল্টন থেকে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় কাকরাইল অভিমুখী রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে। আবার কাকরাইলের বীর উত্তম শামসুল আলম সড়কটি বন্ধ করে দেওয়ায় শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণির আগের মোড় থেকে ব্যবহার করতে হচ্ছে মগবাজার অভিমুখী রাস্তাটি।

পশ্চিম দিকে নিলক্ষেত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শাহবাগ অভিমুখী রাস্তা। ফলে এ রুটে চলাচল করা পরিবহনগুলোকে কারওয়ান বাজার রুটের রাস্তা অথবা আজিমপুর হয়ে গুলিস্থান রুটের রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে।
যানবাহন চলাচলে এমন নিয়ন্ত্রণ আরোপে রমনা পার্ক অভিমুখী প্রতিটি রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি চালিত অটোরিকশা।

তবে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকলেও এ নিয়ে কোন ক্ষোভ নেই মানুষের মধ্যে। এ দুর্ভোগকে সাদরে সবাই মেনে নিচ্ছেন।

উত্তরা থেকে পরিবারসহ দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে রমনায় এসেছেন আরিফুল ইসলাম। মগবাজার মোড়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এফডিসি মোড় থেকে মগবাজার আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা ১২ মিনিট।

আরিফুল বলেন, পহেলা বৈশাখে প্রতিবারই এই রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। তবে এবারের যানজট অন্যবারের তুলনায় একটু বেশি বলে দাবি তার।

মহাখালী থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়‍ার পথে রুবেলের সঙ্গে কথা হয় মালিবাগ মোড়ে। তিনি জানান, সাতরাস্তা থেকে মালিবাগ মোড় আসতে সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা।

এতো সময় গাড়িতে অলস বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে কি-না জানতে চাইলে রুবেল বলেন, বিরক্ত তো একটু লাগছেই। কিন্তু কী করা। পহেলা বৈশাখে যানজট একটু হবেই। এটি মেনে নিতে হবে।

পরিবারে সঙ্গে আনন্দ করার সময় খুবই কমই পান রাজধানীবাসী। বিশেষ বিশেষ দিন পরিবারের সঙ্গে বিনোদনের সুযোগ তৈরি করে দেয়। এরমধ্যে পহেলা বৈশাখ অন্যতম। এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব। এ উৎসব উদযাপনের সুযোগ পাওয়ার কাছে যানজটের সময়িক ভোগান্তি কিছুই না, বলেন রুবেল।

সরেজমিন রাজধানী ঘুরে মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে পল্টন থেকে কাকরাইল, ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজ‍ার, কারওয়ান ব‍াজার থেকে এফডিসি মোড়, সাতরাস্তা থেকে মগবাজার-মালিবাগ, ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে থেকে নীলক্ষেত-আজিমপুর রুটে দীর্ঘ যানজটের চিত্র দেখা যায়।

তবে রামপুরা থেকে খিলগাঁও-যাত্রাবাড়ী, গুলশান, বাড্ডা, মিরপুর, বনানী, মহাখালী এ এলাকাগুলোতে যান চলাচল কম দেখা যায়।

যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী অভিমুখী ২২ নম্বর বাসের চালক জামালের সঙ্গে কথ‍া হয় কাকরাইলে। তিনি জানান, ৭ বছর গাবতলী-যাত্রাবাড়ী রুটের বাস চালাই। প্রতিবারই পহেলা বৈশাখে এ রুটে যানজট দেখা দেয়। তবে কারওয়ান বাজার প‍ার হতে পারলে আর যানজট থাকে না।

অন্যবারের তুলনায় যানজট কিছুটা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, গাড়ি চলাচলে কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এটি মেনে নিয়েই রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হই।

আর যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটে চলাচল করা তুরাগ পরিবহনের চালক আশিকুর বলেন, এ রুটে কোনো যানজট নেই। গাড়ির সংখ্যাও কম। অন্য গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে হচ্ছে না। তবে যাত্রী সংখ্যা তুলনামূলক কম।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.