বিমান কার্যালয়ে দুদকের হানা : আগামীকাল যাচ্ছে সিভিল এভিয়েশনে

Biman20170128165714বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার উদোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিশেষ করে বিমানের সিবিএ নেতা মশিকুর রহমানের নেতৃত্বে বছরের পর বছর ধরে-কাজ না করেই কোটি কোটি টাকার ওভারটাইম উত্তোলন, ইমিগ্রেশন ও লাউঞ্জ এরিয়ায় তার লোকদের একচেটিয়া ডিউটি করা ও বিদেশী এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে লাগেজ সার্ভিস দিয়ে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন দুদক প্রতিনিধিদল। এ সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ লিখিত আকারে আগামি দু সপ্তাহের মধ্যে তা জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন।মোট ১২টি বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে গতকাল সকাল ১১টায় কুর্মিটোলায় বলাকা ভবনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্যালয় পরিদর্শন করেন দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক অনুসন্ধান টিম।  টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন- উপ-পরিচালক শেখ আব্দুছ সালাম ও সহকারি পরিচালক গুলশান আনোয়ার ।  অভিযানের সময় তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন।  দুদকের  প্রাতিষ্ঠানিক টিম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন শাখা পরিদর্শন করেন। এ সময় টিমের সদস্যরা প্রতিষ্ঠানটির অর্গানোগ্রাম, জনবল নিয়োগ, ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিধি ও ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনসহ ১২ ধরণের তথ্য জানতে চান। পরে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের কপি আগামি ৭ দিরে মধ্যে সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানকে মৌখিকভাবে অনুরোধ জানান।  বিমানের এমডির সঙ্গে বৈঠকে দুদক টিম তাদের কাজের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। বিকেলে  মোসাদ্দেক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, দুদক আমার সংস্থার বিষয়ে যেসব তথ্য চেয়েছে আমি তা সরবরাহ করবো।
টিম প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা  প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি।  তাদের আইন-কানুন ও কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছি। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সহযোগিতা চেয়েছি। জবাব তিনি দুদক টিমকে সর্বাÍক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
জানা গেছে,  প্রাতিষ্ঠানিক  টিম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আইন, বিধি, পরিচালন পদ্ধতি, সরকারি অর্থের অপচয়ের দিক পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ছাড়াও জনসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা, সেবাগ্রহিতাদের হয়রানি, দুর্নীতির কারণ এবং এর সঙ্গে সংশিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। কার্যক্রম পরিচালনার সময় দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালাবে। জানা গেছে, দুদক টিম ১ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অফিস পরিদর্শনে যাবে।

দুদুক সুত্রে জানাগেছে, টিমের সদস্যরা বিমানের সিবিএ ছাড়াও বাপার সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবের সিডিউল নিয়ে একক দাপট দেখিয়ে মেধাবী পাইলটদেরকে খারাপ রুটে পাঠানো, বিতকির্ত ব্যক্তিদেরকে টাকার বিনিময়ে ট্রেনিংয়ে পাস ফেল করানো ও পাইলটদেরকে জিম্মি রাখার মতো অভিযোগ সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন। এছাড়া মিশরের ইজিপ্ট এয়ারলাইন্স থেকে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ এয়ারক্রাফটের লীজ সংক্রান্ত ফাইলটিও চান এমডির কাছে। এই এয়ারক্রাফট দুটি আনা থেকে এ পর্যন্ত কত টাকা আয় করেছে এবং এর পেছনে কত টাকা খরচ হয়েছে তারও তথ্য চান। এই উড়োজাহাজ লীজের সংগে সংশ্লিস্ট বিমানের পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান, ফাস্ট অফিসার শামীম নজরুল, পরিচালক প্ল্যানিং বেলায়েত হোসেন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য চান।এছাড়া ইজিপ্ট এয়ারের লোকাল এজেন্ট রাশিয়ান মাহুবব ও তার প্রতিষ্ঠানকে এ পর্যন্ত বিমান কত টাকা প্রদান করেছে তার হিসাব চান। রাশিয়ান মাহবুব কিভাবে এধরনের দুটি নিকৃষ্ট এয়ারক্রাফট বিমানে গছিয়ে দিয়েছে তার বিষয়ে জানতে চান। বিনিময়ে কারা কারা এ থেকে লাভবান হয়েছে তার খোজ নেন। খিলক্ষেত নিকেতনস্থ মাহবুবের অফিসে হানা দিতে পারে বলেও দুদক সুত্রে জানা গেছে। এই মাহবুবের বিরুদ্ধে বিনা টেন্ডারে বিমান ও সিভিল এভিয়েশনে কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আছে। দুদক সুত্রে জানাগেছে, মাহবুবকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে বিমানের ইজিপ্ট ও স্মার্ট এভিয়েশনের যাবতীয় দুনীতির তথ্য বেরিয়ে আসবে। একই সংগে কেচু খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান।

বৈঠকের একটি সূত্র জানায়, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিছুটা অস্বিস্থি বোধ করেন।  এ সময় তিনি সিবিত্র নেতাদের নামে আনা সব অভিযোগের কাগজপত্র দেয়ার আশ্বাস দেন।
জানা যায়- মশিকুর বাহিনী ছাড়াও এক জিএম, পরিচালক বেলায়েত, ম্যানেজার সুদীপ, বিএটিসির পার্থ কুমার পন্ডিত, ও জিএম বারি সম্পর্কে সাম্প্রতিক নিয়োগ কেলেংকারি সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদগুলোর সত্যতা সম্পর্কে জানতে চায় দুদক। বিশেষ করে ঘূরে ফিরে যেসব কেলেংকারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচেছ- সেগুলো সম্পর্কেই সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছে দুদক। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বলাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ সব জানতে চায়।

সোমবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদের কক্ষে গিয়ে তারা হাজির হন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কক্ষে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থানের পর বলাকা ভবন থেকে বের হয়ে এসে ইকবাল হোসেন সাংবাদিকদেরকে জানান, বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দিক আহমেদের সঙ্গে দুর্নীতির বিষয়ে কথা হয়েছে। এ সময় মোসাদ্দিক আহমেদ দুদকের পরিচালককে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিমানের যে কোনো ব্যক্তি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে দুদকের কাছে তাদের তথ্য সরবরাহ করা হবে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরকারী বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির বিষয়ে কোনো তথ্য আছে কি না সে ব্যাপারে দুদকের বিশেষ টিম খতিয়ে দেখবে। কোনো তথ্য পেলে দুদকের টিম দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দেবে।
উলেলখ্য- গত ১৮ জানুয়ারি সরকারি ১৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠানিক দুর্নীতি রোধে ১৪টি বিশেষ টিম গঠন করে দুদক। যার কার্যকারিতায় সোমবার এই অভিযান পরিচালিত হয়।
বিমান সূত্র জানায়, বৈঠক চলাকালে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে দুদক জানতে চায় কেন বিমানের বিরুদ্বে এত দুর্নাম। কাউন্টারে গিয়ে টিকেট না পাওয়া, ঘন ঘন উড়োজাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়া, সিডিউল রক্ষা করতে না পারা, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খাতের অরাজকতা, উইউড়োজাহাজ লিজে কমিশন খাওয়া, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকার অপচয়ের কারণ সম্পর্কে সুষ্পষ্টভাবে জানতে চান দুদক কর্তারা। একটি লিখিত নোটিশের মাধ্যমে প্রমাণাদি সহ এসব অভিযোগের জবাব চান তারা। এ ছাড়া গত অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন ও লাভ লোকসানের চিত্রও দেখতে চেয়েছেন দুদক প্রতিনিধিরা। খুব শিগগির এসব অভিযোগের লিখিত জবাব দেয়ার আ্শ্বাস দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.