চলতি বছরের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে ওমানে কর্মরত সাড়ে ৫ লাখ বাংলাদেশীকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রদান করতে হবে। বর্তমান যে গতিতে কাজ চলছে তাতে সর্বোচ্চ তিন লাখ এমআরপি প্রদান করা সম্ভব হতে পারে। ফলে চাকরির ঝুঁকিতে পড়তে পারে ওমানের প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশী। এ অবস্থায় ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এমআরপি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ইতিমধ্যে দরপত্রসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আর ওমানে এমআরপি প্রদানের দায়িত্ব পেয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বিএলএস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস লিমিটেড। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর এ সংক্রান্ত প্রস্তাব মূল্যায়ন ও অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বহিরাগমন ও নিরাপত্তা) মোস্তফা কামালউদ্দীন নিজ দফতরে বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে দরপত্রসংক্রান্ত প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। অনুমোদনের জন্য শিগগিরই সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো হবে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) শর্ত অনুযায়ী, আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে বিদেশ গমনাগমনের জন্য সবাইকে হাতে লেখা পাসপোর্টের বদলে এমআরপি নিশ্চিত করতে হবে। এরপর এমআরপি ছাড়া বিদেশ গমনাগমন ও ভিসা গ্রহণ সম্ভব হবে না। বর্তমান ওমানে সাড়ে পাঁচ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছে নানা পেশায়। ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে স্থাপিত যন্ত্রপাতি দ্বারা এত অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীকে এমআরপি প্রদান করা সম্ভব হবে না। ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন বর্তমানে প্রতি দিন ৪০০ পাসপোর্ট প্রক্রিয়াকরণ করছে। সে হিসেবে দিন-রাত কাজ করলেও সর্বোচ্চ তিন লাখ এমআরপি প্রদান করা সম্ভব হতে পারে। ফলে বাকি আড়াই লাখ বাংলাদেশী ওমানে কর্মস্থল ও ভ্রমণে বাধাগ্রস্ত হবে। ঝুঁকিতে পড়তে পারে তাদের চাকরি জীবন। এমতাবস্থায় সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার মতো আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ওমানেও এমআরপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সূত্র আরও জানায়, ওমানসহ অন্যান্য দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এমআরপি প্রদানের জন্য ২০১২ সালের ২৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দেন। এর ধারাবাহিকতায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের এমআরপি প্রদানের জন্য ২০১৪ সালের ১০ মার্চ আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ৫টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এরমধ্য থেকে ৪টি প্রতিষ্ঠানকে আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) দাখিলের নির্দেশ দেয় প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি)। প্রতিষ্ঠানগুলো হল- বিএলএস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস লিমিটেড, বিটিএস কমিউনিকেশন (বিডি) লিমিটেড অ্যান্ড মীর টেলিকম লিমিটেড, ডেটাএইজ-বিএসসিই-আই পিপল কনসরটিয়াম এবং আইরিশ কর্পোরেশন বারহেড কনসরটিয়াম। এর মধ্যে মূল্যায়ন কমিটির কাছে মনোনীত হয় ভারতের বিএলএস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস লিমিটেড। দরপত্র প্রস্তাবে প্রতিটি এমআরপির জন্য প্রবাসীদের অতিরিক্ত খরচ করতে হবে ৯ দশমিক ৪০ মার্কিন ডলার। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এ অর্থ গ্রহণ করবে।
২৪ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পাসপোর্ট অধিদফতরের এক চিঠিতে বলা হয়-ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এমআরপি প্রদানের নিমিত্তে সেবা সরবরাহকারী নির্বাচনের উদ্দেশে প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে বিএলএস ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস লিমিটেডের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তাদের সঙ্গে নেগোশিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। সভায় এমআরপি ইস্যুসংক্রান্ত বিদ্যমান সিস্টেমের সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন সম্পর্কিত সিস্টেম ইন্টিগ্রেটরের কাছ থেকে সম্মতিপত্র দাখিলের পর চুক্তি স্বাক্ষরের সুপারিশ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর আইরিশ কর্পোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, সম্মতিপত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। যদি প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে তারা আইরিশ কর্পোরেশনের সঙ্গে কানেক্টিভিটির নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। বিষয়টি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হল।
তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবটি শিগগিরই সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিষয়টি অনুমোদনের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা কমিটিতে উপস্থাপন করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।