সপ্তাহজুড়ে দেশের পুঁজিবাজারকে অনেকটাই ‘শাসন’ করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। সপ্তাহজুড়েই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ কোম্পানির শেয়ারদর গত ৯ কার্যদিবসে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। অভিযোগ আছে ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও নির্বিকার ডিএসই ।
চলতি সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনসের সর্বশেষ লেনদেন মূল্য ছিল ২০৮ টাকা ৪০ পয়সা, যা ছিল দিনের সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দর। ডিএসইতে এদিন শেয়ারটির সর্বনিম্ন দর ছিল ১৮৬ টাকা ১০ পয়সা।
একই অবস্থা দেখা গেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই)। এখানেও সার্কিট ব্রেকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ দর ২০৭ টাকা ৪০ পয়সায় শেয়ারটি কেনাবেচা হয়েছে। অবশ্য এদিন সিএসইতে শেয়ারটি ১৮৭ টাকা ৭৮০ পয়সা দরেও কেনাবেচা হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের বিপুল শেয়ার চাহিদার বিপরীতে শেষ পর্যন্ত শেয়ারটির কোনো বিক্রয় আদেশই ছিল না। যদিও দিনব্যাপী কেবল ডিএসইতে এই কোম্পানির ৫২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। আর সিএসইতে ৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকারও বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে এধরনের একটি কোম্পানীর শেয়ারের দাম সার্কিট ব্রেকার অতিক্রম করলেও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কতৃপক্ষ নির্বিকার। তারা এনিয়ে কোনই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টো ডিএসইর অনেক প্রভাবশালী সদস্য এই শেয়ারটি ক্রয় করে বড় ধরনের গেমলিং করছেন বলে বাজারে গুঞ্জন রয়েছে।
অথচ তার দ্বিগুন বড় কোম্পানী শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেডের দাম বাড়ার কারণে ডিএসই কতৃপক্ষ একাধিক বার শোকজ, দীর্ঘদিন ট্রেড বন্ধ রাখা, জরিমানা করা এমনটি কোম্পানীটিকে গত ৬/৭ মাস ধরে স্পট মাকের্টে ফেলে রেখেছে। বাধ্য হয়ে বিনিয়োগকারীদের নগদ টাকায় শেয়ার ক্রয় করতে হচ্ছে। এমনকি অনেক সিকিউরিটি হাউসে এই শেয়ারটির কেনাবেচায়ও ডিএসই‘র মৌখিক নিষেধাজ্ঞা আছে। অথচ রহস্যজনক কারণে গত ৯ দিন ধরে এক নাগারে ইউনাইটেড পাওয়ারের দাম বাড়লেও নির্বিকার ডিএসই।
অভিযোগ আছে ডিএসই‘র একাধিক দুর্নীতিবাজ মেম্বার এই শেয়ারটি ক্রয় করে গেমলিং করছে। একারণে কোম্পানীটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও এর বিরুদ্ধে কোন শোকজ করা হচ্ছে না। এমনকি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিচ্ছে না কতৃপক্ষ। অভিযোগ আছে ইউনাইটেড পাওয়ারের বিরুদ্ধে এর আগে তেল আমদানীর নামে বিপুল অংকের টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আছে। এনিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তদন্তও করছে। তারপরও এই কোম্পানীর প্রাথমিক শেয়ারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল অনেক বেশি।
জানা গেছে এবারও একটি সিন্ডিকেট এই শেয়ারটি দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের ক্ষতি ও হুমকীর মুখে ফেলতে পারে। এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা অবিলম্বে বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্ণদারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। অন্যথা এনিয়ে বিনিয়োগকারীরা কোন ধরনের ক্ষতির মুখে পড়লে তার জন্য কৃতপক্ষ দায়ি থাকবে বলে তারা অনেক বিনিয়োগকারী জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীরা পাওয়ার সেক্টরের অপর কোম্পানীর শেয়ার কেনাবেচার ওপর স্পট (নগদ টাকায়) লেনদেন উঠিয়ে দেয়ার দাবি জানান। অন্যথা এর বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের আন্দোলনের ঘোষনা দিতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৫ এপ্রিল দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন তালিকাভুক্ত হয়। ওইদিন থেকে সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেনও শুরু হয়। এরপর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৯ কার্যদিবসের প্রতিদিনই শেয়ারটি লেনদেনের শীর্ষে অবস্থান করেছে।
আইপিওতে শেয়ারটি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও লেনদেন শুরুর প্রথম দিনে ডিএসইতে সর্বনিম্ন ৯৮ টাকা থেকে ১৩৯ টাকা ৯০ পয়সা দরে কেনাবেচা হয়। সে হিসেবে গত নয় কার্যদিবসে শেয়ারটির দর দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।