এভিয়েশন নিউজ: ঢাকা কাস্টমস হাউসের গুদাম থেকে পণ্য পাচার থামছে না। আটকের পর গুমাদে রাখা পণ্য বদলে যাচ্ছে। সোনা হয়ে যাচ্ছে ইমিটেশন। আসল বৈদেশিক মুদ্রা জাল মুদ্রায় পরিণত হচ্ছে। মাদক এবং বিস্ফোরক হয়ে যাচ্ছে সাধারণ কেমিক্যাল। আটকৃত পণ্য কাগজে-কলমে ধ্বংস দেখানো হলেও বাস্তবে এ ধরনের পণ্যে সয়লাব গোডাউন। জাল কাগজপত্র ও ভুয়া বিচারাদেশের নামে পাচার হচ্ছে শত শত কোটি টাকার পণ্য। নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়ার পরও কিছুতেই এগুলো বন্ধ হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে কাস্টমস হাউস কমিশনার লুৎফর রহমানও এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনার বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এখানে এসে ঘটনাগুলোর কথা আমিও শুনেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি নির্মূলে কাজ শুরু হয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে কে কিভাবে জড়িত তার অনুসন্ধান চলছে। আরও পর্যালোচনা শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। ২০১১ সালে কাস্টমস গোডাউনে থাকা ১০ কেজি সোনা গায়েব হয়ে গেছে। সোনা গায়েবের তথ্য খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের হেরোইন ও মাদকের একটি বড় চালান গায়েব হওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য। সহকারী কমিশনার মো. রিপনের নেতৃত্বে গোডাউন ইন্সপেক্টর মজিবর রহমানের তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় পুরো পাচারের ঘটনাগুলো ঘটেছিল। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা, চাকরিচ্যুতির ঘটনাও ঘটে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিআইডি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরেও তোলপাড় হয়।
এ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার মো. রিপন বলেন, পুরো ঘটনার জন্য মজিবর রহমান দায়ী। গুদামের দায়িত্ব তার হাতে। গুদামে কি রাখা হচ্ছে, কি বের হয়ে যাচ্ছে তা দেখার দায়িত্ব তার। বিষয়গুলো সহকারী কমিশনার পর্যায়ের কেউ দেখেন না। তবে মজিবর রহমানও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তিনি বলেন, এসব পণ্য পাচারের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। বরং রাঘব বোয়ালরা এর সঙ্গে জড়িত। তদন্ত করলেই তাদের নাম বেরিয়ে আসবে। ২০১৩ সালের ২৯ মে শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ ৬০ পিস ন্যানো স্টেশন আটক করে। এরপর থেকে নিষিদ্ধ পণ্যটি কাস্টমস গোডাউনে পড়ে আছে। এ পণ্যের মালিক কে? কারা এ পণ্য আমদানি করেছে- খোদ পুলিশও গত ২ বছরে এ তথ্য বের করতে পারেনি। কিন্তু সম্প্রতি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক যন্ত্রের চালানটি গায়েব করে দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরে শেষ মুহূর্তে পণ্যের চালান আটকে দেন। এ যন্ত্রের নাম ন্যানো স্টেশন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ন্যানো স্টেশনগুলো ছিল আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য। এ ধরনের একটি ন্যানো স্টেশন ডিভাইস দিয়ে কমপক্ষে ১ হাজার লোকের টেলিফোনে আড়িপাতা সম্ভব। ভিওআইপিতে ব্যবহারের জন্য এ যন্ত্রটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সবচেয়ে আধুনিক।
কাস্টমস সূত্র জানায় ৬০ পিস ন্যানো স্টেশনের মালিক খুঁজে না পাওয়া গেলেও মূল্যবান এ পণ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য পেছন থেকে দেশের অনেক রাঘব বোয়ালরা চেষ্টা চালাচ্ছেন। এজন্য বড় ধরনের আন্ডার হ্যান্ড ডিলিংও করেছে সিন্ডিকেট। জানা গেছে, ঢাকা কাস্টমস হাউসের রাষ্ট্রীয় গুদাম-২ থেকে আটককৃত যোগাযোগ নেটওয়ার্কিং যন্ত্র ন্যানো স্টেশন সামগ্রীর ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে তা পাচারের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে এনেছিল পাচারকারী চক্রটি। এজন্য তারা একটি ভুয়া বিচারাদেশও তৈরি করেছিল। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বরে তৈরি ভুয়া বিচারাদেশের নম্বরটি হচ্ছে- ১১৮২/কাস/২০১৩। ওই বিচারাদেশে ঢাকা কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান এবং সহকারী কমিশনার সৈয়দ সুলতানুল আলমের স্বাক্ষর ছিল। বিচারাদেশে বলা হয়, দি কাস্টমস অ্যাক্টস-১৯৬৯ সেকশন ৮-এর ক্ষমতাবলে পণ্য চালানটি বাজেয়াপ্ত করার পরিবর্তে বর্ণিত অর্থদণ্ড ও জরিমানা ছাড়াও আরও ২০ হাজার টাকা বিমোচন জরিমানা আরোপ করা হল। আরোপিত অর্থদণ্ড ও জরিমানা বাবদ মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, শতকরা ১ শতাংশ পিএসআই সার্ভিস চার্জ বাবদ ৩০০ টাকা এবং প্রযোজ্য শুল্ক কর বাবদ ২১ হাজার ৩৬০ টাকাসহ সর্বমোট ১ লাখ ৪৪ হাজার ৩৬০ টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে আটককৃত পণ্য (ন্যানো স্টেশন) খালাসের অনুমতি প্রদান করা হল। এ সুযোগ আদেশ জারির ৭ দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যার নম্বর-২০২৯, তারিখ ৫-৯-২০১৩। উক্ত টাকা সোনালী ব্যাংক ঢাকা কাস্টমস হাউস শাখায় জমা দেয়া হয় যার স্ক্রল নম্বর- ১৬৬, তারিখ ১১-৭-২০১৩। সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক ম্যানেজার খন্দকার আবদুর রব জানান, এ স্ক্রলে কোনো টাকাই ব্যাংকে জমা হয়নি।
এ ব্যাপারে ঢাকা কাস্টমস হাউস কমিশনার লুৎফর রহমান বলেন, এ বিচারাদেশটি ভুয়া। তিনি বলেন, একটি চক্র হয় তো এ ভুয়া বিচারাদেশে পণ্য পাচারের পাঁয়তারা করছিল। তিনি বলেন, ন্যানো স্টেশনগুলো খালাসের জন্য একটি আদেশের কপি তার হাতে আসে। ওই আদেশপত্রে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে নাম আছে অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, সহকারী কমিশনার বিচার সৈয়দ সুলতান আলম, স্টোর কিপার হারুনুর রশিদ। কমিশনার বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে দেখেন আদেশনামাটি ভুয়া। জালিয়তির মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়েছে। এতে দেয়া স্বাক্ষরগুলোও ভুয়া। এরপরই তিনি ওই ন্যানো স্টেশনের চালানটির খালাস প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন। কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার নিলাম শামসুল আরেফিন খানও বলেন, বিচারাদেশটি ভুয়া। তিনি বলেন, ন্যানো স্টেশনটি কি ধরনের ডিভাইস তা বের করার জন্য বিআরটিসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দারা বিভিন্ন সময়ে এয়ারফ্রেইট আমদানি শাখা এবং হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে সোনা, আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ, ভিওআইপি, ইউপিএ আউটডোর, বিদেশী সিগারেট, মাদকদ্রব্য আটক করে। আটককৃত পণ্য ডিএম (ডিটেনশন মেমো) করে তা রাষ্ট্রীয় গুদামে জমা রাখা হয়। পরে দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে একটি নির্দিষ্ট তারিখে তা ধ্বংস করে ফেলা হয়। এছাড়া সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার মতো পণ্য সংশ্লিষ্ট স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে তা ধ্বংস করার নামে পাচার করে দেয়। এ প্রক্রিয়ায় গত বছর ১ জানুয়ারি দুটি কার্টনে ৫ কোটি টাকা মূল্যের ৩৯ কেজি আমদানি নিষিদ্ধ ক্যান্সারের ওষুধ রাষ্ট্রীয় গুদাম-২ থেকে পাচার হয়ে যায়। চক্রটি ক্যান্সারের ওষুধের পরিবর্তে অন্য নকল ওষুধ ওই কার্টনে ঢুকিয়ে তা ধ্বংস করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার জিআর নম্বর-০১/১৪। সূত্র জানায়, একই বছর ৭ জুলাই রাষ্ট্রীয় গুদাম-২-এ আটককৃত পণ্যের ধ্বংসের তালিকা করে তা দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয় বলে কাগজপত্রে দেখানো হলেও এর অন্তরালে ওই তালিকা থেকে ৫নং ক্রমিকে আটককৃত পণ্য ধ্বংস না করে গোপনে গুদামে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। ৫নং ক্রমিকে আটককৃত পণ্যটি ছিল ভয়াবহ যোগাযোগ নেটওয়ার্কিং ডিভাইস ন্যানো স্টেশন।
৪শ কোটি টাকার হেরোইন গায়েব :
বিমান বন্দরের কাস্টমস গোডাউন থেকে ৪০০ কোটি টাকার ১০৫ কেজি হেরোইন গায়েব করে দেয়া হয়েছিল নানা কৌশলে। ওই সময় বিমানবন্দর গুদাম তত্ত্বাবধানে ছিলেন তৎকালীন ইন্সপেক্টর মজিবর রহমান। এ চাঞ্চল্যকার ঘটনার সঙ্গে কাস্টমসের ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল। এর আগে একই গুদাম থেকে দশ কেজি সোনা গায়েব হয়ে গিয়েছিল। ওই সময়ও গুদামের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ইন্সপেক্টর মজিবর রহমান।
হেরোইন গায়েব হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল। কুয়েত এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট কেএইউ-০২৮৩ এর যাত্রী জয়নাবুন্নেছাকে চ্যালেঞ্জ করে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তার কাছ থেকে ১ লাখ ৮০০ পিস ওষুধসদৃশ ১০৫ কেজি ওজনের বস্তু আটক করে। পণ্যের গায়ে কোনো নাম লেখা না থাকায় এর ধরন ও রাসায়নিক উপাদান পরীক্ষার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানো হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের কাছে। ৫ ধরনের আটক পণ্য থেকে ৫টি নমুনা সিলগালা করে বাহক মারফত অতি গোপনে পাঠানো হয়। দুদিন পর ৩০ এপ্রিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা স্বাক্ষরিত রিপোর্টে বলা হয়, ওই স্যাম্পলগুলোর ৫টিতে অবৈধ হেরোইন, অ্যামফিটামিন, মিথাইল অ্যামফিটামিন ও মেথাডন পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা করা হয় বিমানবন্দর থানায় (মামলা নং-১৬)। পরে মামলাটি সিআইডি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডি পুলিশ জানতে পারে কাস্টমস গোডাউনে যে হেরোইনগুলো আটক আছে সেগুলো গায়েব হয়ে গেছে। সেখানে অন্য বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কাস্টমসের ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করে সিআইডি মামলায় চার্জশিট দাখিল করে।
সিআইডি পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মজিবরের নেতৃত্বে কাস্টমসের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গোডাউনে রক্ষিত হেরোইনের চালানটি সরিয়ে ফেলে। আর সেখানে রেখে দেয়া হয় দেখতে একই রকম ও সমপরিমাণ ওজনের সাধারণ ওষুধ ও কেমিক্যাল। ৭ দিন পর হেরোইনের চালানটি গায়েব হয়ে যাওয়ার তথ্য ফাঁস হয়। এরপর গোপন বৈঠক করে কর্তৃপক্ষ আবারও রক্ষিত স্যাম্পলগুলোর রাসায়নিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। এবার রক্ষিত স্যাম্পলগুলো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিবর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে পাঠানো হয়। এক দিন পর ফার্মেসি বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, নমুনাগুলোতে হেরোইন তো দূরের কথা কোনো ধরনের মাদকেরই অস্তিত্ব নেই। বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়ার জন্য নমুনাগুলো পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে। সেখান থেকেও নমুনাগুলোতে কোনো ধরনের মাদকের অস্তিত্ব নেই বলে জানানো হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুধু এই চালান নয়, প্রতিনিয়তই কাস্টমের এ গোডাউন থেকে একের পর এক মাদক চালান গায়েব হয়ে যায়।
কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা গায়েব :
ঢাকার কাস্টমস গুদাম থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। কেউ যাতে সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য আসল মুদ্রা সরিয়ে সেখানে রেখে দেয়া হয় সমপরিমাণ জাল মুদ্রা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রা আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাস্টমস গোডাউনের ১০টি বড় বড় লকারে বৈদেশিক মুদ্রাগুলো সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু কিছুদিন আগে রেজিস্টার তল্লাশি করে দেখা গেছে, একটি লকারে জিআর নম্বর ১৫০/৮ এর আওতায় ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ রুপি গোডাউনে জমা রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে মাত্র ৪ হাজার ৫০০ রুপি আসল, বাকি ২৪ লাখ ৯০ হাজার রুপি পাওয়া গেছে জাল। অপর একটি লকারের ২২৩/৮ নম্বর জিআর খুলে দেখা গেছে, ১৩ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে মাত্র ১০০ মার্কিন ডলার মূল্যের ৪টি মুদ্রা আসল। বাকি ১২ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার জাল। ৪৩/৯ নম্বর জিআর অনুযায়ী দেখা গেছে, ওই চালানে উদ্ধারকৃত মোট মুদ্রার মধ্যে লকারে জমা রাখা ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২০টি মার্কিন ডলার, ৯০ হাজার ৬৫ ইউরো, ৬৩ হাজার ৬৬০ থাই বাথ, ৮৬০টি ভারতীয় রুপি, ২০ হাজার ৫০টি পোল্যান্ড মুদ্রা, ২ লাখ চায়না ইউয়ান, ১২ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিত, ৫টি টার্কিশ লিরা, ২১০টি ইউএই দিরহাম, ১১টি সিঙ্গাপুরী ডলার, ১২০টি হংকং ডলার ছিল। কিন্তু গোডাউন তল্লাশি করে দেখা গেছে, এর মধ্যে ২০টি ইউএস ডলার ছাড়া বাকি ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার জাল।
অন্যান্য মুদ্রার মধ্যে ভারতীয় রুপি ৮৬০ এর স্থলে পাওয়া গেছে ২ হাজার ৮৬০টি। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেখানে থাকা ২ হাজার ৮৬০ রুপিই জাল। এছাড়া ৬৩ হাজার থাই বাথের মধ্যে ৬২ হাজার ছিল জাল। ২০ হাজার পোল্যান্ড মুদ্রার মধ্যে ১৯ হাজার ছিল জাল। ২ লাখ চায়না মুদ্রার মধ্যে জাল ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার। বাকি মুদ্রাগুলো সঠিক পাওয়া গেছে। ৩৫/৮ জিআর অনুযায়ী উদ্ধার করা মুদ্রার মধ্যে গোডাউনে রাখা হয়েছিল ১ লাখ সৌদি রিয়াল, ৭টি ইউএস ডলার, ১টি কুয়েতি দিনার, ৫টি ইউরো। কিন্তু এর মধ্যে ১ লাখ সৌদি রিয়ালই জাল ও নকল। গোটা বান্ডিলে মাত্র ১টি রিয়াল ছিল আসল। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পুরো টাকা ব্যাংকে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন সবগুলো জাল নোট। এছাড়া ৯১/৮ নম্বর জিআর অনুযায়ী ওইদিন উদ্ধার করা হয়েছিল ৫০০ টাকার নোটের ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু পরে গোডাউন পরীক্ষা করে ওই বান্ডিলের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ৯৫/৮ নম্বর জিআর অনুযায়ী ১৮ হাজার টাকা উদ্ধারের রেকর্ড থাকলেও বাস্তবে গোডাউনে গিয়ে কোনো টাকা পাওয়া যায়নি।
– মুজিব মাসুদ