জাকার্তা (ইন্দোনেশিয়া থেকে): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আবারও প্রশংসা করলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলার পেছনে শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব আর দেশের কর্মঠ জনশক্তিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মত দেন তিনি।
বুধবার (২২ এপ্রিল) জাকার্তায় আফ্রো-এশীয় শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে দুই নেতা সাইডলাইনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি জানান, বৈঠকে দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
বৈঠকে শিনঝো আবে তার গত সেপ্টেম্বরের ঢাকা সফর ও তারও আগে মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দিনে দিনে আরও উন্নত হচ্ছে। বাংলাদেশে জাপানের দেওয়া ঋণসহায়তার প্রকল্পগুলোর অগ্রগতিরও প্রশংসা করেন শিনঝো আবে। বিশেষ করে মাতারবাড়ি কয়লা-বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিষয়ে জোর দেন তিনি।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচনে জাপানকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরও একবার ধন্যবাদ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসময় দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হওয়ায় শিনঝো আবেকে অভিনন্দন জানান। বলেন, তার সময়কালে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। দিনে দিনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও দুই দেশের সম্পর্ক গুরুত্ব পাচ্ছে।
জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি সমন্বিত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন আবে। বর্তমানে জাপানের সহায়তায় যেসব প্রকল্প চলছে তা দ্রুত ও যথাসময়ে সম্পন্ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মাতারবাড়ি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন। জাপানকে বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশটির জন্য একটি পৃথক রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তোলা হবে বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, দেশে এখন ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমে এসেছে।
এসময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণকে কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান বলে উল্লেখ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন। সরকারের কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়ার বিষয়টিরও প্রশংসা করেন আবে।
‘ইওর লিডারশিপ ইজ ভেরি স্ট্রং’ শেখ হাসিনাকে বলেন সিনঝো আবে।
এসময় জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে আবারও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে বুধবার সকালেই সম্মেলন ভেন্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয় চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং’র। জিনপিং এসময় বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রীও বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগের প্রশংসা করেন এবং চীনের জন্য বাংলাদেশে তৈরি পৃথক রফতানি প্রক্রিয়াকরণ জোনের কথা উল্লেখ করেন।
এর প্রেক্ষিতে চীনের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন এবং এ বছরের দ্বিতীয়ভাগে চীনের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে আসার পরিকল্পনার কথাও জানান।
বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলোচনা হয় ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মেঘবতী সুকর্ণপূত্রী, কাতারের উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমদ বিন আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেন লুংয়ের সঙ্গে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয় মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সিনের সঙ্গেও। এ বৈঠক প্রসঙ্গেও সাংবাদিকদের জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব একেএম শামীম চৌধুরী। বলেন, আন্তরিক পরিবেশে মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকটি সম্পন্ন হয়েছে। এসময় দুই নেতাই আঞ্চলিক সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় প্রতিবেশী সব দেশকে নিয়ে একযোগে এগিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেন।
আলোচনায় উঠে আসে বিসিআইএম কোরিডোর প্রসঙ্গও। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ভারতের আসামের ওপর দিয়ে বিদ্যমান সড়ককে উন্নত করে এই যোগাযোগ স্থাপনের কথা বলা হলে প্রধানমন্ত্রী এই সড়ক সমতল দিয়ে সরাসরি কলকাতা, ঢাকা-কক্সবাজার-হয়ে মিয়ানমারের ওপর দিয়ে চীনের কুনমিংকে সংযুক্ত করার কথা বলেন।
বিসিআইএম’র মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমার-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে একমত হন দুই নেতা।
থেইন সিন একটি উপ-আঞ্চলিক জোটের কথা বললে তাকে নেপাল ও ভুটানকেও সংযুক্ত রাখার কথা বলেন শেখ হাসিনা। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের ওপর জোর দেন। দুই দেশের সীমান্তের অবৈধ বাণিজ্য, মাদক ও অস্ত্র পাচার বন্ধের ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।