জোবায়ের আহম্মেদ অভি:
প্রতিপক্ষকে ‘বাংলাওয়াশের’ অভিজ্ঞতাটা নতুন নয়। এটি বাংলাদেশের ১৭তম ওয়ানডে সিরিজ জয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এর আগের ১৬টি ওয়ানডে সিরিজের অর্ধেকেরও বেশি বাংলাদেশ জিতেছে প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করে। যদিও বেশির ভাগ ধবলধোলাই জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। এর মধ্যে একটা নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ থাকলেও সেটি অবশ্য ‘আসল’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল না। খেলোয়াড় বিদ্রোহের সুবাদে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেয়ে তাদেরই মাঠে ধবলধোলাই করে এসেছিল বাংলাদেশ। তবে বাংলাওয়াশের সার্থক আনন্দ বাংলাদেশ দল পেয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। টানা দুটো হোম সিরিজে ব্ল্যাক ক্যাপদের ৪-০ ও ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রমাণ করেছে, কিউইদের বিপক্ষে প্রথম বাংলাওয়াশটা পড়ে পাওয়া কিছু ছিল না। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সিরিজে প্রতিটি ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ দশমবারের মতো কোনো সিরিজে প্রতিপক্ষকে ধবল ধোলাই বা বাংলাওয়াশ করার রেকর্ড গড়ল।
ম্যাচ শুরুর আগেই সাকিব বলেছিলেন এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশই ‘ফেবারিট’। তাই বলে বলে–কয়ে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই! বিশ্বাস না হলে আরও একবার দেখে নিন এই সিরিজের স্কোরলাইনটা, ৩-০ ই।
একসময় ক্রিকেট বিশ্বে পড়ে পড়ে মার খেয়েছে বাংলাদেশ। একসময় বাংলাদেশ ছিল ক্রিকেট বিশ্বের পুঁচকে এক দল। একসময় বাংলাদেশের কপালে জুটেছে অসহনীয় সব পরাজয়ের যন্ত্রণা। প্রতিপক্ষের হাতে ধবলধোলাই হওয়ার লজ্জা। সেই বাংলাদেশ এখন ক্রিকেট বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে পাঠিয়ে দিয়েছে এই বার্তা, পড়ে পড়ে মার খাওয়ার দিন শেষ। এই বাংলাদেশ অন্য রকম। যেকোনো দলের সামনে এখন এই দলটা বুক চিতিয়ে লড়াই করতে পারে। তথাকথিত ‘বড়’ দলগুলোকে হারানো এখন আর নিছক কোনো ‘দুর্ঘটনা’ নয়।
প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাইয়ের তীব্রতম যন্ত্রণা উপহার দেওয়াও তাই এখন বাংলাদেশের কাছে নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে দশবার প্রতিপক্ষকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হাতে ধবলধোলাইয়ের প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছিল কেনিয়ার। ২০০৬ সালের মার্চে সেই সিরিজে নিজেদের মাঠে চার ম্যাচের সব কটিতেই কেনিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের আগস্টে আবার শিকার কেনিয়া। এবার কেনিয়ার মাঠে গিয়েই ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ প্রমাণ করে দিয়েছিল, একসময় যে কেনিয়ার পিছু হাঁটত বাংলাদেশ, একসময় যে কেনিয়া আর বাংলাদেশ শক্তির বিচারে ছিল সমানে-সমান; তাদের পেছনে ফেলে যোজন যোজন এগিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
২০০৬ সালটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ছিল সুবর্ণ এক বছর। কারণ ওই বছরেই বাংলাদেশ আরও দুই বার হোয়াইটওয়াশ করেছে প্রতিপক্ষকে। বছরের শেষ দিকে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাদেশ জানিয়ে দিয়েছিল, জিম্বাবুয়েকেও পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দিন এখন আসন্ন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের চতুর্থ হোয়াইটওয়াশের শিকার হয় স্কটল্যান্ড। এবারের সিরিজটি অবশ্য ছিল দুই ম্যাচের। এক বছরেই চার চারটি হোয়াইটওয়াশ! ভাবা যায়!
পরের ধবলধোলাইটি দিতে অবশ্য বাংলাদেশকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ২০০৮ সালের মার্চে বাংলাদেশে এসে আয়ারল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে হেরে যায়। ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দেশটির খেলোয়াড়-বিদ্রোহের সুবাদে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আসে ক্যারিবীয় ক্রিকেট ঐতিহ্যকে বধ করার। সেই সুযোগ হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব পাওয়া সাকিব আল হাসান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রথমে টেস্টে, এরপর ওয়ানডেতেও ধবলধোলাই করে প্রতিপক্ষকে।
এত দিন পর্যন্ত অনেক নিন্দুকই বলত বাংলাদেশের সবগুলো ধবলধোলাই তো তুলনামূলক দুর্বল বা সমশক্তির দলের বিপক্ষে। ২০১০ ছিল সেই নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করবার বছর। বাংলাদেশের চেয়ে কাগজে-কলমে ঢের এগিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ডকে ২০১০ সালের অক্টোবরে ৪-০তে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। যেটি বিখ্যাত হয়ে যায় বাংলাওয়াশ নামে। সেই নিউজিল্যান্ডকেই ২০১৩ সালের শেষে আবারও বাংলা-ধোলাই দেয় বাংলাদেশ। বাঘের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয় কিউই পাখি।
বাংলাদেশের নবম ধবলধোলাইয়ের শিকার হয় ফের জিম্বাবুয়ে। ২০১৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ৫ ম্যাচের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসে জিম্বাবুয়ে। সেবারও বাংলাওয়াশের লজ্জা নিয়েই দেশে ফিরতে হয় অতিথিদের। আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এই গর্বের অধ্যায়ে যোগ হলো নতুন আরেকটি পাতা। যেই পাকিস্তানের বিপক্ষে পাক্কা ১৬টি বছর জয় বঞ্চিত ছিল এই দল, সেই পাকিস্তানকেই ওয়ানডেতে বাংলাওয়াশের লজ্জা দিল বাংলাদেশ।