ঝুঁকিতে তিন দেশে ২০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী

Indian Visaমেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সংকটে পড়তে যাচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রায় ২০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী। আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের এমআরপি প্রদান করতে হবে। এ জন্য মালয়েশীয় কোম্পানি আইরিশ কর্পোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। অথচ এখন পর্যন্ত তিন দেশে মাত্র ৬১ হাজার ৯৩০টি এমআরপি ইস্যু করতে সক্ষম হয়েছে তারা। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২৫ হাজার ৯১২টি আবেদন। অর্থাৎ আগামী ৭ মাসে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০টি এমআরপি ইস্যু করতে হবে। সময় বাড়ানো না হলে বাধ্য হয়ে দেশে ফেরত আসতে হবে নির্ধারিত সময়ে এমআরপি না পাওয়া বাংলাদেশীদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র আরও জানায়, আউটসোর্সিংয়ের দায়িত্বে থাকা মালয়েশীয় কোম্পানি আইরিশ কর্পোরেশনের অদক্ষতা ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে এ অবস্থার তৈরি হয়েছে। ফলে নির্ধারিত সময়ে এসব দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীদের হাতে এমআরপি পৌঁছানো প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আগামী ৩ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা দাখিল করতে আইরিশ কর্পোরেশনকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি সমস্যা চিহ্নিত করতে স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই এসব দেশ ভ্রমণে যাচ্ছে। ১৫ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আউটসোর্সিং-সংক্রান্ত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এসব দেশে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এমআরপি প্রদানে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও যদি সমস্যা হয় বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।বৈঠক সূত্র জানায়, বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক এনএম জিয়াউল আলম সভাকে জানান, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইসিএও) গাইডলাইন অনুযায়ী আগামী নভেম্বরের মধ্যে প্রবাসীদের মধ্যে এমআরপি প্রদান সম্পন্ন করতে হলে সেপ্টেম্বরে এনরোলমেন্ট শেষ করতে হবে। আইরিশ কর্পোরেশনের কাছে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা চাইলে তারা আংশিক প্রতিবেদন প্রেরণ করেছে।

তাতেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের এনরোলমেন্টের চিত্র তুলে ধরে পাসপোর্ট অধিদফতরের ডিজি বলেন, এনরোলমেন্টের বর্তমান হার সন্তোষজনক নয়। সেবা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে তাতে যে উদ্দেশ্যে আউটসোর্সিং কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তা সফল হবে না। পাশাপাশি সৌদি আরব থেকে আইরিশ কর্তৃক গৃহীত পাসপোর্ট ফি ও সার্ভিস চার্জ নিয়মিত দূতাবাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা না করার অভিযোগ এসেছে। তাছাড়া সৌদি আরবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মুদ্রিত প্রায় ৬ হাজার পাসপোর্ট স্বাক্ষরের অভাবে বিতরণ করা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত মাত্র ২০০ পাসপোর্ট স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের পাসপোর্টে স্বাক্ষর করার অনুমতি দেয়া হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি না থাকায় জটিলতা রয়েছে।সূত্র জানায়, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রায় ২০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশীকে এমআরপি প্রদানে সরকারের সঙ্গে মালয়েশীয় কোম্পানি আইরিশ কর্পোরেশন বারহেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার।

২০১২ সাল থেকে তারা কাজ করলেও গত ২৩ মার্চ পর্যন্ত তারা সব মিলিয়ে এনরোলমেন্ট করতে পেরেছে ৮৭ হাজার ৮৪২টি। এর মধ্যে ৬১ হাজার ৯৩০টি এমআরপি ইস্যু করতে পেরেছে তারা।সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের চিঠি পাওয়ার বিষয় স্বীকার করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক এনএম জিয়াউল আলম যুগান্তরকে বলেন, তাদের আমরা চুক্তি অনুযায়ী কাজ করতে বলেছি। এখনও যদি আইরিশ কর্পোরেশন চুক্তি অনুযায়ী কার্যক্রম চালু করে তাহলেও নির্ধারিত সময়ে সবাইকে এমআরপি প্রদান সম্ভব।আইরিশ কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত ১২ এপ্রিল সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এক চিঠি দিয়েছেন বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, আইরিশ সৌদি আরবে প্রতিদিন ১ হাজার ৭০০ এমআরপি প্রসেসিং করছে।

গত ৭ এপ্রিল দূতাবাসে পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৭ হাজার ৬২৭টি পাসপোর্টের প্রসেস হয়েছে। এর বিপরীতে নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সাত কোটি ১৪ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬২ টাকা জমা হওয়ার কথা। কিন্তু তারা মাত্র দুই কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার ২৬৫ টাকা জমা করেছে। জন্মনিবন্ধন ফির নির্ধারিত টাকাও তারা জমা করেনি। এ কারণে অতি দ্রুত আইরিশকে অর্থ জমা দেয়ার নির্দেশনা দিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।এমআরপি নিয়ে গত ৯ এপ্রিল এমআরপিসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এমআরপি বিতরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, কাজে যতœবান না হলে আগামী এক মাস পর চুক্তি বাতিল করা হবে।

চুক্তি অনুযায়ী আবেদন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র (এপিসি) চালু করার নির্দেশ দেন তিনি। এর আগে গত ১৯ মার্চ এমআরপিসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে আইরিশ কর্পোরেশন অঙ্গীকার করেছিল, তারা ২৫ মার্চের মধ্যে সব এপিসি চালু করে ২৬ মার্চ সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব লোকবল নিয়োগ করবে। সৌদি আরবে প্রতিদিন কমপক্ষে ৯ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ায় কমপক্ষে ৫ হাজার এনরোলমেন্ট করবে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনরোলমেন্টের সব কাজ সম্পন্ন করবে। কিন্তু এর কোনোটিই বাস্তবায়ন করেনি আইরিশ কর্পোরেশন। ৯ এপ্রিলের বৈঠকে বিষয়টি পাসপোর্টের ডিজি এনএম জিয়াউল আলম উপস্থাপন করলে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, প্রবাসীদের একটি বড় কর্মযজ্ঞে এ ধরনের একটি ভুয়া কোম্পানিকে কেন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি গভীরভাবে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থার (আইসিএও) বেঁধে দেয়া ২৪ নভেম্বরের মধ্যে সৌদি আরবে ৮ লাখ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬ লাখ এবং মালয়েশিয়াতে ৬ লাখ বাংলাদেশীকে এমআরপি দিতে হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.