এমিরেটসে কত মধু!

Civil_aviationঢাকা: মধ্যপ্রাচ্যের শেখরাজ্য আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমানকে কোনো সুবিধা দেওয়া না হলেও এদেশে ঠিকই একের পর এক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে এমিরেটস এয়ারলাইন্সে।

কয়েক বছর ধরে তো সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের ভিসাই দেওয়া হচ্ছে না। গেল বছরের শেষের দিকে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশটি সফর করে ভিসা চালু করাসহ উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু আদায় করতে পারেননি।

আমিরাতে বাংলাদেশের শ্রম বাজার বন্ধ, ব্যবসায়ী কিংবা পর্যটকদের ভিসা বন্ধ। এমনকি ৩/৪ বছর ধরে ভিসা না হওয়ার কারণে দুবাইয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অফিসে কর্মকর্তা পাঠানো সম্ভব হয়নি। কয়েক বছর ধরে কোনো কর্মকর্তাকে ভিসা না দেওয়ায় প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও বিমান কাউকে সেখানে পাঠাতে পারেনি। এ কারণে বিমানের দুবাই স্টেশনের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।

কিন্তু আমিরাত আমাদের স্বার্থ না দেখলেও দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা থেকে পরিচালিত এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এমিরেটস এয়ারলাইন্সের জন্য সবই করছে। এমিরেটসের যখনই যা প্রয়োজন তখনই তা দিতে উদার মনে কাজ করছে সরকারের এই দুটি সংস্থা।

অথচ এই সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে ৬৬টি বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে আরব আমিরাত। সপ্তাহে ঢাকা থেকে দুবাই যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাতটি ফ্লাইট। সেখানে এমিরেটস এয়ারলাইন ঢাকা-দুবাই রুটে চালায় ২১টি ফ্লাইট।

ঢাকা থেকে এমিরেটস বাংলাদেশি যাত্রীদের দুবাই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য নিয়মানুযায়ী যাত্রী প্রতি রয়ালিটি চার্জ পেতে পারে বিমান। কিন্তু সে বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে বেবিচক কিছুই করছে না। বরং তারা যেভাবে যা চাচ্ছে তা-ই দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, আমিরাতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিমানও চাইলে দুবাই থেকে অন্য রুটে যাত্রী নিতে পারবে। তবে এমিরেটসের মতো এতো বড় এয়ারলাইনসের সঙ্গে বিমানের পক্ষে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। কারণ দুবাই থেকে তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যখন খুশি কোনো যাত্রী নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু ওই ধরনের সুযোগ বিমানের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। বেবিচকের কর্মকর্তারা যখন এমিরেটসের সঙ্গে দর-কষাকষি করেন তখন এসব বিষয় বিবেচনা করেই তাদের সঙ্গে চুক্তি করা উচিত।

অতীতে বিদেশি কোনো এয়ারলাইন্সকে স্লট (উড়োজাহাজ অবতরণের অনুমতি) দেওয়ার ক্ষেত্রে বিমানের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। এখনও স্লট দেওয়ার আগে বিমানকে এ ধরনের বৈঠকে ডাকা হয়। বিমান তাদের বক্তব্য ও যুক্তি দেয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বেবিচকের কর্মকর্তাদের ইচ্ছেমতোই সবকিছু হয়। আর লংঘিত হয় বিমান ও দেশের স্বার্থ।

এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে বিমানের ওই কর্মকর্তা বলেন, হংকং এ যেতে কেউ যদি তাদের নিজস্ব এয়ারলাইন্স ক্যাথে প্যাসিফিকে টিকেট কাটেন তাদের ভিসা কখনোই প্রত্যাখাত হয় না। বিমান কিংবা অন্য কোনো এয়ারলাইন্সে কাটলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিসা পান না যাত্রীরা। অর্থ্যাৎ ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হংকং এর মালিকানাধীন ক্যাথে প্যাসিফিকের স্বার্থ দেখেই ভিসা ইস্যু করে থাকে। একইভাবে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে টিকেট কাটলে সহজেই ওই দেশের ভিসা মেলে। একই ক্ষেত্রে বিমান মন্ত্রণালয় ও বেবিচক বিদেশিদের মতো বিমান এবং দেশের স্বার্থ দেখে না। বরং তারা উল্টো কাজটিই বেশি করে থাকে।

বিমান ও দেশের স্বার্থ রক্ষার মূল ভূমিকায় থাকার কথা বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা থেকে পরিচালিত এয়ারলাইন্সের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স হওয়া সত্ত্বেও বিমান কিংবা দেশের কোনো স্বার্থ দেখে না এদের কেউই।

বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দুবাই বিমানবন্দরে বিমানের উড়োজাহাজ অবতরণ করলে বোর্ডিং ব্রিজ দেওয়া হয় না। বরং অনেক দূরে যাত্রীদের নামতে হয়। দুবাইয়ে বিমান বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। অন্যদিকে দেশেও বিমাতাসুলভ আচরণ করছে খোদ বেবিচক। একই সময়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ নামলে বোর্ডিং ব্রিজ দেওয়া হয় এমিরেটসকে।’

বিমানের আরেক কর্মকর্তা বলেন, এতদিন বিমানের সক্ষমতা ছিল না বলে এমিরেটসকে বিপুল সংখ্যক স্লট (ফ্লাইট অবতরণের অনুমতি) দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিমানের বহরে ব্র্যান্ড নিউ চারটি বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর উড়োজাহাজ যুক্ত হয়েছে। এ বছরের মধ্যেই যুক্ত হবে আরো দুটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ। এ সময়ের মধ্যে বিমান দুটি বোয়িং ৭৭৭ ২০০, দুটি বোয়িং ৭৩৭ এবং দুটি ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে। এছাড়াও ২০২০ সালের মধ্যে বহরে যুক্ত হবে আরো চারটি বোয়িং ড্রিমলাইনার।

‘এ অবস্থায় এমিরেটস আমাদের যাত্রী রয়ালিটি ছাড়া নিয়ে যাবে তা মেনে নেওয়া যায় না। আরব আমিরাতের কাছ থেকে আমরা ভিসা চালু করা, বোর্ডিং ব্রিজ পাওয়াসহ অনেক ধরনের সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছি। খোদ প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বার্থে আমিরাত ছুটে গিয়েছেন দেশের অধিকার আদায়ে। আর দেশের বিমান মন্ত্রণালয় ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এমিরেটসের স্বার্থে কাজ করছে। এমিরেটসে কত মধু যে তারা আমাদের স্বার্থ না দেখে ওদেরটা দেখছে, যোগ করেন বিমানের ওই কর্মকর্তা’।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.