দেশের শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনকে ছাড়িয়ে ৭টি প্যারামিটারে শীর্ষ স্থান দখলে নিয়েছে বাংলালিংক। এগুলো হল কল সেটআপ সাকসেস রেট, কলড্রপ নিয়ন্ত্রণ, এভারেজ ডাউনলোড স্পিড, ইন্টারনেট লেভেল, এভারেজ অফলোড স্পিড, অপারেশনাল কেপিআই ও এডজ (টু জি ইন্টারনেট) স্পিড। থ্রিজি সেবায় গতির দৌড়েও এগিয়ে রয়েছে বাংলালিংক। সম্প্রতি বিটিআরসির এক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি এ ব্যাপারে অফিসিয়াল কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি। তবে বলেছেন, প্রতি মাসেই তারা ৬টি মোবাইল ফোন অপারেটরের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে জরিপ করে থাকে। গত ফেব্রয়ারি মাসের জরিপে বাংলালিংক সম্পর্কে তারা উল্লিখিত তথ্য পয়েছে। এর আগে এক জরিপে দেখা গেছে থ্রিজি স্পিডে সবার শীর্ষে ছিল রবি আজিয়াটা। জরিপে বলা হয়েছে, গ্রাহক ভোগান্তি, কলড্রপ, কল সেটআপ সাকসেস রেট, ডাউনলোড স্পিডসহ কোনো ক্ষেত্রেই মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল বিটিআরসির কোনো টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। সে হিসাবে এখন সবার পেছনে অবস্থান রয়েছে সিটিসেল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ ফেব্রয়ারি থেকে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর ও অন্যান্য জেলায় সরেজমিন থ্রিজি ও টুজি সেবা পরিস্থিতিসহ এ ৭টি প্যারামিটারে পর্যবেক্ষণ শেষে একটি সমীক্ষা চালায় বিটিআরসির প্রতিনিধি দল। পরে সবগুলো বেসরকারি অপারেটরের অফিসে গিয়েও নেটওয়ার্ক থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
বিটিআরসির তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলালিংকের কল সেটআপ সাকসেস রেট ৯৯.২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরীতে বাংলালিংকের টার্গেট রেট ৯৯.৭ শতাংশ। ঢাকার আশপাশের এলাকায় বাংলালিংকের এ রেট ৯৯.২ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ওঠা-নামা করে। গ্রামীণফোনের এ রেট ৯৮.১ (কম্বাইন্ড), রবি আজিয়াটার ৯৭.৭৯ শতাংশ। অপর দিকে সিটিসেল, এয়ারটেল ও টেলিটক এ প্যারামিটারে বিটিআরসির কোনো টার্গেটই পূরণ করতে পারেনি।
বিটিআরসির জরিপে দেখা গেছে, কলড্রপ নিয়ন্ত্রণ রেটে বাংলালিংকের স্থান দশমিক ৪ শতাংশ। অপর দিকে শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের কলড্রপ সংখ্যা ১.৪৩ শতাংশ। যা বাংলালিংকের চেয়ে ১ দশমিক ০৩ শতাংশ বেশি। আর রবি আজিয়াটার ১.৩০ শতাংশ। বিটিআরসির নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি অপারেটরে এ কলড্রপ রেট থাকতে হবে ২ শতাংশের নিচে।
এডজ (টু জি ইন্টারনেট) সেবায় বাংলালিংকের স্পিড এখন সবার উপরে ১৩৫.৯ কেবিপিএস। চট্টগ্রাম মহানগরীকে ১৫১.৯ শতাংশ। গ্রামীণফোনে ওই স্পিড রয়েছে ১২০.০ শতাংশ। রবি আজিয়াটার ১১৫.০ শতাংশ। তবে গ্রামীণ পর্যায়ে এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে গ্রামীণফোন ৩৩.৯৯ কেবিপিএস। আর বাংলালিংকের অবস্থান ৩৫.৭ কেবিপিএস। এ ক্ষেত্রেও সিটিসেল কোনো টার্গেট পূরণ করতে পারেনি।
জরিপ অনুযায়ী এভারেজ ডাউনলোড স্পিডে ফেব্রুয়ারি মাসে সবার শীর্ষে ছিল বাংলালিংক ২১৪৯.৭ কেবিপিএস। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য অপারেটেরের স্থান ছিল অনেক নিচে। তবে জরিপে সিটিসেলের এ ক্ষেত্রে কোনো স্পিড পাওয়া যায়নি গ্রাম পর্যয়ে। গড়ে আপলিংক স্পিডেও সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলালিংক। তাদের স্থান ১৬৫.৩ কেবিপিএস। অপর দিকে গ্রামীণফোনের এ অবস্থান মাত্র ৫৭ কেবিপিএস। বিটিআরসির জরিপে রবি আজিয়াটা ও সিটিসেলের কোনো ডাটা পাওয়া যায়নি।
অপারেশনাল কেপিআইতে সব মোবাইল ফোন অপারেটরের বিটিএসগুলো (টাওয়ার) প্রতি মাসে কী পরিমাণ নষ্ট থাকে তার একটি জরিপ চালিয়েছে বিটিআরসি। এ ক্ষেত্রে বাংলালিংকের স্থান ছিল দশমিক ০৪ শতাংশ, গ্রামীণফোনের দশমিক ১৫ শতাংশ আর রবি আজিয়াটার দশমিক ১৩ শতাংশ। জরিপে দেখা গেছে গ্রাম পর্যায়ে সিটিসেলের বেশিরভাগ বিটিএস বছরের অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে। ঢাকা মহানগরী ও বিভাগীয় শহরগুলোতেও শতকরা ৭৫ ভাগ নষ্ট পাওয়া গেছে সিটিসেলের বিটিএস। যে কারণে গ্রাহক ভোগান্তিতে এখন সবার শীর্ষে সিটিসেল।
মূলত বেসরকারি অপারেটরগুলোর থ্রিজির বিস্তার (রোলআউট) ও টুজি সম্পর্কিত বাধ্যবাধ্যকতা কতটা পূরণ হয়েছে তা দেখার জন্য কাজ করে বিটিআরসির প্রতিনিধি দলগুলো। দেশজুড়ে ঘুরে পর্যবেক্ষণ শেষে থ্রিজি ও টুজি সেবাদানকারী অপারেটরগুলোর এ বিষয়ক অগ্রগতির একটি চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিনিধি দল। পরে তা বিটিআরসির চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
থ্রিজির লাইসেন্সের নীতিমালা অনুসারে নয় মাসের মধ্যে সবগুলো বিভাগীয় শহরে উচ্চগতির এ মোবাইল ইন্টারনেট সেবা নিয়ে যাওয়ার কথা। ফেব্রুয়ারি মাসে চার অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল এবং বাংলালিংকের থ্রিজি লাইসেন্স নেয়ার এক বছর তিন মাস পূর্ণ হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত গ্রামীণফোনের ৫ কোটি ১৫ লাখ, বাংলালিংকের ৩ কোটি ১৬ লাখ, রবি আজিয়াটার ২ কোটি ৬৫ লাখ, এয়ারটেলের ৭৯ লাখ, সিটিসেলের ৯ লাখ গ্রাহক রয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন আর সিটিসেলের গ্রাহকদের অভিযোগই সবচেয়ে বেশি। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, অপারেটরদের নিজস্ব গ্রাহক সেবা কেন্দ্র ছাড়াও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সেবা ও মূল্যসংক্রান্ত বিষয়ে নানা অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। গত বছর সেলফোন, ফিক্সড ফোন এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের বিভিন্ন সেবার বিষয়ে গ্রাহকরা দেড় হাজারের বেশি অভিযোগ জানিয়েছেন এর মধ্যে ৫শর বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে গ্রামীণফোনের গ্রাহকদের কাছ থেকেই। এছাড়া বাংলালিংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে ২শর বেশি। অন্য দুই সেলফোন অপারেটর রবি ও এয়ারটেল এবং ওয়াইম্যাক্স অপারেটর বাংলালায়ন ও কিউবির গ্রাহকরাও বিভিন্ন সেবা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে দেয়া এসব অভিযোগের বাইরেও প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অপারেটরদের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে জানানো হয়।
সেবা নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ ও তা সমাধানের প্রসঙ্গে বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম জানান, গ্রাহক সুরক্ষা নীতিমালা তৈরির কাজ করছে বিটিআরসি। এটি চূড়ান্ত হলে সেবা নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমবে। বর্তমানে গ্রাহকের বিভিন্ন অভিযোগ গ্রহণ ও তা সমাধানে বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ দায়িত্ব পালন করছে। – See more at: http://www.jugantor.com/last-page/2015/04/22/252602#sthash.0g7b7Q2u.dpuf
আরও খবর