জনসেবা প্রদানে হয়রানি ও সরকারি অর্থের অপচয় রোধে নতুন করে কর্মপন্থা নিরূপণে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আমদানি রফতানি বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাজস্ব, ব্যাংকিং প্রভৃতি খাতে দুর্নীতির কারণ অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করতে টিম গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানী এই টিম এখন ব্যাপক ভিত্তিক অনুসন্ধানে নেমেছে।
এদিকে, এ অনুসন্ধানের নানা তথ্য নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো খাতে অস্বস্তি বিরাজ করছে। সূত্র মতে, দুদক থেকে বিশেষায়িত কিছু তথ্যাদি চাওয়া হয়েছে যা নিয়ে কারো কারো আপত্তি। তবে অনানুষ্ঠানিক এ আপত্তি সত্ত্বেও তথ্যাদি দুদকে পাঠাতে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাগুলো।
জানা গেছে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই দুদক এ উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে একজন প্রতিনিধি দুদকের এ টিমে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবেন যিনি দুদকের প্রয়োজনীয় যোগাযোগের মাধ্যমে হিসেবে কাজ করবেন। এই টিম জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতাগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করবে। সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি ও দুর্নীতির যে কারণ রয়েছে তা চিহ্নিত করবে। পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো চিহ্নিত করার পর দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে এ টিম। পাশাপাশি প্রক্রিয়াগত জটিলতা থাকলে সে বিষয়েও সম্ভাব্য সমাধানের সুপারিশ করা হবে।
সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে— কর্মকর্তাদের নাম, পদবি, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর প্রভৃতি। সংশ্লিষ্ট সংস্থার ক্ষেত্রে যেমন আয়করের ক্ষেত্রে আয়কর ম্যানুয়াল, আয়কর বিভাগের অর্গানোগ্রাম, অধ্যাদেশ প্রভৃতি। প্রতিটি বিভাগের ক্ষেত্রেই এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, রাজস্ব প্রশাসনে বিশেষ করে কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট খাতের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির নানা অভিযোগ রয়েছে। জমাকৃত এসব অভিযোগের তথ্যাদিও চেয়েছে দুদক টিম। আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ও আগামী বছরের লক্ষ্যমাত্রা, অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য গৃহীত প্রকল্প তালিকা, ব্যয় বরাদ্দ ও গৃহীত প্রকল্পের হাল অবস্থাও জানাতে বলা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার সোর্সমানির সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কিনা— সে ব্যাপারেও তদন্ত করবে দুদক। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে সোর্স মানির পরিমাণ, বিতরণকৃত টাকা ও ব্যয় সমন্বেয় হিসাব জানতে চেয়েছে দুদক। সাধারণত, সোর্স মানি ব্যবহারে অনিয়মের বিষয়েও দুদকে অভিযোগ রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দুর্নীতির কারণে জিডিপিতে প্রায় আড়াই শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দুদকের এ উদ্যোগে সামগ্রিক বিষয়গুলোর তথ্যাদি যাচাইবাছাই করে শুদ্ধাচার কৌশল প্রয়োগ ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও এর আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণের অর্থের অপচয় রোধই এর মূল লক্ষ্য।