নিজেদের পণ্য তালিকায় চূড়ান্তভাবে বাণিজ্যিক জেট যুক্ত করেছে জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হোন্ডা। ম্যানুফ্যাকচারিং পাওয়ারহাউজ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে এবং প্রবৃদ্ধির পরবর্তী স্তরে পৌঁছতে নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উড়োজাহাজ নির্মাণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বৃহস্পতিবার জাপানে হোন্ডা জেটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। টোকিওর হানেদা বিমানবন্দরে লাল ও সাদা রঙের উড়োজাহাজটি অবতরণ করলে সাংবাদিকদের মধ্যে ছবি তোলার ধুম পড়ে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট তাকানোবু ইতো তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘হোন্ডার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উড়োজাহাজের ব্যবসা শুরু করার স্বপ্ন ছিল আমাদের। উড়োজাহাজটি তৈরি করতে পেরে আমরা গর্বিত।’ তিনি আরো জানান, ‘সেবা ও স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্রে নতুন মান তৈরি করবে আমাদের উড়োজাহাজটি।’
১৯৪৮ সালে মোটরসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার হিসেবে যাত্রা করেছিল হোন্ডা। পরবর্তীতে কৃষি ও বিদ্যুত্ খাতের জন্য সহায়ক যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু করে তারা। জাপান সরকারের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৬৩ সালে প্রথম গাড়ি তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। উড়োজাহাজ তৈরির মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত বছর পরে নতুন ব্যবসা শুরু করল এ কোম্পানি।
হালকা জেটটি ক্রুসহ সাতজন যাত্রী বহনে সক্ষম। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেই এ উড়োজাহাজ বাজারজাত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও চীনের ধনী ব্যক্তিদের সম্ভাব্য গ্রাহক হিসেবে নির্ধারণ করেছে কোম্পানিটি। এসব দেশের ধনীদের ব্যক্তিগত ভ্রমণকাজে এ ধরনের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বিশ্ববাজারে এ ধরনের ছোট উড়োজাহাজ তৈরির শীর্ষ দুটি কোম্পানি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সেসনা ও ব্রাজিলের এমব্রেয়ার। উড়োজাহাজ ম্যানুফ্যাকচারাররা সাধারণত ইঞ্জিন সংগ্রহ করে সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে। তবে হোন্ডা কোম্পানি তাদের জেট নির্মাণে নিজস্বভাবে তৈরি ইঞ্জিন ব্যবহার করবে। নর্থ ক্যারোলিনায় হোন্ডার জেট তৈরি কারখানায় ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্যায়ে তীক্ষ নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত করেই উত্পাদনের পরবর্তী পর্যায়ে পৌঁছানো হয় এ কোম্পানির যন্ত্রাংশ।
হোন্ডা এয়ারক্রাফট এরই মধ্যে ১০০টির বেশি উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ পেয়েছে, যার মধ্যে বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাহক। আপাতত বছরে ৫০টি নতুন জেট তৈরি করবে হোন্ডা। তবে ২০১৭ সালের মধ্যে উত্পাদন বাড়িয়ে ১০০টিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির। এ উড়োজাহাজগুলো দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ায়ও বিক্রি করা হবে। সাধারণভাবে এ জেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার। উড়োজাহাজ বিক্রির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে বার্ষিক ৪৪৬ মিলিয়ন ডলার আয়ের পরিকল্পনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। মুনাফা বৃদ্ধিতে ও ব্যবস্থাপনা সেবা প্রদানের জন্য জেট ইঞ্জিন বিক্রিরও পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।