বিশেষ প্রতিনিধি : চলতি বছরের (২০১৭) মধ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার আধুনিক সংস্করণ লং টার্ম এভুলেশন (এলটিই) বা ফোরজি সেবা পৌছে যাবে। টেলিকম সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এতে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি। উচ্চ আদালতের রায়ে বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ লিমিটেডকে (বিআইইটি) (ব্র্যান্ড নেম ওলো) দেয়া বিডব্লিউএ লাইসেন্স এবং অনুমোদিত ৮০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম-এর ফ্রিকোয়েন্সি বৈধ ঘোষনা করায় দ্রুত এই সেবা চালু সম্ভব হবে। এর ফলে ওলোর ফোরজি (এলটিই) সেবা দিতে আার কোন বাধা রইল না। এ প্রসঙ্গে বিআইইটি‘র (ওলো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ুলিয়া অ্যাকসিউটিনা বলেন বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন (বিটিআরসি) তাদেরকে যে লাইসেন্স ও ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্ধ দিয়েছিল উচ্চ আদালতের রায়ে সেটা বৈধ হওয়া নিঃসন্দেহে এটি দেশের মোবাইল ফোন গ্রাহক ও তাদের কোম্পানীর জন্য একটি মাইলফলক। তিনি বলেন, তারা ইতিমধ্যে দেশব্যাপী প্রত্যন্ত অঞ্চলে এলটিই সেবা পৌছে দেয়ার কাজ শুরু করেছেন। এজন্য অতাধুনিক ও উন্নতমানের সরঞ্জাম আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিটিআরসির সঙ্গে পরামর্শ ক্রমে দ্রুত তারা এসব সরঞ্জামাটি নিয়ে আসবেন। উল্লেখ্য বাংলাদেশে প্রথম এলটিই বা ফোরজি সেবা দেয়া শুরু করে বিআইইটি। তারা ওলো ব্র্যান্ড নামে এই সেবা চালু করে।
বিটিআরসির আইনজীবী রেজা-ই রাকিব বলেন, আদালতের রায় অনুয়ায়ী প্রমানিত হয়েছে সম্পুর্ণ টেলি কমিউনিকেশন আইন অনুযায়ী বিটিআরসি ওলোকে (বিআইইটি) লাইসেন্স ও ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্ধ দিয়েছিল । কাজেই এখন থেকে ওলোর এলটিই সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে আর কোন বাধা থাকলো না।
বিআইইটি‘র (ওলো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ুলিয়া অ্যাকসিউটিনা বলেন গুরুত্বপুর্ন এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অতি দ্রুত গ্রামাঞ্চলে এলটিই সহজলভ্য হবে। ফলে উচ্চতর অনলাইন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পরামর্শসহ অনেক গুরুত্বপুর্ণ সেবা সহজ হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সংযোগ স্থাপিত হবে। পালাক্রমে এটি দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধির উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এতে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি। তিনি বলেন, এই রায় ২০২১ সালের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সহজ করে দিয়েছে।
ইয়ুলিয়া অ্যাকসিউটিনা বলেণ, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন কারণ এলটিই হল বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ও এশিয়া প্যাসেফিক রিজিওনের মধ্যে অন্যতম প্রথম নেটওয়ার্ক। আর এই নেটওয়ার্কই পারবে বাংলাদেশকে টেলিকম সেক্টরকে উন্নয়নের শিখরে পৌছাতে সাহায্য করতে। শুধুমাত্র এলটিই দিচ্ছে ১ জিবিপিএস এর থেকেও বেশি গতি ব্যবহারের সুযোগ যা বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্যান্য তারযুক্ত বা ৩জি সংযোগের থেকেও অনেক বেশি শক্তিশালী ও উচ্চতর।
তিনি আরো বলেন, আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জকে এলটিই সেবা উন্নয়নের ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করবে। স্থানীয় বাজারের জন্য এই সেবা এখন অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি মোবাইলফোন অপারেটরদেরকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় থেকে বের হয়ে অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে উন্নত সেবা প্রদানে সহায়তা করবে।
এলটিই তরঙ্গ বরাদ্ধ পাওয়া বাংলাদেশ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ দ্রুতগতিতে তাদের নেটওয়ার্ক কভারেজ বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে ৮০০, ২৬০০ এবং ৩৫০০ মেগাহার্টজের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইয়ুলিয়া অ্যাকসিউটিনা বলেণ, সর্বপ্রথম তারাই এই নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে আরো আধুনিক ও উন্নতমানের এলটিই সরঞ্জাম আনার কাজ চলছে। নতুন সরঞ্জামগুলো এসে গেলে সেবার কভারেজ আরো বৃদ্ধি পাবে। যা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রোগ্রামের সহায়তা সচল রাখবে এবং ইলেক্ট্রনিক গভর্নমেন্ট বাস্তবায়নে সাহায্য করবে। একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং উদ্যোগ এবং প্রযুক্তিগত বিভক্তির সহায়ক হয়ে এটুআই প্রোগ্রামের চাহিদা পুরন করবে।
টেলিকম সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা আরো বলেণ, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার আধুনিক সংস্করণ লং টার্ম এভুলেশন (এলটিই) বা ফোরজি সেবা চালু করলে স্মার্ট ডিভাইসের বাজার বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলে এলটিই বাজারের সম্ভাবনা বাড়বে।
ওলো ২০১৩ সালে ২১ নভেম্বর ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (বিডব্লিউএ) লাইসেন্স গ্রহণ করার পর ২০১৫ সালে তারা ১৫০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) ইন্টারনেট সেবা গ্রাহকদের প্রদান করছে। বাংলাদেশের বাজারে এর আগে এলটিই সেবার এমন গতি কেউ দিতে পারেনি।
এর আগে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও বাংলালিংকের এলটিই বাজারে প্রবেশের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে ওলোর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইগোর গ্রেকোভিচ বলেছিলেন, যদিও অপারেটর দুটির স্পিড তাদের চেয়ে কম হবে, তবুও ডিভাইসের বাজার বৃদ্ধি এবং সেবাটির জনপ্রিয়তা তৈরিতে প্রতিযোগী অপারেটররা ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে।
মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড গত আগস্ট মাসে তাদের গুলশান কাস্টমার কেয়ারে যে পরীক্ষামূলক স্পিড টেস্টটি করেছিল, তাতে তাদের ডাউনলোড স্পিড ছিল ৭১ দশমিক ২৬ এমবিপিএস। একই মাসে বাংলালিংক হেড অফিসে করা তাদের ফোরজি বা এলটিইর ডাউনলোড স্পিড ছিল ৬০ দশমিক ৯০ এমবিপিএস।
ফোরজি বা এলটিই সেবার পরীক্ষা চালানোর পর রবির চিফ টেকনোলজি অফিসার একেএম মোর্শেদ বলেছিলেন, ‘ফোরজিকে ডিজিটাল জীবনধারার অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। এই সফল পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের জানান দিচ্ছি যে, ফোরজির গতিতে আপনাদের আপন শক্তিতে জ্বলে ওঠার সুযোগ করে দেয়ার জন্য প্রস্তুত রবি। আর বাংলালিংকের প্রধান টেকনোলজি অফিসার সঞ্জয় ভাঘাশিয়া বলেছিলেণ, নতুন ফোরজি প্রযুক্তি দেশের মানুষের জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। বাংলালিংকের ডিজিটাল সার্ভিস গ্রাহকদের কাছে আরও কার্যকরভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ফোরজি নেটওয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আরও খবর