হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে পারিবারিক অশান্তিতে অতীষ্ঠ হয়ে মাহমুদা আক্তার মিতু নিজ বাসায় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। মিতু বাবা-মা এবং বোন শায়লা মোশাররফ নিনজা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) বিষয়টি জানিয়েছেন।
রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিএমপির গোয়েন্দা ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো.কামরুজ্জামান মিতুর বাবা-মা ও বোনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় তারা প্রত্যেকেই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়টি জানান বলে জানিয়েছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
তবে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, বেশকিছু নতুন তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে আমি এসব বিষয় প্রকাশ করতে পারব না।
এর আগে দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ঢাকার রামপুরার মেরাদিয়ায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফের বাসায় পৌঁছেন তদন্ত কর্মকর্তা। মিতু খুনের পর তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে দীর্ঘদিন এই বাসায় ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন টেলিফোনে বলেন, বাবুল আক্তার, তার বোন, মা-বাবা যে মিতুর উপর নির্যাতন করত, এটা মিতুর মা আর নিনজা ইন ডিটেইলস আইওকে (তদন্ত কর্মকর্তা) বলেছে। আমিও বলেছি।
‘মিতু এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চট্টগ্রাম থেকে আমার বাসায় চলে আসতে চেয়েছিল। এটার সাক্ষী ওদের বাসার কাজের মেয়ে। কিন্তু ওরা আসতে দেয়নাই। ওরা তাকে থামায় রাখছে। ’
‘এরপর সে (মিতু) আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। এটা আমরা কেউই জানতাম না। মাত্র ২-৩ মাস আগে জানছি। তাদের বাসার কাজের মেয়ে, মিতুর ছেলে মাহির, বাবুলের বডিগার্ড সাদ্দামের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টা আইওকে বলেছি। এখন আইও কাজের মেয়ে, মাহির আর সাদ্দামের কাছ থেকে বিষয়টা জেনে নিতে পারেন। ’ বলেন মোশাররফ হোসেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু তাকে আবারও অফিসে আসতে বলা হবে। কাল (সোমবার) এই মামলা নিয়ে আরেকটু কাজ করব। এরপর মঙ্গলবার চট্টগ্রামে ফিরব।
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর মোশাররফ এবং ২৬ জানুয়ারি মোশাররফ ও তার স্ত্রী সাহেদা মোশাররফকে নিজ কার্যালয়ে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তারও সিএমপিতে এসে তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। স্ত্রী খুনের মামলার বাদি হিসেবে ওইদিন বাবুল আক্তার সিএমপিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামানের কার্যালয়ে হাজির হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন।
বাবুল আক্তারের মা-বাবা এবং দুই খালাতো ভাইকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গত বছরের ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নগরীর ও আর নিজাম রোডে দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন সদর দপ্তরে কর্মরত তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।