সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দিতে বি চৌধুরী, এরশাদ ও কাদের সিদ্দিকীর দাবি

abul Hবিশেষ প্রতিনিধি: সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দিয়ে তার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দাবি জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। তারা সবাই বলেছেন, তাকে মন্ত্রী পদে ফিরিয়ে নিয়ে তার মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। তারা আবুল হাসান চৌধুরীরও সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। তারা মনে করছেন মিথ্যে অভিযোগের কারণে তাকে অনেক হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। এখন তাকে মন্ত্রীত্ব ফিরিয়ে দিয়ে সম্মান রক্ষা করা হোক।

বি চৌধুরীর দাবি, সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে দুদক যে হেনস্থা করেছে সেই ব্যাপারে দুদকের ভুল স্বীকার করে বক্তব্য দেয়াও উচিত। বি. চৌধুরী বিবৃতিতে দিয়েছেন। বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগ তুলে ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে ফিরে যায় বিশ্বব্যাংক। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকেও কথিত এই দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়ানো হয়। অভিযোগ উঠার পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদটিও হারান সৈয়দ আবুল হোসেন। বি চৌধুরী বলেন, যেহেতু ভুল তথ্যের কারণে সৈয়দ আবুল হোসেন মন্ত্রিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন সেহেতু পুনরায় মন্ত্রিত্ব দিয়ে তার মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা উচিত বলে আমি মনে করি।

বি. চৌধুরী আরও বলেন, দুদক যেভাবে সৈয়দ আবুল হোসেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে একটি ভুল তথ্যের কারণে হেনস্থা করেছে সে জন্য দুদকের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিয়ে ভুল স্বীকার করা উচিত বলে দেশবাসী মনে করে।
আবার সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে আবারও মন্ত্রী হিসেবে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তাঁর বিশ্বাস, মিথ্যা অভিযোগে আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে বিধায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মন্ত্রিত্ব পুনর্বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। তিনিও আবুল হোসেনের জন্য বিবৃতি দেন।

এরশাদ বলেছেন, যেহেতু ভুল তথ্য ও মিথ্যা অপরাধে সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছে, তাঁকে বিনা দোষে দুর্নীতির অভিযোগ বইতে হয়েছে, তাঁর ব্যক্তিগত ইমেজ ক্ষুন্ন হয়েছে, সেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব পুনর্বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করবেন বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিল, এটা প্রমাণিত। যাদের মিথ্যাচারে ও ষড়যন্ত্রে পদ্মা সেতু বিতর্কিত হয়েছে, যেসব পত্রিকা উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৎকালীন মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা ও সরকারকে অহেতুক হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে, যাদের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের মাফ চাওয়া উচিত।

এরশাদ আরও বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কানাডার আদালতে খারিজ হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের একটি দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটল। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, দীর্ঘসূত্রতা, প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়া, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার দায় কে নেবে? পদ্মা সেতুর এ অভিযোগ ঘিরে সর্বোচ্চ সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে। তাঁকে রাজনীতি ও মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে হয়েছে।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম তার লেখনীতে লিখেছেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়ন্ত্রের দায় থেকে মুক্ত হাসান-হোসেনকে নিয়ে সারা দেশে বেশ বড় রকমের তোলপাড়। দীর্ঘদিন নৈতিক সংকটে নিমজ্জিত বাংলাদেশের গলা উঁচিয়ে বলার মতো কিছু ছিল না। বিশ্বব্যাংকের অহেতুক দুর্নীতির কাল্পনিক অভিযোগ থেকে হাসান-হোসেন মুক্ত হওয়ায় তাদের ভাবমূর্তিই শুধু উজ্জ্বল হয়নি, বাংলাদেশ, বাঙালির কৃষ্টি-সভ্যতা সূর্যের মতো জ্বলজ্বলে হয়েছে। সেদিন লিখেছিলাম, ‘হোসেনকে নিয়ে তেমন ভাবছি না, আমার যত ভাবনা হাসানকে নিয়ে। হাসানকে নিয়ে ভাবনার কারণ পাশাপাশি বড় হয়েছি, নিকট আত্মীয় রক্তের সম্পর্ক, কত বড় পরিবার, দেশের জন্য আকাশছোঁয়া তাদের অবদান। সেই অবদানে কেউ কালিমা মাখলে হূদয়ে তো বাজবেই।

কিন্তু তার অর্থ এই নয়, হোসেনের জন্য কোনো জায়গা নেই আমার হূদয়ে। হাসান ভাতিজা কিন্তু আবুল হোসেন ছোট ভাই। তাকে স্নেহ করি, ভালোবাসি। সদা হাসিমুখ শত ঝড়-তুফানে কোনো দিন কোনো আদব-কায়দা, আচার-ব্যবহারে ত্রুটি দেখিনি, দেখা হলে আগে বসেনি। অমন বিনয়ী হাসি-খুশি মন্ত্রী খুব কম পাওয়া যায়। তার কাজের সময় ছিল বহু মন্ত্রীর চেয়ে বেশি। সকাল ৮টায় শুরু করে কটায় শেষ করত জানি না। মন্ত্রী থাকতে দুই-চারবার দেখা হয়েছে। কোনো কাজের কথা বললে কখনো চেষ্টার ত্রুটি করেনি। বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীকে পিতার মতো শ্রদ্ধা করতেন। নেত্রীর প্রতি গভীর আস্থা, অগাধ শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও গভীর ভালোবাসা আমায় আলোড়িত মুগ্ধ করেছে।

প্রথম যখন পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ আসে বিষয়টা তেমন জানা ছিল না। পরে খোঁজ-খবর নিয়ে জানলাম দুর্নীতি করতে হলে কাজ করতে হবে। পদ্মা সেতুর যে কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সে কাজ তখনো শুরুই হয়নি। প্রথমেই ধাক্কা খেয়েছিলাম। কোনো সন্তান জন্মের আগেই তার পক্ষে-বিপক্ষে বলা এ কেমন কথা? পদ্মা সেতুর ব্যাপারটাও অনেকটা তেমনি। পরম দয়ালু আল্লাহ সব জানেন, সব বুঝেন। তিনি সবকিছুর বিচার করেন। এমনকি কোনো কিছু সম্পর্কে খারাপ ভাবলে শাস্তি, ভালো ভাবলে পুরস্কার। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক তার চেয়ে একধাপ এগিয়ে। তাদের অভিযোগ পদ্মা সেতুতে নাকি দুর্নীতি করার চিন্তা-ভাবনা, পরিকল্পনা করা হয়েছিল। হায়রে কপাল! শুধু অনুমানের ওপর একটা দেশকে কত বড় শাস্তি, কত বড় বদনাম।

অন্যের কথা বলতে পারব না। আমি জীবনের জন্য নয়, সম্মানের জন্যে বাঁচি। এই পৃথিবীতে এমন অনেকে আছেন যারা ইজ্জত বিকিয়ে জীবন বাঁচায়, আবার এমনও আছে যারা জীবন দিয়ে ইজ্জত বাঁচায়। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগে হাসান-হোসেনের যে সম্মানহানি হয়েছে তা যদি তারা সহ্য করতে না পারত, অভিযোগমুক্ত এই শুভদিন দেখার সৌভাগ্য যদি না হতো? মনোবেদনায় তাদের জীবনহানি হতো- তাহলে কে দায়ী হতো? একজন সচিব পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা যদি বিনা দোষে জেলে যায় তাহলে তার এবং তার পরিবারের কী হয়- এসবের জবাব কী? আমাদের প্রবীণ নাগরিক সাবেক রাষ্ট্রপতি বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি, প্রখ্যাত চিকিৎসক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘আবুল হোসেনকে তার মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।

’ তিনি যথার্থই বলেছেন। যেদিন কানাডার ফেডারেল কোর্টে হাসান-হোসেনকে অভিযোগ থেকে মুক্ত নিষ্কলঙ্ক, নিষ্কলুষ বলেছে, সেইদিন সেই মুহূর্তে হাসান না হয় বাইরের লোক, কিন্তু আবুল হোসেন যে মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিল কারও পছন্দ হোক বা না হোক এটা তার প্রাপ্য। এ থেকে তাকে বঞ্চিত করা কৃততজ্ঞতার শামিল। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তার পাশে এ কবছর কজন ছিল? মনে হয় কেউ না। আল্লাহর দয়ায় তার মাথার ওপর থেকে অভিযোগের বোঝা সরে গেছে। তাই তার গলায় মালা পরিয়ে আবার মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। ভালো মানুষকে নষ্ট করলে আল্লাহর নারাজ হন, নষ্ট মানুষকেও আরও নষ্ট হতে সাহায্য করলেও আল্লাহ খুশি হন না। তাই অবিলম্বে স্বসম্মানে আবুল হোসেনকে তার হারানো মন্ত্রিত্ব ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। তার পদ তাকে ফিরিয়ে দিলে তার কী হবে বলতে পারি না, তবে আমরা কিছুটা দায়মুক্ত ঋণমুক্ত হব। বেদনায় বুক চুরমার হয়ে গেছে।

ইসলামের সূচনায় বিশ্বনবী (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হাসান-হোসেন জহরে কহরে নিহত হয়েছিলেন। বিরাট প্রভাব পড়েছিল মুসলিম উম্মাহর ওপর। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত হয়ে আমাদের হাসান-হোসেন ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন। হাসান-হোসেনের চেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সভ্যতা-ভব্যতা ও মর্যাদা। পৃথিবীর সর্বত্রই কমবেশি দুর্নীতি আছে এবং থাকবে। কিন্তু দুর্নীতি হওয়ার আগেই দুর্নীতির স্বপ্ন দেখা— এ নিয়ে এত বড় ঝড়-তুফান আগে কখনো দেখিনি। হ্যাঁ, আল্লাহতালা সব দেখেন, সব জানেন। মনে মনে ভাবার অপরাধেও তিনি শাস্তি দিতে পারেন। কিন্তু এই জগৎ সংসারে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই সে অপরাধ নিয়ে কে কী চিন্তা করছে বা কারা কী কৌশল করছে তা নিয়ে কাউকে আদালতে নেওয়া যায় এবং সে কারণে কোনো দেশ বা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এসব ছিল কল্পনার অতীত।

সেটা হাসান-হোসেনের ব্যাপার ছিল না, ছিল ন্যায় ও সত্যের। শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হওয়ায় নিশ্চয়ই আমরা আনন্দিত। আমার কথা ছিল হাসানকে নিয়ে। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী কায়সারকে নিয়ে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল সে কাউকে কাউকে নিয়ে তদবির করেছেন। আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে সাহায্য করা আমাদের দেশে কোনো অপরাধ নয়। বরং আমাদের দেশে সেটা সেবা। সেই মানবিক গৌরবের কাজটিই আমাদের প্রিয় ভাতিজা করেছে। এজন্য আমরা গর্ব করি। সে যে কোনো অন্যায় করেনি বরং যা করেছে ন্যায় করেছে, শেষ পর্যন্ত তাই প্রমাণিত হলো, এজন্য আল্লাহকে লাখ লাখ শুকরিয়া।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.