মালয়েশিয়ায় ধরপাকড়ে বৈধ পারমিটধারীরাও হয়রানির শিকার

MALYSIA-ATTOK20170304161255সপ্তাহ ধরে চলছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের ধরপাকড় অভিযান। দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিসহ শতাধিক আটকের ঘটনা ঘটেছে। অবৈধদের ধরপাকড়ের পাশাপাশি বৈধ পারমিটধারীদেরও হয়রানি করছে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশ। বৈধ পারমিটবিহীন ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া প্রবাসীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. সায়েদুল ইসলাম জানান, ধরপাকড় হচ্ছে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগের রুটিন কাজ। কাগজপত্র ঠিক থাকলে ছেড়ে দেয়ার কথা। তার পরেও যদি ধরে নিয়ে যায়, সঠিক কাগজপত্র নিয়ে হাই কমিশনে যোগাযোগ করা হলে অবশ্যই তাদের ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রি-হিয়ারিং নামে অবৈধদের বৈধ হওয়ার ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া সরকার। ওই রি-হিয়ারিং-এর আওতায় এক লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ শ্রমিক রেজিস্ট্রেশন করেন। পরে মাত্র ১৮ হাজার বাংলাদেশি ভিসা পেয়েছেন। বাকি এক লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি এখনও ভিসা পাননি। তবে এ রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হলেও আবার চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৈধ হওয়ার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামের পাশাপাশি চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়া সরকার ঘোষণা দিয়েছে অবৈধ শ্রমিকদের অস্থায়ীকাজের নিবন্ধন করতে হবে। এ নিবন্ধনের নাম দেয়া হয়েছে ই-কার্ড। অবৈধ অভিবাসীদের অভিযোগ মালয়েশিয়া সরকার বৈধতার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েও ইমিগ্রেশন থেকে ভিসা দিতে পারছে না।

এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পুত্রজায়ায় ইমিগ্রেশনের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাংলাদেশসহ মালয়েশিয়ায় শ্রমিক সরবরাহকারী অন্য দেশগুলোর দূতাবাসের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারি কাগজপত্রহীন বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার শেষ সুযোগ অ্যানফোর্সমেন্ট কার্ড (ই-কার্ড) হলো সাময়িক পাস। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুরোধে মালয়েশিয়ান সরকার এই সুযোগটি দিয়েছেন দেশটিতে বসবাসকারী কাগজপত্রহীন শ্রমিকদের বৈধ হওয়ার জন্য।

রাষ্ট্রদূত আরও জানান, বৈধ কাগজপত্র পেতে মাইইজির অধীনে চলমান রি-হায়ারিং প্রকল্পে এক লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি রেজিস্ট্রেশন করেছেন। আর অন্য সব দেশ মিলিয়ে করেছে মাত্র ১০ হাজার। এছাড়া নতুন প্রকল্প ই-কার্ড এখন পর্যন্ত ৬১ জন বাংলাদেশি পেয়েছেন। অন্যদিকে সব দেশ মিলিয়ে পেয়েছে ৩৯টি।

যাদের শারীরিক সমস্যা আছে, যাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বা চলমান রয়েছে এবং যেসব কর্মী বৈধভাবে কোনো কর্মক্ষেত্রে কর্মরত ছিলেন কিন্তু তারা মালিকপক্ষকে অবহিত না করে পালিয়ে গেছেন এবং অফিস তার বিরুদ্ধে ইমিগ্রেশনে অভিযোগ দাখিল করেছে, এই তিন শ্রেণির শ্রমিকরা ই-কার্ড করতে পারবে না।

ই-কার্ডের আওতায় আসতে বাংলাদেশিদের জোরালো আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমরা সবাইকে সচেতন করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় দূতাবাসের কন্স্যুলার টিম পাঠানো হচ্ছে। ই-কার্ডধারীরা দ্রুত পাসপোর্ট করাতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন প্রধান মুস্তাফার আলী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটিতে কোন অবৈধ লোক থাকতে দেয়া হবে না। যেকোনো স্টেট ইমিগ্রেশন অফিস থেকে ই-কার্ডের জন্য নিবন্ধন করা যাবে। যারা অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের কাজে নিয়েছে তাদের অবশ্যই ই-কার্ড করারও আহ্বান করেন তিনি।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। কোনোভাবেই এই সময় বর্ধিত করা হবে না। যারা এই সুযোগের পরেও ই-কার্ড করবেন না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ধারণা করা হচ্ছে ই-কার্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লাখ অবৈধ শ্রমিক নিবন্ধিত হবে ।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.