চলতি বছর পবিত্র হজ পালনের জন্য প্রাক-নিবন্ধন এবং টাকা জমা দিয়েও ৫৬ হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষের হজে গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত কোটার বাইরে তাদের রেজিস্ট্রেশনের কারণে এবছর তাদের হজে যাওয়া হবে না। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিন প্রাক নিবন্ধনকালে হজের টাকা জমা দিতে হয়েছে বেসরকারি হজ গমনেচ্ছুদের।
গত বছরও নিবন্ধন করে ৩৭ হাজার ৪৯৪ জন হজে যেতে পারেননি। তখন এনিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ হলেও তার সুরাহা হয়নি। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) দু:খ প্রকাশ করলেও আবার একই ঘটনা ঘটেছে। অনলাইনে প্রাক নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বহু হজ গমনেচ্ছুর অভিযোগ, প্রাক নিবন্ধনের সময় কিছু ব্যাংকে নয়ছয় হয়েছে। ফলে তাদের সিরিয়াল পিছিয়ে গেছে। এখানে টাকার বিনিময়ে কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী অসাধু এজেন্ট। অভিযোগ উঠেছে, প্রাক নিবন্ধন নিয়ে এবারও একটি সিন্ডিকেট অসাধুতা করেছে। টাকার বিনিময়ে কয়েকটি বড় হজ এজেন্সিকে সুযোগ দেয়ায় ছোট হজ এজেন্সিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও হজের আইটি ফার্ম ‘বিজনেস অটোমেশন’ জড়িত রয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদ ও হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। হজের প্রাক নিবন্ধনের সময় কোনো ধরনের অসাধুতা হয়েছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন। তিনি বলেন, প্রাক-নিবন্ধনে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ‘পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। যদি কারো হস্তক্ষেপে অসাধুতা হয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুনকে আহ্বায়ক ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল জলিলকে সদস্য সচিব করে অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৫টি ব্যাংকের ৪৮৭টি শাখার মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৯৭টি হজ এজেন্সি প্রাক নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে। এদের মধ্যে প্রভাবশালী হজ হজেন্টরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্যদের হটিয়ে দিয়েছেন। কোনো কোনো এজেন্সি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টায়ও অনুমোদন পায়নি আবার কোনো কোনো এজেন্সি ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার এক মিনিটেই অনুমোদন পেয়েছে। যথা সময়ে টাকা জমা দিলেও বিলম্বে অনুমোদন পাওয়ার ফলে সিরিয়ালে পেছনে পড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার হজ গমনেচ্ছুর হজ পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভুক্তভুগীরা সমস্যা সমাধানে ধর্ম মন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন। মন্ত্রীও প্রাক নিবন্ধনে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে হাজার হাজার মানুষ হজের নিয়ত করে নির্ধারিত সময়ে প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সব অর্থ আগাম জমা দিয়েছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে হজে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। অথচ তারা হজে যেতে পারবেন না।
এ প্রসঙ্গে ধর্মমন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল জলিল বলেন, আমরাতো তাদেরকে কোটার বাইরে প্রাক-নিবন্ধন করতে বলিনি। যেনে শুনে করা উচিত ছিল। যারা অতিরিক্ত হচ্ছেন তাদেরকে আগামী বছর হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে কেউ যদি টাকা ফেরত চায় তবে ফেরত নিতে পারেন।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, গত ১৯, ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারি এবছরের প্রাক নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে আমাদের বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ জনের নির্ধারিত কোটার বাইরে ৫৬ হাজার হজ করতে ইচ্ছুক মানুষের প্রাক নিবন্ধন হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেছি। সেখানে বলেছি, তিনি যেন সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে হজ কোটা বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ নেন। সৌদি আরব যদি আমাদের কোটা বাড়ায় তাহলে এই অতিরিক্ত নিবন্ধিতদের অনেকেই এ বছর হজে যেতে পারবেন। আর যদি কোটা না বাড়ায় তা হলে ২০১৮ সালের জন্য ৫৬ হাজার জনকে অপেক্ষা করতে হবে। তখন তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হজে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
হজ এজেন্ট আলহাজ রাশেল আহমেদ বলেন, প্রাক রেজিস্ট্রেশনের সময়ই ব্যাংকগুলো হজ গমনেচ্ছুদের নিকট থেকে টাকা নিয়েছে। এই ৫৬ হাজার জনকেও হজে যাওয়র জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, কোটার বাইরে অতিরিক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। ফরজ এবাদত হিসাবে হজে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও বেড়েছে। কিন্তু কোটা তো সীমিত। দেশে মানুষ বাড়লেও সেই হারে সৌদি কর্তৃপক্ষ কোটা বাড়াচ্ছে না।