ভিসার নামে ১১ হাজার ৬ শ’ কোটি টাকা পাচার

saudi-visa-eco-timesবাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি বিদ্যমান। সুশাসনের অভাবের কারণে অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা হচ্ছে। ফলে ভিসা কেনা বাবদ গত ২০১৬ সালে সাত দেশে ১১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি। আর সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, অভিবাসনে যাওয়া ৯০ শতাংশই প্রতারণার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে শুধু সৌদি ভিসার জন্য কর্মীদের অতিরিক্ত ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।
শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সুশাসন : সমস্যা ও উত্তরণের উপায় নিয়ে গতকাল টিআইবির এক গবেষণা জরিপে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ধানমন্ডির টিআইবি কার্যালয়ে এ গবেষণা তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর ই খোদা ও শাহজাদা এম আকরাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি সাবেক চেয়ারম্যান এম হাফিজউদ্দিন খান ও নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার পাঁচটি ধাপে ১৬ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে টিআইবি শ্রম অভিবাসন খাতের সুশাসন নিশ্চিতে বিদ্যমান আইনের সংস্কার, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের সমতা বৃদ্ধি এবং বৈধ শ্রম অভিবাসনের বিভিন্ন বিষয়সংবলিত তথ্যের প্রচারসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে।
টিআইবি বলছে, ভিসা কেনার নামে যে সাতটি দেশে গত ২০১৬ অর্থ পাচার হয়েছে, সেগুলো হলোÑ সৌদি আরব, বাহরাইন, ওমান, কাতার, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। ওই সাত দেশে ভিসার বিক্রয় মূল্য ছিল ১৬ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রকৃত ক্রয়মূল্য ছিল ৫ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ওমানে। এখানে ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। সৌদি আরবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, কাতারে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
গবেষণায় বলা হয়, গন্তব্য দেশে ভিসা কেনার জন্য অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে। গন্তব্য দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে চাহিদাপত্র সত্যায়নের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তারা তথ্যও যাচাই না করে সত্যায়ন করছে। আইন প্রয়োগের েেত্র সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। গবেষণায় শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ার ভিসা সংগ্রহ, ভিসা সত্যায়ন, কর্মীর কাছে ভিসা বিক্রি, স্বাস্থ্য পরীা, ভিসা প্রক্রিয়াকরণসহ সকল পর্যায়ে নানাবিধ সমস্যা, দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন ২০১৩ এর কিছু আইনি ও প্রায়োগিক সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে, এই আইনে শ্রম অভিবাসন খাতে সক্রিয় ‘দালাল’দের কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, আইনের অনেক ধারা নির্দেশনামূলক, বাধ্যতামূলক নয় (যেমন অভিযোগ উত্থাপন, কর্মী বাছাই, তিপূরণ আদায়) এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে অভিবাসনকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। অন্য দিকে মোবাইল কোর্টে বিচারের েেত্র শাস্তি প্রদানে এখতিয়ারসংক্রান্ত অস্পষ্টতা, রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত ও তিগ্রস্তÍ অভিবাসীর তিপূরণের বাধ্যবাধকতা না রাখা, তিপূরণসংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ ও ডেটাবেজ থেকে কর্মী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মত নয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে, অভিবাসী কর্মীর কাছে দালালদের ভিসা বিক্রি, ভিসার জন্য অতিরিক্ত মূল্য আদায়, নারী অভিবাসী কর্মীদের কাছ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালদের গড়ে ১০-১৫ হাজার টাকা আদায়, স্বাস্থ্য পরীায় কোনো কোনো েেত্র সুস্থ ব্যক্তিকে আনফিট ঘোষণা করা, পরে টাকার বিনিময়ে ফিট বলে সনদ দেয়া, পুলিশি ছাড়পত্র সংগ্রহের েেত্র নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অতিরিক্ত দালাল নির্ভরতা, সমতার ঘাটতি, চাহিদার তুলনায় অধিক গমনেচ্ছু এবং প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে শ্রম অভিবাসনে ইচ্ছুক ও প্রবাসী শ্রমিকরা আর্থিকসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে এ খাতটি। নিঃস্ব হচ্ছে পরিবারগুলো। আইনি দুর্বলতার কারণে দালালেরা সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, অজ্ঞতা ও তথ্য না জানার কারণে দালাল ও এজেন্সিরা দ্বিগুণ থেকে পাঁচ গুণ অর্থ আদায় করছে। আমাদের পাশের দেশের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ নেয়া হচ্ছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.