কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়ায়

USA-Immigrationযুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন দেশটির সব কূটনৈতিক মিশনে এ-সম্পর্কিত নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। এতে অধিকতর ও সতর্ক তদন্ত প্রয়োজন, এমন জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর কোনো ব্যক্তির ভিসা আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের কথাও বলা হয়েছে। রয়টার্সের হাতে আসা দেশটির কিছু কূটনৈতিক বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।

কূটনৈতিক বার্তায় টিলারসন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে জীবনের কোনো না কোনো সময় থেকেছেন, এমন ভিসা আবেদনকারীর ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবশ্যিক তল্লাশির’ কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে দেশটির প্রশাসনের সাবেক দুই কর্মকর্তা বলেন, ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে এ ধরনের কড়াকড়ি পরিপালন অনেক কঠিন। কারণ এজন্য অনেক বেশি জনবলের প্রয়োজন হয়। কনস্যুলার কর্মকর্তাদের দ্বারা ভিসা আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তল্লাশি খুবই বিরল ঘটনা।

দুই সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে দেশটির কূটনৈতিক দপ্তরগুলোয় ভিসা প্রদান-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে। আর এসব নির্দেশনাই দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্ণিত ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপের স্বরূপ উন্মোচন করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অভিবাসন সীমিতকরণ নিষেধাজ্ঞা, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়ায় কঠোরতা অবলম্বনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। টিলারসনের পাঠানো বিভিন্ন বার্তা বিশ্লেষণ করে রয়টার্স জানায়, এসব বার্তায় ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত অভিবাসননীতি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ঘোষিত আদেশ বাস্তবায়নে হোয়াইট হাউজের প্রত্যয়ও এতে সুস্পষ্ট। আর এ দুইয়েরই প্রতিফলন হচ্ছে, ভিসা প্রদানে কড়াকড়ির নামে সুনির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য বাস্তবিকভাবে ভিসা প্রদানই বন্ধ করে দেয়া।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হওয়ার পর গত জানুয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সীমিত করে একটি আদেশ জারি করেন। এতে সাতটি মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে দেশটির ফেডারেল আদালতে আদেশটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং এর ওপর স্থগিতাদেশ দেন আদালত। পরে চলতি মাসে এ বিষয়ে একটি সংশোধিত আদেশ দেয়া হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ছয়টি মুসলিমপ্রধান দেশের ওপর। কিন্তু এ আদেশও আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। উভয় আদেশেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলা হয়। নানামুখী আন্দোলন ও আইনি জটিলতার মুখে এ কড়াকড়ির বিষয়টিকেই এখন কাজে লাগাতে চাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।

রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের উদ্দেশে পাঠানো এসব বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভিসা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন কিছু গাইডলাইন পাঠিয়েছে। আর এর মাধ্যমে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তিকে প্রশাসন দেশটির আদালতের সামনে হাজির করতে চায় উদাহরণ হিসেবে, যাতে করে ট্রাম্পের আদেশের মূল দর্শনটি প্রতিষ্ঠা পায়। সর্বশেষ এ ধরনের বার্তাটি পাঠানো হয়েছে ১৭ মার্চ। বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের কনস্যুলারপ্রধানের উদ্দেশে পাঠানো ওই বার্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সন্দেহজনক জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করার পন্থা খুঁজে বের করার কথা বলা হয়েছে এতে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এমন এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত এসব অংশের কোনো ব্যক্তি ভিসার আবেদন করলে তার বিষয়ে কঠোর তদন্তের নির্দেশ রয়েছে। তবে ঠিক কী প্রক্রিয়ায় এটি খুঁজে বের করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। এটি বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হতে পারে।

এ বিষয়ে এরই মধ্যে অভিবাসন আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সিয়াটলভিত্তিক অভিবাসন আইনজীবী জয় গিয়ারসন বলেন, প্রতারণা ও নিরাপত্তার অজুহাতে অনেক ক্ষেত্রকেই এরই মধ্যে চিহ্নিত করা আছে। কিন্তু নতুন এ নির্দেশনার ফলে সংশ্লিষ্ট কনস্যুলার কর্মকর্তাদের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা তুলে দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি নিরূপণের পন্থা খুঁজতে গিয়ে জাতীয়তা ও ধর্মের বিষয়টি চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে। আর এ ধরনের কিছু হলে তা ট্রাম্প ঘোষিত অভিবাসন নীতিটিই প্রকারান্তরে বাস্তবায়নের শামিল হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.