ভুলের মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশ

1eb13510f845c9d6aba6b58bd2bd90ae-Mushfiq-reacts-after-he-out-1জোবায়ের আহম্মেদ অভি:   ৩ উইকেটে ২৩৬ থেকে ৩৩২ রানে অলআউট, ৯৬ রানে শেষ ৭ উইকেটের পতন!

প্রথম দিন শেষে স্কোরটা কত হবে বলে ভেবে ছিলেন? ৪০০? ৪৫০? দিনের শেষ বলটা বাদ দিলে প্রথম দিনের তিন সেশনে ৮৯ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট দিয়েছিল বাংলাদেশ। আর আজ প্রথম সেশন লাঞ্চের পর বাংলাদেশ টিকল মাত্র তিন ওভার! ৩৩২ রানে অলআউট।

প্রথম দিন শেষে করে যাওয়া মুমিনুলের একটা বক্তব্য অর্ধেক ঠিক এবং অর্ধেক ভুল প্রমাণিত হলো। আশ্চর্যভাবে বাংলাদেশের স্কোরটা তিন শর ঘরেই আটকাল, কিন্তু বোঝা গেল এই উইকেটে ৩০০ রান যথেষ্ট নয়। তাঁর আরেকটি বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হলো পুরোপুরি—ব্যাটসম্যানদের জন্য শট খেলা অসম্ভব কঠিন এই উইকেটেই পাকিস্তান দ্বিতীয় দিনটা শেষ করল ১ উইকেটে ২২৭ রানে। ১০৫ রানে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান, হাতে নয় উইকেট। এই সফরে আগের চার ম্যাচ মিলিয়ে ৩৪ রান করা মোহাম্মদ হাফিজ দিন শেষে ১৩৭ রানে অপরাজিত। ৬৫ রানে অপরাজিত আজহার তাঁর মতোই (১৩৬ বল, স্ট্রাইক রেট ৪৭.৭৯) ব্যাট করছেন। কিন্তু প্রায় ৮০-এর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে ১৭৯ বলে ১২টি চার ও ২ ছক্কা খেলা ইনিংসটায় হাফিজ বুঝিয়ে দিয়েছেন, ব্যাট চালাতে জানলে এই উইকেটেও ব্যাট করা যায়।
হাফিজ আরেকটা জিনিস শেখালেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। তাঁর ১৭৯ বলের ইনিংসটায় ১০৮টিই ডট বল। রান স্কোরিং শট খেলেছেন মাত্র ৭১ বলে। এর মধ্যে ৬০ এসেছে চার-ছক্কা থেকে। টেস্ট ক্রিকেট এটাই। কখন ঝুঁকি নেবেন না আর কখন নেবেন এই সিদ্ধান্তই ঠিক করে দেয় সব। আর এখানেই আজ ভুলটা করেছেন বাংলাদেশের ছয় ব্যাটসম্যানই। অধিনায়ক মুশফিকই সবচেয়ে দায়ী। মাথা নাড়াতে নাড়াতে যেভাবে সাজঘরে ফিরলেন, তাতেই স্পষ্ট নিজের ভুলটার জন্য কতটা অনুতপ্ত তিনি। ভুলের এই শুরুটা করেছিলেন আগের দিনের অপরাজিত সাকিব আল হাসান, নিচে নেমে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বল ভেতরের কানায় লেগে লেগ স্লিপে। মাঝখানে মুশফিক, শেষটা টানলেন সৌম্য সরকার।
অথচ সাকিব, মুশফিক, সৌম্য তিনজনই উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। ২৫, ৩২, ৩৩—তাঁদের এই তিন ইনিংসটাই বলে দেয়, সেট হয়ে আউট হওয়ার কথা। টেস্ট ক্রিকেটে যেটা অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। বাংলাদেশের সাত ব্যাটসম্যানই কমপক্ষে ২৫ রান করে করেছেন। সবচেয়ে কম বল খেলেছেন যিনি (সৌম্য, ৫৫ বল), তিনিও উইকেটে ছিলেন ১৮.১ ওভার (মুশফিকের সঙ্গে, ৬২ রানের জুটিতে)। কিন্তু উইকেটে থিতু হয়ে ইনিংসটা সেঞ্চুরিতে টেনে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, ফিফটিই পেয়েছেন সাতজনের মাত্র দুজন।
পাকিস্তানের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের একজন সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন, অন্যজন সেঞ্চুরির পথে। আটজনকে দিয়ে বল করিয়েও সাফল্য এল মাত্র একটি। অভিষিক্ত শহীদ প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারলেন না, তাসকিনের জন্য হাহাকারটা বরং বাড়িয়ে দিলেন। মাশরাফির অনুপস্থিতিতে পেস বোলিংয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা যাঁর, সেই রুবেলই মার খেলেন সবচেয়ে বেশি। ৮ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে শুভাগত হোম কোচ হাথুরুসিংহেকে মনে করিয়ে দিলেন, তিনি আদপেই স্পেশালিস্ট স্পিনার নন। অথচ এই পিচেই সাত উইকেট নিয়েছেন পাকিস্তানের স্পিনাররা।
তৃতীয় দিন সকালে বোলাররা উজ্জীবিত হয়ে লড়াই না করলে এই টেস্টে বিপদ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। ম্যাচের ​তৃতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের স্পিনাররা আরও বিষ ঢেলে দিতে পারেন। ঘুরে দাঁড়ানোর সেই লড়াইয়ের প্রেরণা বাংলাদেশ নিতে পারে আগের চারটি ম্যাচ থেকেই। তবে আজ দিন শেষে খেলোয়াড়দের দেহভাষায় ক্লান্তিটাই ফুটে বেরোল। সবচেয়ে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল তাইজুলকে, সর্বোচ্চ ১৬ ওভার তিনিই করেছেন। একমাত্র উইকেটটিও তাঁর। সেই উইকেটটিও এসেছে মুশফিকের নেওয়া অসাধারণ একটা ক্যাচ, এবং তার চেয়েও অসাধারণ এক সিদ্ধান্তে—আম্পায়ার ‘না’ বলে দেওয়ার পর রিভিউ নেওয়াতে।
এ ছাড়া সারা দিনে মুশফিক আর ‘অসাধারণ’ হয়ে থাকতে পারলেন না। ব্যাটিংয়ে তো ভুল করে এসেছেনই। কখনো অতিরক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে পাকিস্তানকে প্রচুর সিঙ্গেলস নেওয়ার সুযোগ করে দিলেন। সুযোগ করে দিলেন উইকেটে সেট হওয়ার। সবচেয়ে বড় ভুলটা করলেন দুই-দুটো ক্যাচ ফেলে। এর মধ্যে একটি ক্যাচ ধরতে গিয়ে আঘাত পেয়ে মাঠই ছেড়েছেন চোট নিয়ে।
পাকিস্তানের স্কোরের চেয়ে মুশফিকের চোটটাই বরং এখন বেশি করে দুশ্চিন্তা ছড়াচ্ছে!

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.