ভেস্তে গেল কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প!

Coxbazar-Airportএভিয়েশন নিউজ: কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প ভেস্তে গেছে। টানা দু’বছর দেন-দরবার করার পরও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও চীন। গবর্নমেন্ট টু গবর্নমেন্ট (জিটুজি) পদ্ধতিতে এ বিমানবন্দর প্রকল্প নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক হলেও কার্যত কোন সিদ্বান্তে পৌঁছতে পারেনি কোন পক্ষই।

মূলত চীনের অযৌক্তিক শর্ত ও অবাস্তব প্রস্তাবে প্রকল্পটির সব সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে। তাতে এখন চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে এ প্রকল্প। এ অবস্থায় গত সপ্তাহে সিভিল এভিয়েশন এক চিঠিতে চীনের কোম্পানিকে সাফ জানিয়ে দেয়, বিমানবন্দরের এ প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হওয়ার আর কোন উপায় নেই। এ অবস্থায় নতুন করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান ছাড়া এ প্রকল্পের কাজ শুরু করার কোন বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে যে সময় লাগবে, তা বর্তমান সরকারের মেয়াদে সম্ভব কিনা, সে নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, এ পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে ৮ বার বৈঠক হয়েছে। প্রতিটি বৈঠক টানা দু’সপ্তাহ চলে। চীনের ইতিবাচক মনোভাবের অভাবেই মূলত এত বৈঠক করেও সব ভেস্তে গেছে। সিভিল এভিয়েশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, বার বার আলোচনার অজুহাতে মূলত চীন সময় নষ্ট করেছে। এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে পরিস্থিতি, কক্সবাজার বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন কাজ করতে হলে নতুন দরপত্র ডাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে সব কিছুই নতুন করতে হবে।

যদি সব কিছু স্বাভাবিক গতিতে চালানোর উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটার কাজ শুরু করতেই দরপত্র ডেকে কার্যাদেশ দিতেই সময় লাগবে আট মাস। কার্যাদেশ দেয়ার পরও আরও কমপক্ষে ২৬ মাস লাগবে কাজ শুরু করতে। তারপর সেটা শেষ করতে লাগবে আরও কমপক্ষে তিন বছর। যা বর্তমান সরকারের আমলে আদৌ সম্ভব নয়।

সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা যায়, চীন এ প্রকল্পের কাজ কিভাবে শুরু করবে, কতদিনে শেষ করবে, কাজের ধরন, নক্সা তৈরি ও অবকাঠামোগত পূর্ণ রূপরেখা সম্পর্কে নিশ্চয়তা ছাড়াই চুক্তি স্বাক্ষর প্রস্তাব দেয়। এটা কিছুতেই সিভিল এভিয়েশনের পক্ষে গ্রহণ বা সম্মত হওয়ার মতো নয়। এ ধরনের অসম্পন্ন চুক্তিতে শুভঙ্করের ফাঁকি থেকে যায়। এতে চীনের কৌশলে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর মনোভাব ধরা পড়ে। এ কারণেই এ চুক্তি সিভিল এভিয়েশনের স্বার্থ পরিপন্থী। চীন কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন কাজের সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব না দেয়ায় মূলত এটা এখন আর বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, চীন যেভাবে চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। যেমন তাদের প্রস্তাব হচ্ছে কাজ শুরুর পর যতই সময়, যতই কাজের পরিধি বাড়ুক- সেভাবেই বিল পরিশোধ করতে হবে। এটা একটা হীনস্বার্থ চরিতার্থের প্রস্তাব। এটা মানলে দুই হাজার কোটি টাকার ব্যয় কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। তখন সিভিল এভিয়েশনকে বড় ধরনের ব্যয় সামাল দেয়া কঠিন হবে। এ জন্যই চীনের এ প্রস্তাব মানা সম্ভব হয়নি।

জানা যায়, বর্তমান সরকারের গত আমলের অন্যতম অগ্রাধিকারভিত্তিক কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বার বার হোঁচট খেয়েছে। ২০১১ সালের মে মাসে প্রথম দরপত্রে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠান মাত্র ৫শ’ কোটি টাকায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে রাজি হয়। কিন্তু সেটা সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি অনুমোদন দেয়নি। এতে তুরস্ক আর অগ্রসর হতে পারেনি। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ নিয়ে তখন মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় অনেক সমালোচনা দেখা দেয়।

এ অবস্থায় এগিয়ে আসে চীন। জিটুজি পদ্ধতিতে চীনের সরকারী প্রতিষ্ঠান এভিক সরাসরি প্রস্তাব দেয় সিভিল এভিয়েশন ও বিমান মন্ত্রণালয়ে। ২০১২ সালের আগস্টে এভিক দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। প্রকল্প ব্যয় ও আর্থিক সহায়তার সুদ নিয়ে শুরু থেকেই অন্যায্য প্রস্তাব দেয় এভিক। এভিকের প্রস্তাব ছিল এ বিমান প্রকল্পের ব্যয় কিছুতেই ২ হাজার কোটি টাকার নিচে আনা সম্ভব নয়।

জানা যায়, সিএএবি এভিক কোম্পানির প্রতিনিধিকে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের প্রযোজনীয় আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। গত বছরের ১১ নবেম্বর এভিক প্রতিনিধি ঢাকায় আসে। তারা তখন এম্পোলয়ার রিকোয়ারমেন্টসের সব শর্ত মেনে বাণিজ্যিক চুক্তি করার তাগিদ দেয়। সে মোতাবেক সিভিল এভিয়েশনও তাদের দলিলাদি চূড়ান্ত করে। কিন্তু এভিক কোন প্রকার আলোচনা ও দেন-দরবার না করেই ঢাকা ত্যাগ করে।

এরপর ঢাকায় এডিপির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এভিককে আবার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে চলতি বছরের ১১ মার্চ ঢাকায় আসে এভিক। তখন সরকারের অনুমোদিত প্রস্তাব মূল্যায়ন ও আলোচনা ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেয়া হয়। এ লক্ষ্যে চারটি কারিগরি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিটি সাব-কমিটি এভিককে চূড়ান্ত প্রস্তাব যেমন ডিজাইন স্পেসিফিকেশন, বিওকিউ, কস্ট ইস্টিমেট ও টাইম ফ্রেম পেশ করার জন্য জোর অনুরোধ জানায়। এভিক সেভাবেই অঙ্গীকারও করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি গত ২ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল না করে আংশিক প্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে দরকষাকষিও চলে। তখন এভিক উদাহরণ টেনে যুক্তি দেখায়, বাংলাদেশের অন্যান্য জিটুজি প্রকল্পে এভাবেই অসম্পূর্ণ প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করেই কাজ হচ্ছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.